বাম আমলের খনি বণ্টনও এ বার সিবিআই নজরে
শ্চিমবঙ্গে বাম আমলের কয়লাখনি বণ্টনও এ বার সিবিআইয়ের আতসকাঁচের নীচে এসে পড়ল।
নিলাম না করে খনি বণ্টন করা নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে অণ্ণা শিবির। মনমোহন সরকারের তরফে অণ্ণাদের অভিযোগ অস্বীকার করে তখনকার খনি বণ্টনের বিষয়টি তদন্তের জন্য সিবিআইকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। বলা হচ্ছে, বামফ্রন্টের আমলে পশ্চিমবঙ্গ সরকারও নিলামের মাধ্যমে কয়লাখনি বণ্টনে আপত্তি তুলেছিল। সেই হিসাবে রাজ্যের খনি বণ্টনও সিবিআই তদন্তের আওতায় চলে আসছে।
সিবিআইয়ের পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও রাজ্য প্রশাসনকে খনি বণ্টনের বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দিয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গিয়েছে, ২০০৬ সালে কয়লাখনি পেয়ে এত দিনেও কয়লা উত্তোলনের কাজ শুরু করেনি বিভিন্ন সংস্থা। এই গোটা বিষয়টি নিয়েই রিপোর্ট তৈরি করতে বলেছেন মমতা।
অণ্ণা শিবিরের অভিযোগ ছিল, ২০০৬ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীই কয়লা মন্ত্রকের দায়িত্বে ছিলেন। তখন বেসরকারি সংস্থাগুলির মধ্যে প্রতিযোগিতা ছাড়াই কয়লাখনি বণ্টন হয়েছে। সিএজি (কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটরস জেনারেল)-র খসড়া রিপোর্টেও বলা হয়েছে, নিলামে খনি বণ্টন করা হলে সরকারের বেশি আয় হত। কিন্তু অণ্ণা-শিবিরের অভিযোগ, বেসরকারি সংস্থাগুলিকে সুবিধা করে দিতেই মনমোহন-সরকার সে পথে হাঁটেনি।
কয়লা মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ২০০৫ সালেই কেন্দ্রীয় সরকার নিলামের মাধ্যমে কয়লাখনি বণ্টনের পথে হাঁটতে চেয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন সরকার এ বিষয়ে আপত্তি তোলে। ছত্তীসগঢ়, রাজস্থানের মতো বিজেপি-শাসিত রাজ্যগুলিও তাতে সুর মেলায়। এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের আপত্তির কথা জানিয়ে তৎকালীন মুখ্যসচিব অশোক গুপ্ত কেন্দ্রের কয়লাসচিব পি সি পারেখকে চিঠিও দিয়েছিলেন। রাজ্যের দাবি ছিল, একটি বাছাই কমিটির সুপারিশের মাধ্যমে কয়লাখনি বণ্টনের পুরনো পদ্ধতিই বজায় থাকুক। কারণ সেখানে কোন সংস্থা কয়লাখনি পাবে বা পাবে না, সে বিষয়ে রাজ্যের মতামতও প্রাধান্য পায়। নিলাম হলে রাজ্যের কোনও মতামতই প্রাধান্য পায় না। কেন এই আপত্তি তুলেছিল রাজ্য? প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী নিরুপম সেনের জবাব, “আমরা তো বেসরকারি সংস্থাকে কয়লাখনি দেওয়ারই বিরোধী ছিলাম। আমাদের দাবি ছিল, পশ্চিমবঙ্গের কয়লাখনিগুলি রাজ্য সরকারের ‘মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন’কে দেওয়া হোক। তার পরে আমাদের রাজ্যে যেখানে যেমন শিল্প গড়ে উঠবে, সেই প্রয়োজন অনুযায়ী আমরা কয়লাখনি বণ্টন করব।”
কয়লাখনি বণ্টন নিয়ে ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত কেন্দ্র ও বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সরকারের মধ্যে টানাপোড়েন চলেছে। একাধিক বার প্রধানমন্ত্রী বা কয়লামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যের জন্য কয়লাখনির দাবি তুলেছে বুদ্ধদেব-নিরুপমরা। নিরুপমের ব্যাখ্যা, পশ্চিমবঙ্গে ইস্পাত শিল্পে বিনিয়োগ এলে তার জন্য কয়লা সরবরাহ সুনিশ্চিত করাটাই ছিল রাজ্য সরকারের একমাত্র উদ্দেশ্য। কিন্তু রাজ্য সরকারি সংস্থাকে ছ’টি কয়লাখনি দেওয়া হলেও ন’টি এখনও দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ নিরুপমের। উল্টো দিকে কয়লা মন্ত্রকের যুক্তি ছিল, রাজ্যের ‘মিনারেল ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড ট্রেডিং কর্পোরেশন’কে যে সব খনি দেওয়া হয়েছে, সেগুলির পুরোমাত্রায় ব্যবহার হচ্ছে না।
রাজ্য সরকারের আমলারা আবার বলছেন, অনেক ক্ষেত্রেই জমি অধিগ্রহণের সমস্যা ও পরিবেশ সংক্রান্ত ছাড়পত্র না মেলায় ঠিক সময়ে কয়লা উত্তোলন শুরু করা যায়নি। কিন্তু কারণ যাই হোক, বাম আমলে কয়লাখনি বণ্টনের গোটা ইতিহাসটাও খতিয়ে দেখতে চাইছেন মমতা। কয়লাখনি সংক্রান্ত জটিলতা কাটানোর জন্য রাজ্য সরকার কেন্দ্রের কাছেও আবেদন জানিয়েছে। রাজ্যের প্রাপ্য ন’টি খনি দেওয়ার জন্যও কেন্দ্রের কাছে আবেদন করা হয়েছে। ২০০৭ -এর পর রাজ্য সরকার নতুন কয়লাখনি পায়নি। অথচ এই খনিগুলি রাজ্যের বিদ্যুৎ ও ইস্পাত শিল্পের জন্য জরুরি। এরই মধ্যে ফ্রেব্রুয়ারিতে নতুন কয়লাখনি বণ্টন ব্যবস্থা চূড়ান্ত হয়েছে। এই ব্যবস্থায় ৫৪টি খনি নিলাম করতে চলেছে কেন্দ্র। সে দিকেই এখন তাকিয়ে রাজ্য সরকার।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.