এমনিতে ওয়ার্ডের সর্বত্র রোগীর আত্মীয়দের অবাধ বিচরণ। কিন্তু ডাক্তারদের চাওয়া জরুরি ওষুধ নিয়ে হাসপাতালে ঢুকতে গেলে বাধা হয়ে দাঁড়ালেন রক্ষী। সময়ে ওষুধ না পেয়ে মারা গেলেন রোগী। অন্তত মৃতের পরিবারের অভিযোগ তেমনই।
এ দিন আর পাঁচটা দিনের মতো ছিল না। মেডিক্যাল কাউন্সিলের পরিদর্শনের ধাক্কায় বুধবার সকাল থেকেই নিয়মের কড়াকড়ি চলছিল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। বিষক্রিয়ায় অসুস্থ হয়ে সকালেই রাধারানি ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছিলেন রায়নার দেবীবরপুরের রণজিৎ পোড়েল। তাঁর জন্যই আত্মীয়েরা জরুরি ওষুধ আনতে যান। কিন্তু ঢোকার সময়ে বাধা পান বলে অভিযোগ।
নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে রোগীর তিন পরিজনের বচসা বেধে যায়। নিরাপত্তারক্ষীর সঙ্গে হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। কিন্তু তার পরেও তাঁরা ঢুকতে পারেননি। বরং রক্ষীর সঙ্গে গণ্ডগোলের জেরে হাসপাতাল চত্বরেই পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে তাঁদের আটকে রাখা হয়। পরে তাঁরা শোনেন, রণজিৎবাবুর মৃত্যু হয়েছে। মৃতের আত্মীয় সন্দীপকুমার মালিক হাসপাতাল সুপার অসিতকুমার সামন্তের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষী মারধরের অভিযোগ দায়ের করায় পুলিশ দু’জনকে গ্রেফতার করেছে।
প্রশ্ন হল, হাসপাতালে জরুরি ওষুধ নিয়ে ঢোকার নিয়ম কী? ডেপুটি সুপার তাপস ঘোষ জানান, ওয়ার্ড থেকে যদি ওষুধ আনতে দেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে এক জন তা নিয়ে ভিতরে যেতে পারেন। নিরাপত্তারক্ষীর আপত্তি জানানোর কথা নয়। তবে এ ক্ষেত্রে কী ঘটেছে তা এখনও তাঁদের জানা নেই।
ডেপুটি সুপার বলেন, “যে রক্ষী মার খেয়েছেন তাকে আপাতত কাজ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আজ, বৃহস্পতিবার ওই ওয়ার্ডে ঘটনার সময়ে হাজির থাকা চিকিৎসক, নার্স ও নিরাপত্তারক্ষীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। দোষ প্রমাণিত হলে ওই রক্ষীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মঙ্গলবার গভীর রাতে আবার ওই হাসপাতালেই এক হৃদরোগীকে সাপে কাটার চিকিৎসা করার অভিযোগ ওঠে। মদন শিকদার নামে ওই রোগীর মৃত্যুর পরে তাঁর ছেলে মনোরঞ্জন শিকদার সুপারের কাছে এই মর্মে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছেন।
দাঁইহাটের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মনোরঞ্জনবাবুর অভিযোগ করেন, রবিবার সকালে তিনি বাবাকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভতির্র্ করিয়েছিলেন। কিন্তু ভেন্টিলেশনে রাখার প্রয়োজন হওয়ায় সোমবার রাতে তাঁকে রাধারানি ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়। কিন্তু সেখানে সর্পাঘাতের চিকিৎসা হওয়ায় মিনিট পাঁচেক পরেই তাঁর মৃত্যু ঘটে।
হাসপাতাল সুপার অসিতবরণ সামন্ত বলেন, “মৃতদেহের ময়না-তদন্ত হয়েছে। বিভাগীয় প্রধানের কাছে মৃত্যুর কারণ লিখিত ভাবে জানতে চাওয়া হয়েছে। রিপোর্টগুলি হাতে পেলেই মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে।” |