প্রায় জনশূন্য রাস্তায় এক মহিলাকে ফেলে চপার দিয়ে অনবরত কোপাচ্ছে এক যুবক। দু’হাত তুলে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করছেন মহিলা। চপারের আঘাতে রক্তে ভেসে যাচ্ছে তাঁর দু’হাত। এক সময়ে রক্তাক্ত ওই মহিলার দেহ নিস্তেজ হয়ে গেলে মোটরসাইকেলে চেপে নির্বিকারে পালিয়ে গেল যুবকটি। সোমবার নিউ টাউনের যাত্রাগাছি মোড়ের কাছে এই ঘটনা ঘটার পরে স্বভাবতই প্রশ্ন উঠেছে এলাকায় পুলিশি নজরদারির বহর নিয়ে। সেই সঙ্গে ফের উঠে এসেছে ওই উপনগরীতে মহিলাদের নিরাপত্তার প্রশ্নটি।
পুলিশ জানায়, আশঙ্কাজনক অবস্থায় অর্চনা হালদার নামে ওই মহিলা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। খোঁজ চলছে বাপ্পা দত্ত নামে অভিযুক্ত যুবকের।
পুলিশ জানায়, ৩৪ বছরের অর্চনার বাড়ি নিউ টাউন থানা এলাকার জগৎপুর বাজারের কাছে বিদ্যানগরে। তাঁর স্বামী রাজমিস্ত্রি। বাপ্পা কেষ্টপুরের বাসিন্দা। ওই এলাকারই একটি সোনার দোকানে কাজ করে সে। প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে পুলিশ জেনেছে, এ দিন বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ অর্চনাকে মোটরবাইকের পিছনে চাপিয়ে যাত্রাগাছির কাছে ‘ইকো ট্যুরিজম পার্ক’-এর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল বাপ্পা। আচমকাই বাইক থামায় সে। কথা-কাটাকাটি শুরু হয় অর্চনা-বাপ্পার মধ্যে। তার পরে চপার দিয়ে অর্চনাকে কোপাতে থাকে বাপ্পা। পড়ে যান হতচকিত অর্চনা। প্রতিবাদ করলে অর্চনার দু’হাতের গাঁটে-গাঁটে চপারের আঘাত করতে থাকে সে। অর্চনার আর্ত চিৎকারে এ দিক-ও দিক থেকে লোকজনকে ছুটে আসতে দেখে ‘হুঁশ’ ফেরে বাপ্পার। স্থানীয় লোকজন তাকে ধরে ফেলার আগেই তড়িঘড়ি মোটরবাইকে উঠে চম্পট দেয় সে।
বাবু হালদার নামে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “দেখলাম রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন ওই মহিলা। এক যুবক মোটরবাইকে উঠে বিমানবন্দরের দিকে পালিয়ে গেল।” কাছেই ছিলেন টহলদার পুলিশকর্মীরা। পুলিশ ও স্থানীয় লোকজনই অর্চনাকে বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছে। অর্চনার দেহের একাধিক জায়গায় গুরুতর ক্ষত রয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা।
পুলিশের দাবি, হাসপাতালে অর্চনা জানিয়েছেন, চার বছর ধরে তাঁর সঙ্গে বাপ্পার সম্পর্ক। ইদানীং তাঁকে বিয়ে করার জন্য চাপ দিচ্ছিল বাপ্পা। কিন্তু তাঁর পক্ষে তা সম্ভব নয় বলে বাপ্পাকে সাফ জানিয়েও দিয়েছিলেন অর্চনা। এ দিন কথা বলার জন্যই তাঁকে নিয়ে বেরিয়েছিল বাপ্পা। মাঝপথে এই ঘটনা ঘটে।
কিন্তু দিনেদুপুরে পুলিশের চোখ এড়িয়ে কী ভাবে ঘটে গেল এমন ঘটনা? বিধাননগর কমিশনারেটের ডিসি (সদর) সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবশ্য দাবি, “স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশকে কাছে পেয়েছেন বলেই ওই মহিলাকে ঠিক সময়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়েছে।” |