নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সিপিএমের পার্টি কংগ্রেসের পরে প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক কেরল ও পশ্চিমবঙ্গের ‘বিদ্রোহ’ সামলাতেই কেটে গেল। এক দিকে অনিল বসুকে বহিষ্কার করা হল। এর ফলে স্থানীয় স্তরে কোনও সমস্যা দেখা দিলে, দল তার মোকাবিলা করবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন প্রকাশ কারাট। অন্য দিকে কেরলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ঠেকাতে আজ ভি এস অচ্যুতানন্দন ও রাজ্য নেতাদের প্রকাশ্যে মুখ না খোলার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
কেরলে বিক্ষুব্ধ সিপিএম নেতা টি পি চন্দ্রশেখরণের হত্যার পরই রাজ্য সম্পাদক পিনারাই বিজয়নের সঙ্গে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভি এস অচ্যুতানন্দনের সংঘাত নতুন করে তীব্র হয়ে ওঠে। পিনারাইয়ের অভিযোগ ছিল, ভি এস প্রকাশ্যে যে সব মন্তব্য করেছেন, তাতে দলের ক্ষতি হয়েছে। কারণ চন্দ্রশেখরণকে হত্যার পিছনে সিপিএমেরই হাত আছে বলে অভিযোগ তুলছে কংগ্রেস। সিপিএম যখন একে কংগ্রেসের চক্রান্ত বলে চালাতে চাইছে, তখন গোটা বিষয়ে ভি এস সম্পূর্ণ উল্টো অবস্থান নিয়েছেন। এ দিকে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ভি এস যুক্তি দেন, তিনি দলের ভুলগুলোই চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছেন। চন্দ্রশেখরণের হত্যার পর তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ আখ্যা দেওয়া বিজয়নের উচিত হয়নি। কেরলে দলীয় নেতৃত্ব ক্রমশ ‘ডানপন্থী’ হয়ে পড়ছে বলে অভিযোগ তুলে নেতৃত্বে রদবদলেরও দাবি তুলেছেন ভি এস। |
সাংবাদিক বৈঠকে প্রকাশ কারাট। নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই |
ভি এস-এর জনপ্রিয়তার কথা ভেবেই তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া কারাটের পক্ষে সম্ভব হয়নি। তবে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে, গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে আলোচনা হলেও আবার রাজ্য কমিটিতে আলোচনা হোক। সেখানে পলিটব্যুরোর বেশ কয়েক জন সদস্যও উপস্থিত থাকবেন। তার পরে প্রয়োজন মনে করলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। চন্দ্রশেখরণের হত্যায় দলের কারও ‘হাত’ রয়েছে কি না, তা নিয়েও দলের অভ্যন্তরে তদন্ত চালানো হবে। তবে এর মধ্যে ভি এস ও অন্যদের প্রকাশ্যে মুখ খুলতে নিষেধ করেছেন কারাট। সাধারণ সম্পাদকের ব্যাখ্যা, এটা ‘প্রকাশ্য ভর্ৎসনা’ নয়, কেন্দ্রীয় কমিটির ‘নির্দেশ’।
অনিল বসুর বহিষ্কার নিয়ে দলের মধ্যে বিশেষ মতভেদ না থাকলেও, হুগলি জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এর কোনও প্রভাব পড়বে কি না, তা নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন সিপিএম নেতৃত্ব। অনিল বসু আজ জানিয়েছেন, তাঁকে দলের তরফে যে চিঠি দেওয়া হয়েছে, সেখানে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কথা বলা হয়েছে। অথচ দুর্নীতিতে প্রশ্রয় দেওয়ার অভিযোগে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে দলের তরফে প্রচার চালানো হচ্ছে। এর পিছনে ‘কায়েমি স্বার্থ’ রয়েছে বলে অভিযোগ তুলেছেন অনিল। কারাট অবশ্য আজ জানিয়ে দিয়েছেন, “রাজ্য কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অনিল বসুর বিরুদ্ধে যে সব অভিযোগ উঠেছে,
তার ভিত্তিতে তাঁর দলে কোনও জায়গা থাকতে পারে না। সেই সিদ্ধান্তেই সিলমোহর বসিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এর ফলে কোথাও সমস্যা হলে পার্টি তার মোকাবিলা করবে।” |