মেট্রোকর্মীদের ‘নজর’ এড়িয়ে উধাও কোটি টাকার স্মার্ট-টোকেন! সংখ্যায় যার পরিমাণ প্রায় সওয়া ছয় লক্ষ।
সংখ্যাটা জানতে পেরে চোখ কপালে উঠেছে মেট্রোকর্তাদের। কারণ, নতুন স্মার্টগেট চালু হওয়ার পরে কাগজের টিকিট বাতিল করে সাত লক্ষ টোকেন আনা হয়েছিল। এখন পড়ে রয়েছে মাত্র ৭০ হাজার। এই ‘যৎসামান্য’ টোকেন দিয়ে অফিসের ব্যস্ত সময়ে কুলোতে পারছেন না মেট্রো-কর্তৃপক্ষ। পরিস্থিতি সামলাতে কয়েক দিন ধরে লোকাল ট্রেনের মতো কাগজের টিকিট বিক্রি করতে হচ্ছে। ওই টিকিট নিয়ে স্মার্টগেটের পাশের গেট দিয়ে যাতায়াত করছেন যাত্রীদের একাংশ। মেট্রো কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, নতুন করে লাখ দু’য়েক টোকেনের বরাত দেওয়া হয়েছে। আগের টোকেন ছিল কালো রঙের ক্যারাম ঘুঁটির মতো। নতুন আনা টোকেনগুলি ছাই রঙের।
সোমবারই নতুন চেহারার হাজার দশেক টোকেন পৌঁছেছে কলকাতায়। রবীন্দ্র সেতুর প্রতিকৃতি খোদাই করা ধূসর রঙের টোকেনগুলির কয়েকটি এ দিনই কাউন্টারে পাঠানো হয়। পাশাপাশি, যাত্রীদের একাংশের কাছে পড়ে থাকা টোকেন ফেরত পেতে এ বার স্টেশনগুলিতে ‘ড্রপ-বক্স’ রাখতে চলেছেন মেট্রো কর্তৃপক্ষ। |
স্মার্ট-টোকেন হারানোর ‘পরম্পরা’ শুরু বছরখানেক আগেই। মেট্রো সূত্রে খবর, গত বছরের জুলাই থেকে কাগজের তৈরি ‘ম্যাগনেটিক’ টিকিটের বদলে টোকেনের ব্যবহার শুরু হয়। এ ব্যবস্থায় (আরআইএফডি) সাত লক্ষ টোকেন এবং চার লক্ষ স্মার্ট-কার্ড মজুত করা হয়েছিল। যাত্রীদের সুবিধার কথা ভেবে মাসখানেক নতুন গেটগুলির সঙ্গে খুলে রাখা হয় ম্যাগনেটিক-গেটগুলিও। এক মেট্রোকর্তার কথায়, “এতে সঙ্কটে পড়তে হল আমাদেরই। সেই সময়ে অনেকেই টোকেন কিনে স্টেশন থেকে বেরিয়েছেন পুরনো গেট দিয়ে। তাঁদের কাছেই রয়েছে প্রায় দু’লক্ষ টোকেন।”
এতেই শেষ নয়। কখনো যান্ত্রিক বিভ্রাট বা আত্মহত্যার জেরে পরিষেবা ব্যাহত হলে যন্ত্র-পরীক্ষকের পাশে থাকা লোহার গেটগুলি খুলে দেওয়া হয়। নিরাপত্তাকর্মীর হাতে টোকেন জমা না-দিয়েই তা নিয়ে বাড়ি চলে যান অনেকে। এক বছরে সে ভাবেও ‘হারিয়েছে’ প্রায় সাড়ে চার লক্ষ টোকেন।
চলতি বছর মে মাসের মাঝামাঝি হিসেব কষতে বসে মেট্রোকর্তারা দেখেন, সাত লক্ষের মধ্যে তাঁদের কাছে পড়ে রয়েছে সাকুল্যে ৭০ হাজার টোকেন! মেট্রো সূত্রের খবর, প্রতিদিন ব্যস্ত সময়ে ২৩টি স্টেশনের কাউন্টারে সব মিলিয়ে কমপক্ষে এক লক্ষ টোকেন থাকা জরুরি। তা না-থাকায় কাগজে ছাপা টিকিট বিলি করে আপাতত ব্যস্ত সময়ের ভিড় সামলানো হচ্ছে। কিছু দিন আগে টেন্ডার ডেকে ২ লক্ষ ১০ হাজার টোকেনের বরাত দেওয়া হয়। সোমবার তার মধ্যেই ১০ হাজার পৌঁছেছে। বিভিন্ন কাউন্টারে এ দিনই ছড়িয়ে গিয়েছে তিন হাজার নতুন টোকেন। আগামী দিনে আরও তিন লক্ষ টোকেন কিনবে মেট্রো। টোকেন ‘হারানোয়’ আর্থিক ক্ষতিও হয়েছে মেট্রোর। মেট্রোর মুখপাত্র প্রত্যুষ ঘোষ জানান, পুরনো স্মার্ট-টোকেনগুলির প্রতিটির দাম ১৬ টাকা। নতুন টেন্ডারে তা মিলেছে ১৪ টাকায়। পুরনো প্রায় ৬ লক্ষ ৩০ হাজার টোকেন হারিয়ে যাওয়ায় ১ কোটি ৮০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে মেট্রোর। প্রত্যুষবাবুর বক্তব্য, “ওই টোকেনগুলি সরকারি সম্পত্তি। প্লাস্টিকে তৈরি জিনিসগুলি অন্য কাজে ব্যবহার বা বিক্রি করা যাবে না। কারও কাছে ভুলবশত টোকেন পড়ে থাকলে ফেরত দিলে সমস্যা কমবে যাত্রীদেরই।” ভবিষ্যতে কঠোর আইনি পথে এ সমস্যা মোকাবিলার কথা ভাবছেন মেট্রো রেল কর্তৃপক্ষ। |