রুটিন করে পড়াশোনা করতেন না তিনি। তবে সকালে আড়াই ঘণ্টা ও সন্ধ্যায় আরও ৪-৫ ঘণ্টা করে পড়াশোনা করতেন রায়গঞ্জ করোনেশন হাই স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিকের কৃতী ছাত্র পল্লব সিংহ। তার বাইরে প্রতিদিন স্কুলে যাওয়া এবং বিকালে ৭ জন গৃহশিক্ষকের কাছে টিউশন নেওয়া রয়েছে। এ বার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় তিনি ৪৬৭ পেয়েছেন। মেধা তালিকায় তাঁর স্থান দশম। সোমবার উচ্চমাধ্যমিকের ফল প্রকাশ হওয়ার পরে পল্লবকে ঘিরে তাই করোনেশন স্কুলে খুশির হাওয়া ছড়িয়ে পড়ে। খুশি ছড়িয়ে পড়ে সিংহ পরিবারের সদস্যদের মধ্যেও। এদিন ফল প্রকাশের পরেই স্কুলের তরফে পল্লবকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। পল্লবকে শুভেচ্ছা জানান স্কুলের পরিচালন সমিতির সম্পাদক তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শুভেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, “পল্লব ভাল ফল করবে তা আমরা জানতাম। স্কুলের শিক্ষকরা সারা বছরই পড়ুয়াদের অতিরিক্ত যত্ন নিয়ে ক্লাস করান। তাঁদের পরিশ্রম ও পল্লবের নিষ্ঠা এবং একাগ্রতাই পল্লবকে ভাল ফল করতে সাহায্য করেছে।” পল্লব শুধু এ বছরের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষাতেই নয়, ২০১০ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষায় ৭৩১ নম্বর পেয়ে জেলার মধ্যে প্রথম ও রাজ্যে সম্ভাব্য ২০ তম স্থান দখল করেছিলেন। শুধু তাই নয়, সম্প্রতি প্রকাশিত জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় মেডিক্যালে রাজ্যে সাধারণদের মধ্যে ২১ তম ও তফশিলদের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেছেন ওই কৃতী ছাত্র। পল্লবের বাবা মধুসূদনবাবু দুই ছেলের পড়াশুনার দেখভালের জন্য সম্প্রতি চোপড়ার রামগঞ্জ হাই স্কুলের শিক্ষক পদ থেকে স্বেচ্ছাবসর নেন। মা কৃষ্ণা দেবী উত্তর দিনাজপুর জেলা পরিষদের কর্মী। ভাই অর্ণব করোনেশন স্কুলেই দশম শ্রেণিতে পড়াশুনা করে। তাঁদের আদি বাড়ি চোপড়া হাট এলাকাতে হলেও কৃষ্ণা দেবী জেলা পরিষদের কর্মী হওয়ায় তাঁরা সকলে রায়গঞ্জ স্টেশন সংলগ্ন জেলা পরিষদের সরকারি আবাসনে থাকেন। পল্লব জানিয়েছেন, টিভিতে ক্রিকেট খেলা দেখে ও আবাসন চত্বরে বন্ধুদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে সময় কাটাতেন। তিনি বলেন, “৭ শিক্ষকের কাছে টিউশন নিয়েছি। স্কুলের শিক্ষকরা প্রয়োজনে অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে পড়া বুঝিয়ে দিতেন। বাবা ও মা সবসময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন। সবার পরিশ্রম ছাড়া এত ভাল ফল করতে পারতাম না।” পল্লব জানান, কলকাতা বা দিল্লির মেডিক্যাল কলেজে পড়াশুনা করে তিনি আদর্শ চিকিৎসক হতে চান। তাঁর কথায়, “বহু মানুষ অভাবে চিকিৎসা করাতে পারেন না। চিকিৎসক হয়ে বিনে পয়সায় তাঁদের চিকিৎসা করতে চাই।” |