নিজস্ব সংবাদদাতা • সদয়পুর |
পুলিশের হাতে ধরা পড়ার ভয়ে পালাতে গিয়ে গ্রামবাসীদের হাতে মার খেলেন শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযুক্ত এক তৃণমূল সমর্থক। গুরুতর জখম যুদ্ধপতি ঘোষ নামে ওই অভিযুক্তকে সিউড়ি সদর হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। ন্যদিকে, পুলিশের সামনেই কেন যুদ্ধপতিবাবুকে এ ভাবে মারা হল এই নিয়ে পুলিশের সঙ্গে একপ্রস্থ ধ্বস্তাধ্বস্তি হয় ওই অভিযুক্তের পরিবারের লোকজন ও কিছু তৃণমূল কর্মীসমর্থকের। পরে রবিবার রাত ১০টায় পুলিশ ফের ওই গ্রামে হানা দিয়ে ধ্বস্তাধ্বস্তির ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগে এক দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রকে গ্রেফতারও করে। ঘটনাটি সদয়পুর থানা এলাকার রাজগঞ্জ গ্রামের।
যদিও অভিযুক্তের পরিবারের দাবি, সিপিএম সমর্থকেরাই বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে যুদ্ধপতিবাবুকে বেধড়ক মারধর করেছে। সিপিএম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। জেলা পুলিশ সুপার হৃষিকেশ মিনা বলেন, “ওই গ্রামে আইন শৃঙ্খলার অবনতি হওয়ায় পুলিশ ওখানে গিয়েছিল। ঘটনার তদন্ত চলছে।”
প্রসঙ্গত, গ্রামেরই একটি পুকুরে মাছ চাষ করেন অভিযুক্ত যুদ্ধপতিবাবু। দিন দশেক আগে সকাল ৭টা নাগাদ এক মহিলা ওই পুকুরে স্নান করতে গেলে যুদ্ধপতিবাবু ওই মহিলার শ্লীলতাহানি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। অভিযোগকারিণীর দাবি, “নির্জন পুকুরে সুযোগ বুঝে যুদ্ধপতি আমার শ্লীলতাহানি করার চেষ্টা করে। আমি চিৎকার করে উঠলে আশপাশ থেকে লোকজন এসে পড়ে। কিন্তু তখন তিনি নিজের দোষ ঢাকতে উল্টে আমার বিরুদ্ধেই পুকুরে মাছ চুরি করার অভিযোগ তোলেন।” তাঁর আরও দাবি, অত্যন্ত অপমানিত হয়ে তিনি আত্মঘাতি হওয়ারও চেষ্টা করেন। তাঁর পরিবার ও পাড়াপ্রতিবেশিরা এসে ওই মহিলাকে বাঁচান বলে জানা গিয়েছে। ওই মহিলাকে তাঁরা থানায় যাওয়ার পরামর্শ দেন। যুদ্ধপতিবাবু এলাকায় তৃণমূল করেন তাই তিনি স্থানীয় তৃণমূল নেতা স্বপন মণ্ডলের সঙ্গেও যোগাযোগ করেন বলে জানিয়েছেন। স্বপনবাবুও তাঁকে থানায় গিয়ে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দেন। কিন্তু অভিযোগকারিণীর দাবি, “লিখিত অভিযোগ করলেও পুলিশ যুদ্ধপতির বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। এরই মাঝে যুদ্ধপতি আমাকে ঘরে, রাস্তাঘাটে প্রকাশ্যে অভিযোগ তুলে নেওয়ার জন্য হুমকি দিতে থাকে।” সেই সঙ্গে তাঁর অভিযোগ, “তৃণমূল করেন বলে স্বপনবাবু যুদ্ধপতিকে আড়াল করার চেষ্টা করছিলেন।” মহিলা জানান, এরপরই তিনি বাধ্য হয়ে দ্বারস্থ হন সিপিএমের। যদিও যুদ্ধপতিবাবুর মেয়ে শিউলি ঘোষের দাবি, “ওই মহিলা বাবার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ মিথ্যা অভিযোগ এনেছেন।” তাঁর অভিযোগ, “বাবা ডানপন্থী রাজনীতি করেন। তাই সিপিএমের লোকজনই তাঁকে এ ভাবে মারধর করেছে।” তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে স্বপনবাবু বলেন, “আমিই তো ওই মহিলাকে পুলিশের কাছে অভিযোগ জানানোর পরামর্শ দিই।” অন্য দিকে, সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অরুণ মিত্র বলেন, “জনরোষেই এমনটা হয়েছে। আমাদের কেউ মারধরে জড়িত নয়।”
এ দিকে, পুলিশ আবারও অভিযান চালাতে পারে এই আশঙ্কায় ওই গ্রামের অধিকাংশ পুরুষই এখন ঘরছাড়া। |