চোখের সামনে গঙ্গায় জমিজমা, বসতভিটে সবই তলিয়ে যেতে দেখেছেন। তখন তিনি সপ্তম শ্রেণিতে পড়তেন। গঙ্গায় ভিটেমাটি হারিয়ে যাওয়ার পরে টানা তিন মাস আমবাগানে ত্রিপলের নিচে বাবা-মা ও ছোট ভাইয়ের সঙ্গে দিন কাটিয়েছেন। তাতে ভেঙে পড়েননি মানিকচকের ডোমহাটের শুভাশিস মন্ডল। বাবা-মায়ের হাত ধরে মালদহ শহরে আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে কোনও রকমে মাথা গুঁজে থেকেই উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৬১ নম্বর পেয়ে জেলায় দ্বিতীয় হয়েছেন শুভাশিস। কেবল উচ্চ মাধ্যমিকে জেলায় দ্বিতীয় হওয়াই নয়, জয়েন্ট এন্ট্রান্সেও মেডিক্যাল বিভাগে তফসিলি কোটায় ১১৩ স্থান পেয়েছেন তিনি। ভাল ফল হওয়ার পরে অবশ্য পরিবারে খুশি নয়, দুশ্চিন্তাই ছায়া ফেলেছে। দুশ্চিন্তা ডাক্তারির পড়ার খরচ কোথা থেকে আসবে? কে পাশে দাঁড়াবে? শুভাশিসের আক্ষেপ, এক সময়ে তাঁর বাবার ২০-২৫ বিঘা জমি ছিল। গঙ্গা সেই জমি গিলে খেয়েছে। বসতবাড়িও গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে। এখন সম্বল মাত্র মাত্র দেড় বিঘা জমি। সেই জমির ফসল বিক্রি করে কোনও রকমে সংসার চলছে। তিনি বলেন, “স্কুলের শিক্ষকরা এগিয়ে না আসলে উচ্চ মাধ্যমিকে এই ফল করতে পারতাম না। মেডিক্যালেও চান্স পেতাম না। বাবার যা আয় তা দিয়ে ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা ও মেডিক্যালে পড়ার খরচ চালাতে পারবে না। কী করব ভেবে পাচ্ছি না।” ছেলেকে ডাক্তারি পড়াতে পাঠাবেন কী করে দুশ্চিন্তায় খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দিয়েছেন শুভাশিসের বাবা স্বপনবাবুও। তাঁর কথায়, “গঙ্গা যদি জমিজমা গিলে না-খেত তবে ছেলেকে ডাক্তারি পড়ানোর জন্য ভাবতে হত না। এখন পাড়াপড়শি আত্মীয়স্বজনদের কাছে হাত পেতেছি। চেয়েচিন্তে তো ভর্তি করে দেব। পড়ার খরচ কী ভাবে জোগাব ভেবে পাচ্ছি না।” শুভাশিস যে স্কুলের ছাত্র অক্রুরমনি করোনেশন ইন্সটিটিউশন-এর প্রধান শিক্ষক চঞ্চল ঝা বলেন, “শুভাশিস পরিশ্রমী ছেলে। স্কুলের শিক্ষকরা নানা ভাবে সাহায্য করেছেন।” শুভাশিস মন্ডলের ইচ্ছা, ডাক্তারি পড়া শেষ করে তিনি দুর্গত এলাকার বাসিন্দাদের বিনা পয়সায় চিকিৎসা করবেন। |