|
|
|
|
রাজ্যের দুই দফতরের কাজিয়ার জের |
এখনও অনিশ্চিত ইন্ডিয়া ডিজাইন সেন্টার |
গার্গী গুহঠাকুরতা • কলকাতা |
সেই ২০০৭ সালে চূড়ান্ত হয়েছে পরিকল্পনা। বরাদ্দ হয়েছে জমি। প্রকল্প নির্মাণের জন্য সংস্থা বাছাইয়ের কাজও বহু দিন সারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাজ্য সরকারেরই দুই দফতরের বিরোধে এখনও বিশ বাঁও জলে ইন্ডিয়া ডিজাইন সেন্টার। দেশের প্রথম চিপ ডিজাইন সেন্টার গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে যে প্রকল্পের সূত্রপাত, তার রূপায়ণেও শেষ পর্যন্ত বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে লাল ফিতের ফাঁস। তাই পাঁচ বছর পেরিয়েও তথ্যপ্রযুক্তি এবং পুর ও নগরোন্নয়ন দফতরের কাজিয়ায় পরিকল্পনার স্তরেই আটকে রয়েছে ১২০ কোটি টাকার এই ‘শো-কেস’ প্রকল্প। ঠিক যে ভাবে এই দুই দফতরেরই টানাপোড়েনে থমকে রয়েছে নোনাডাঙার তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক গড়ার কাজ।
নোনাডাঙার প্রকল্পের মতো এই চিপ ডিজাইন সেন্টার গড়ার ক্ষেত্রেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জমি হস্তান্তর বাবদ ট্রান্সফার-ফি নিয়ে দুই দফতরের মতান্তর। অবশ্য সম্প্রতি প্রকল্পকে হিমঘর থেকে বার করে আনতে উদ্যোগী হয়েছে তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। এমনকী সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, এখন নিজেরাই এই পরিকাঠামো তৈরির কথা ভাবছে তারা। সে ক্ষেত্রে প্রকল্প গড়বে ওয়েবেল। যে কারণে প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি হাতে রাখতে চায় তথ্যপ্রযুক্তি দফতর।
কিন্তু প্রকল্পের ট্রান্সফার-ফি নিয়ে জট কোথায়?
গোড়া থেকেই ইন্ডিয়া ডিজাইন সেন্টারের পরিকাঠামো তৈরি হওয়ার কথা সল্টলেক সেক্টর ফাইভে। প্রায় দু একর জমির উপর। ওই জমি তথ্যপ্রযুক্তি দফতরকে লিজ দেয় পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। পরে যা আবার সংশ্লিষ্ট বেসরকারি সংস্থাকে সাব-লিজে দেওয়ার কথা। জমি হস্তান্তরের জন্য ট্রান্সফার-ফি নিয়ে দুই দফতরের মধ্যে আলোচনাও হয়েছিল একেবারে গোড়াতেই। সেই অনুযায়ী প্রকল্প নির্মাণের বরাত পাওয়া বেসরকারি সংস্থার আর্জি মেনে এককালীন ট্রান্সফার-ফি নিতেও রাজি হয় তথ্যপ্রযুক্তি দফতর। দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয় কাজ শুরু করার। কিন্তু এর পর সাব-লিজ ডিড তৈরির সময়েই বেঁকে বসে পুর ও নগরোন্নয়ন দফতর। তাদের দাবি, তৈরি পরিকাঠামোর জায়গা লগ্নিকারী সংস্থাগুলিকে দেওয়ার সময় প্রতি বারই ট্রান্সফার-ফি দিতে হবে নির্মাণ সংস্থাকে। কিন্তু এই শর্ত মানতে নারাজ নির্মাণের বরাত পাওয়া বেঙ্গল ইনফিনিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, সংস্থা মনে করে তেমন হলে তাদের পক্ষে লাভের মুখ দেখার সম্ভাবনা কম। যে কারণে প্রকল্প তৈরির বিষয়ে কিছুটা এগিয়েও হাত গুটিয়ে নিয়েছে তারা।
তবে প্রকল্পে বিলম্ব হওয়ার একমাত্র কারণ যে শুধু দুই দফতরের কাজিয়া, এমনটা নয়। বরং এ বিষয়ে দীর্ঘ তালিকায় তা সর্বশেষ সংযোজন। এই প্রকল্পের জন্য ২০০৭ সালে প্রথম পরিকল্পনা করেও দরপত্র চাইতে বছর খানেক কাটিয়ে দেয় পূর্বতন বাম সরকার। তার পর মন্দার কারণে উৎসাহে ভাটা পড়ে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলির। দ্বিতীয় বার দরপত্র চাওয়ার সময় প্রকল্প গড়ার বরাত পায় বেঙ্গল ইনফিনিটি। কিন্তু তার পর বছর দু’য়েক কেটে গেলেও কাজ বিশেষ এগোয়নি।
তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পে লগ্নি টানার দৌড় দেরিতে শুরু করেছিল রাজ্য। সেই খামতি পুষিয়ে দিতেই ডিজাইনিংয়ের ক্ষেত্রে আলাদা জায়গা তৈরি করতে চেয়েছিল তারা। চিপ ডিজাইনিং ও সংশ্লিষ্ট শিল্পে লগ্নি টানতে মাঠে নেমেছিলেন তৎকালীন তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী দেবেশ দাস। রাজ্য বিলক্ষণ জানত, বিশ্বের প্রথম ২৫টি চিপ সংস্থার মধ্যে ১৮টিই ভারতে পা রাখলেও, তাদের লগ্নি মানচিত্রে নেই পশ্চিমবঙ্গ। সেই কারণেই শুধু এই ধরনের সংস্থার জন্য ইন্ডিয়া ডিজাইন সেন্টার তৈরির সিদ্ধান্ত। কথা ছিল, ১২০ কোটি টাকার এই প্রকল্পে ২৪ তলা বাড়িতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও গবেষণাগারের সুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি চিপ তৈরির সফটওয়্যার টুল ভাড়া নিতে পারবে সংস্থাগুলি। ফলে কমবে উৎপাদনের খরচ। এই কথা তুলে ধরে ক্যাডেন্স, কোয়ালকম, টেক্সাস ইন্সট্রুমেন্টস্, ইনটেলের মতো নামী সংস্থার কাছে দেওয়া হয়েছিল লগ্নির প্রাথমিক প্রস্তাবও। কিন্তু এই সব কিছুর পরেও প্রশাসনিক ঢিলেমি আর দুই সরকারি দফতরের কাজিয়াতে এখনও আটকে ইন্ডিয়া ডিজাইন সেন্টার। |
|
|
|
|
|