একটা সাধারণ রক্ত পরীক্ষা। সেটাই এ বার বলে দিতে পারবে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত কোনও রোগিণীর শরীরের কত গভীরে বাসা বেঁধেছে রোগটা। ব্রিটিশ মেডিক্যাল জার্নাল ল্যানসেটে প্রকাশিত গবেষণাপত্রে এমনটাই দাবি করলেন, টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের এমডি অ্যান্ডারসন ক্যানসার সেন্টারের বিজ্ঞানীরা।
অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, চিকিৎসায় ‘সুস্থ’ হয়ে যাওয়ার পরেও হঠাৎই কখন চুপিসারে ফিরে এসেছে রোগ। কিছু বোঝার আগেই চিকিৎসকদের হাতের বাইরে চলে গিয়েছে রোগিণীর জীবন। টেক্সাসের গবেষকেরা জানালেন, এ সব ক্ষেত্রে অব্যর্থ ভূমিকা নেবে তাঁদের গবেষণা।
একটা রক্ত পরীক্ষা কী ভাবে বলে দিতে পারবে এমন মারণ রোগের মতিগতি? বিজ্ঞানীরা বলছেন, রক্তের মধ্যে ‘সারকুলেটিং টিউমার কোষের’ (সিটিসি) সংখ্যা থেকে বোঝা সম্ভব রোগিণীর দেহে ক্যানসারের ভয়াবহতা কতটা। একটি ক্যানসার কোষ অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ক্রমাগত ভেঙে তৈরি হয় এই কোষগুলি। এর পর মূল কোষ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে রক্তস্রোতের মধ্যে ভেসে বেড়াতে শুরু করে এরা। বিজ্ঞানীদের মতে, এই সিটিসি খানিক বীজের মতো। উৎস থেকে আলাদা হয়েই এরা সারা দেহে ক্যানসার ছড়াতে শুরু করে।
স্তন ক্যানসার নিয়ে গবেষণা করছিলেন টেক্সাসের বিজ্ঞানীরা। দলের নেতৃত্বে অধ্যাপক অ্যান্টনি লুসি। সিটিসির চরিত্রের কথা ভেবে অ্যান্টনির মনে প্রশ্ন জাগে স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত এক রোগিণী, যাঁর দেহে সবে মাত্র রোগ ধরা পড়েছে, তাঁর রক্তেও কি সিটিসি রয়েছে? প্রাথমিক পর্যায়ের চিকিৎসা চলছে এমন তিনশো রোগিণীর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করেন তিনি। দেখা যায়, তাঁদের মধ্যে ২৪ শতাংশ মহিলার রক্তে সিটিসি রয়েছে। এঁদের নিয়ে পরীক্ষা চালিয়ে যান অ্যান্টনি। দেখেন ওই সব মহিলার মধ্যে ১৫ শতাংশের দেহে সিটিসি নষ্ট করে দেওয়ার পরেও বারবার ফিরে এসেছে। ১০ শতাংশ মহিলা গবেষণা চলাকালীনই মারা যান। কিন্তু যাঁদের রক্তে সিটিসি পাওয়া যায়নি, তাঁদের ক্ষেত্রে এই দুই প্রবণতাই বেশ কম। মাত্র দুই থেকে তিন শতাংশ। আবার যাঁদের রক্তে সিটিসির সংখ্যা মারাত্মক বেশি, তাঁদের মধ্যে ৩১ শতাংশই মারা গিয়েছেন অ্যান্টনির গবেষণা শেষ হওয়ার আগেই।
ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “খুবই ভাল খবর। রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে যদি স্তন ক্যানসারের ভয়াবহতা কতটা জানা যায়, তা হলে চিকিৎসা পদ্ধতি অনেক সহজ হয়ে যাবে। তবে এই পরীক্ষায় খরচ কতটা হবে, সেটাও ভেবে দেখার মতো। কারণ খরচ সাধারণ মানুষের সামর্থ্যের বাইরে চলে গেলে, গবেষণার আসল উদ্দেশ্যই সফল হবে না।” |