চালক নেই, গার্ড নেই। ট্রেন কিন্তু চলেছে গড়গড়িয়ে। শনিবার রাতে এই কাণ্ড ঘটে মধ্য বিহারের রাজগির স্টেশনে। প্রথম দিকে কেউই খেয়াল করেননি। পরে স্টেশন মাস্টারের নজর পড়তেই শুরু হয়ে যায় চিৎকার চেঁচামেচি। ট্রেনটি ছিল দিল্লি থেকে আসা শ্রমজীবী এক্সপ্রেস। নিয়ম মোতাবেক ট্রেনটি কারশেডে যাওয়ার কথা। দিল্লি থেকে আসার পরে দাঁড়িয়ে ছিল পার্কিং বে-তে। হঠাৎই চলতে শুরু করে।
ঠিক কী ঘটেছিল সে ব্যাপারে রেলের কর্তাব্যক্তিরা কেউই কথা বলতে চাননি। তবে ওই দিন স্টেশনে উপস্থিত থাকা প্রত্যক্ষদর্শী ও নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক রেলেরই কিছু কর্মীর কাছ থেকে যা জানা গেল, তা শিউরে ওঠার মতোই। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ট্রেনটি হঠাৎই চলতে শুরু করে। গার্ড-ড্রাইভার ছাড়াই যে ট্রেনটি লাইন ধরে চলতে শুরু করেছে তা প্রথম ঠাহর করেন স্টেশন মাস্টারই। রেলকর্মী, রেল পুলিশ, সুপারভাইজার, অন্য ট্রেনের চালক ও গার্ড সকলেই এমন কাণ্ডে সাময়িক ভাবে বিমূঢ় হয়ে পড়েন। ট্রেন কিন্তু এগিয়েই চলে। বিহ্বলতা কাটতেই স্টেশন মাস্টার ওই লাইনে যাতে অন্য ট্রেন এসে না পড়ে তার নির্দেশ পাঠাতে থাকেন। আর রেলেরই কিছু লোক দৌড়তে থাকেন লাইন ধরে ওই ট্রেনের পিছু পিছু। প্রায় চার কিলোমিটার দৌড়নোর পর অতি দুঃসাহসী কয়েক জন রেলকর্মী লাফিয়ে ওঠেন ট্রেনটির ইঞ্জিনে। তারপর ব্রেক কষে থামান ট্রেনটিকে। বাঁচোয়া একটাই। ট্রেনটির গতিবেগ বেশি ছিল না।
শনিবার রাত দশটা নাগাদ ওই কাণ্ড ঘটে বলে জানা গিয়েছে। গত কাল এ বিষয়ে তদন্তও হয়। তার বিস্তারিত বিবরণ না মিললেও জানা গিয়েছে, চালকের ‘টেকনিক্যাল’ ভুলের জন্যই এই ঘটনা ঘটে। ব্রেক কাজ করেনি। আর সে কারণেই বে-লাগাম হয়ে চলতে শুরু করেছিল ট্রেনটি। দু’জন চালক ও এক সুপারভাইজারকে সাসপেন্ড করা হয়েছে।
রেলের তরফে ব্যাপারটি ‘তেমন গুরুতর নয়’ এমন ব্যাখ্যা দেওয়ার চেষ্টা চলেছে। ভারপ্রাপ্ত মুখ্য নিরাপত্তা আধিকারিক মহম্মদ ওয়াইজ এ দিন বলেন, “ওই ট্রেনে যাত্রী কেউ ছিলেন না। তা ছাড়া ওটি কারশেডে যাচ্ছিল।” কিন্তু চালক ছাড়াই একটি ট্রেন কী করে অন্ধের মতো চার কিলোমিটার চলে যায় তার কোনও ব্যাখ্যা এই রেলকর্তার কাছ থেকে মেলেনি।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী একজনের মন্তব্য, “রেলে নিরাপত্তা ব্যবস্থার হাল কী, এমন ঘটনায় তা আবার প্রমাণিত হল। আসলে ভগবান ছাড়া যাত্রীদের দেখার কেউই নেই।” |