পরিবহণ কর্মী বা যাত্রী, সবার জন্যই বাসস্ট্যান্ডে রয়েছে একটি মাত্র শৌচাগার। অপেক্ষা করার জন্য নেই মাথার উপর কোনও ছাউনি। প্রতীক্ষালয় তো দূরের কথা। এই গরমে মাথার উপর গনগনে রোদ নিয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে হয় যাত্রীদের। জামুড়িয়া বা রানিগঞ্জ, দুই শহরেই দেখতে পাওয়া যাবে যাত্রী পরিষেবার এই চিত্র। তবে, জামুড়িয়া ও রানিগঞ্জের দুই পুরপ্রধান ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও অনুপ মিত্র আশ্বাস দিয়েছেন, “সামগ্রিক উন্নয়নের পরিকল্পনা হয়েছে। দ্রুত তা কার্যকর হবে।” |
আসানসোল মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা যায়, জামুড়িয়ার সঙ্গে রানিগঞ্জ, বার্নপুর, দোমহানি, চুরুলিয়া, দরবারডাঙা, হরিপুর থেকে প্রায় ৮০টি মিনিবাস যোগাযোগ রেখে চলে। অন্য দিকে, রানিগঞ্জের ভিতরে চলে প্রায় ২৫০টি বাস। তার মধ্যে বাঁকুড়া জেলা থেকে শহরে যাতায়াত করে ৩০টি বড় বাস ও ৫০টি মিনিবাস।
মিনিবাস অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সুদীপ রায় জানান, ১৯৯৫ সালে জামুড়িয়া পুরসভা গঠনের পর প্রথম চেয়ারম্যান বিপ্লব চক্রবর্তীর কাছে জামুড়িয়া বাজারের মাঝ থেকে জামুড়িয়া বাসস্ট্যান্ডটি থানা মোড়ে সরিয়ে আনার প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁরা। এ ছাড়া বাসস্ট্যান্ড নির্মাণের আবেদন জানানো হয়েছিল। অ্যাসোসিয়েশনের যাত্রী প্রতীক্ষালয়, কর্মীদের বিশ্রামের জন্য আলাদা ঘর, পানীয় জল, শৌচাগার আর পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থার জন্য পুরসভাকে লিখিত পর্যায়ে অনুরোধ করাও হয়েছিল। তাঁর ক্ষোভ, “এর পর পুরপ্রধান তাপস কবির উদ্যোগে বাসস্ট্যান্ডটি কংক্রিটের করা হয়। কাছাকাছি একটি হোটেল (পানশালা), একটি শৌচাগার ও একটি ছোট বাজারও তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু যাত্রী পরিষেবার বিষয়টিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।” জামুড়িয়া বাজারের বাসিন্দা রাজেশ শর্মা, বলবিন্দর সিংহেরা জানান, গরমে বা বর্ষায় বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময়ে একটু ছায়াও পাওয়া যায় না। নাজেহাল হতে হয় যাত্রীদের। তাঁদের কথায়, “কাছাকাছি কোনও দোকানের সামনে হয়তো কিছুক্ষণ দাঁড়ানো যায়। কিন্তু বেশিক্ষণ দোকানের সামনে থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন দোকানীরা। বাধ্য হয়ে রোদ বৃষ্টি মাথায় নিয়েই অপেক্ষা করতে হয় বাসের জন্য।”
বালানপুরের বাসিন্দা অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী রূপালি সিংহের কথায়, “দোমহানিতে মামার বাড়ি। সেখানে যেতে হলে বেশ কয়েকবার বাস বদলাতে হয়। কিন্তু অপেক্ষা করার জন্য কোনও জায়গা না থাকার জন্য রোদ-বৃষ্টি মাথায় নিয়েই ১ কিলোমিটার হেঁটে গিয়ে ট্রেকার ধরতে হয়।” |
অ্যাসোসিয়েশনের আরও অভিযোগ, এর পর পুরসভা ‘অবৈজ্ঞানিক ভাবে’ শহরের বাইরে একটি বাসস্ট্যান্ড তৈরি করে। তাঁদের দাবি, তার ফলে যাত্রী না পাওয়ার আশঙ্কায় পরিবহণকর্মীরা তাঁদের রাস্তা বদলে শহরের বাইরের বাসস্ট্যান্ড দিয়ে যেতে রাজি হননি। ফলে বহু টাকা খরচ করে বানানো বাসস্ট্যান্ডটি অব্যবহৃতই থেকে যায়।
রানিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডগুলিরও অবস্থা তথৈবচ। সম্প্রতি অবশ্য পুরসভার পক্ষ থেকে প্রধান বাসস্ট্যান্ডটির অর্ধেক পাকা করা হয়েছে। আসানসোল মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের রানিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড উন্নয়ন কমিটির তরফে ওই বাসস্ট্যান্ডে তৈরি করা হয়েছে একটি শৌচালয়ও। কিন্তু উন্নয়ন কমিটি জানায়, আপাতত সেখানেও মিলছে না পর্যাপ্ত জল। ফলে বিড়ম্বনার শেষ নেই যাত্রীদের।
|