নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা ও গুয়াহাটি |
নাট-বোল্টের প্যাঁচ কেটে গিয়েই রবিবার অ্যালায়েন্স এয়ারের বিমানের সামনের একটা চাকা খসে পড়েছিল বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছেন ইঞ্জিনিয়ারেরা। বিমানের মূল অংশের (অ্যাক্সেল) সঙ্গে নাট-বোল্ট দিয়ে চাকাগুলো আটকানো থাকে। ইঞ্জিনিয়ারদের প্রাথমিক ধারণা, সামনের বাঁ দিকের চাকাটির অ্যাক্সেল-নাটের প্যাঁচ কোনও ভাবে কেটে যাওয়াতেই বিপত্তি ঘটে।
সেই প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে ইঞ্জিনিয়ারদের দাবি: রবিবার অ্যালায়েন্সের শিলচর-গুয়াহাটি উড়ানটির জনা পঞ্চাশ আরোহী স্রেফ ‘ভাগ্যের জোরে’ প্রাণে বেঁচেছেন। তাঁদের বক্তব্য, রানওয়ে দিয়ে দৌড়নোর সময়ে বা অবতরণের সময় চাকা খুলে গেলে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারত। আগুন ধরে যেতে পারত বিমানে।
এটিআর বিমানটি শিলচর ছেড়ে ওড়ার পরেই চাকা খসে পড়েছিল রানওয়েতে। বিমানের কম্যান্ডার, ক্যাপ্টেন ঊর্মিলার দক্ষতায় অবশ্য তা নিরাপদে গুয়াহাটিতে নামে। যে জন্য ওই মহিলা পাইলটকে এ দিন অভিনন্দন জানিয়েছেন বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ। কিন্তু বিমান ওড়ার আগে তো তার সব যন্ত্রাংশ পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পরীক্ষা করার কথা! তা হলে চাকা খসল কেন?
এয়ার ইন্ডিয়ার সহযোগী সংস্থা অ্যালায়েন্সের বিমানটি রবিবার প্রথম উড়েছিল কলকাতা থেকে। শিলচর-গুয়াহাটি হয়ে তার কলকাতাতেই ফেরার কথা ছিল। সোমবার ডিজিসিএ চাকা-কাণ্ডের তদন্তে নেমে এ-ও দেখছে যে, কলকাতা বিমানবন্দর ছাড়ার আগে নিয়মমাফিক পরিদর্শনে কোনও শিথিলতা ছিল কি না। খসে পড়া চাকা ও অন্য কিছু নমুনা পরীক্ষার জন্য কাঠের বাক্সে ঢুকিয়ে এ দিন কলকাতায় আনা হয়েছে। বিশেষজ্ঞ পাইলটের সাহায্যে গুয়াহাটি থেকে কলকাতায় আনা হয়েছে ‘খোঁড়া’ বিমানটিকেও। পাশাপাশি এই বিপত্তিতে শিলচর রানওয়ের কোনও ভূমিকা রয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও এয়ার ইন্ডিয়া সূত্রের দাবি, রানওয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করে কোনও অস্বাভাবিকতা পাওয়া যায়নি। বিমানটির নির্মাতা, ফরাসি সংস্থা এটিআর-ও দুর্ঘটনার কারণ খতিয়ে দেখছে।
এয়ার ইন্ডিয়া-সূত্রের দাবি, ১৯ বছরের পুরনো বিমানটিতে এ যাবৎ তেমন কোনও যান্ত্রিক ত্রুটি ধরা পড়েনি। কিন্তু অ্যাক্সেল নাটের প্যাঁচ কাটল কেন?
এক ইঞ্জিনিয়ারের ব্যাখ্যা, “অনেক সময় টাইট করতে গিয়ে মাঝপথে নাট আটকে যায়। তখন জবরদস্তি মোচড় দিলে প্যাঁচ কেটে যেতে পারে। সেই অবস্থায় নাট ভিতরে থাকলে ইঞ্জিনিয়ারদের পক্ষেও ধরা মুশকিল।” এবং এই অবস্থাতেই রানওয়ে দিয়ে প্রচণ্ড গতিতে দৌড়েছিল বিমানটি। ইঞ্জিনিয়ারদের কারও কারও ধারণা, ওই সময়কার প্রচণ্ড কম্পনে প্যাঁচ-কাটা বোল্টের গা দিয়ে নাটটি বাইরের দিকে বেরিয়ে আসতে থাকে। টেক-অফের মূহূর্তে তা খুলে পড়ে যায়, খসে যায় চাকাও। ইঞ্জিনিয়ারেরা জানাচ্ছেন, বিমান ওড়ার আগে বাধ্যতামূলক পরীক্ষার তালিকায় ওই ‘নোজ হুইল’ (সামনের চাকা)-এর নাট-বোল্টও রয়েছে। শুধু ইঞ্জিনিয়ারেরা নন, ওড়ার আগে পাইলটেরও চাকা দেখে নেওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বিমানসংস্থার এক কর্তা।
এ দিকে রবিবারের ঘটনার পরে প্রশ্ন উঠেছে, নিয়মিত যাত্রী পরিবহণের পক্ষে ১৯ বছরের পুরনো বিমান কতটা নিরাপদ? বস্তুত কলকাতায় অ্যালায়েন্সের যে চারটে বিমান রয়েছে, তার একটা বহু দিন ধরে খারাপ। বাকি তিনটের কোনও একটা মাঝে-মধ্যে খারাপ হয়ে যায়। সম্প্রতি এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নর্থ-ইস্ট কাউন্সিলও, যাদের থেকে অ্যালায়েন্স ফি বছরে বড় অনুদান পেয়ে আসত। কিন্তু বিমানের যথোচিত রক্ষণাবেক্ষণ না-হওয়ায় কাউন্সিল সম্প্রতি তা বন্ধ করে দিয়েছে। |