দায় নিয়ে রাজ্য-কেন্দ্র তরজা: সাফল্য ধরে রাখা নিয়ে সংশয় বাড়ছেই
টিকার অভাব, জমছে পোলিওর মেঘ
পোলিও নিয়ে যে রাজ্য গোটা দেশের ‘গলার কাঁটা’ হয়ে উঠেছিল, সেই পশ্চিমবঙ্গকে গত এক বছর পোলিওমুক্ত রাখার জন্য বিল ও মিলিন্দা গেটস ফাউন্ডেশনের তরফে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অভিনন্দনপত্র পাঠিয়েছিলেন স্বয়ং বিল গেটস। অথচ প্রয়োজনীয় প্রতিষেধকের অভাবে সাফল্যটি শেষ পর্যন্ত ধরে রাখা যাবে কি না, রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর এখন সেই সংশয়ে ভুগছে। এর দায় রাজ্য সরকার কেন্দ্রের উপরে চাপালেও দিল্লির স্বাস্থ্য-কর্তারা পাল্টা আঙুল তুলেছেন স্বাস্থ্য দফতরের ‘সমন্বয়ের ঘাটতি’র দিকে।
স্বাস্থ্য দফতরের অভিযোগ: গত ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল পর পর তিন মাস পশ্চিমবঙ্গকে রুটিন টিকাকরণের জন্য পোলিও প্রতিষেধক সরবরাহ করেনি কেন্দ্র। এবং ওই তিন মাসে বিভিন্ন সরকারি কেন্দ্রে পোলিও টিকা নিতে এসে ১০ হাজারের বেশি শিশু ফিরে গিয়েছে। টিকা না-পাওয়ায় এদের অধিকাংশের রুটিন টিকাকরণে ছেদ পড়েছে, যার দরুণ তাদের শরীরে পোলিও ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা হ্রাস পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা। অর্থাৎ ওরা যখন-তখন পোলিওয় আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা দফতরের।
মূলত পশ্চিমবঙ্গ থেকে পোলিও তাড়ানো যাচ্ছিল না বলেই ‘পোলিওপ্রবণ দেশ’-এর তালিকা থেকে মুক্তি ঘটছিল না ভারতের। ২০১১-য় সারা দেশে যে একটিমাত্র নতুন পোলিও রোগীর খোঁজ মিলেছিল, সে-ও হাওড়ার পাঁচলার বাসিন্দা। তার পরে অবশ্য এখনও পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতের কোথাও নতুন কোনও পোলিও রোগীর সন্ধান নেই। তাই ২০১২-র ফেব্রুয়ারিতে পোলিওপ্রবণ তালিকা থেকে ভারতের নাম বাদ দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)। কিন্তু এ বার স্বাস্থ্য-কর্তাদের রীতিমতো ভাবিয়ে তুলেছে রুটিন টিকাকরণের এই সঙ্কট। সম্প্রতি দিল্লি গিয়ে এ নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য-কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠকও করেছেন তাঁরা। সঙ্কটের ছবিটা ঠিক কী রকম?
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর: কেন্দ্রকে রাজ্য জানিয়েছে, ওই তিন মাসে রুটিন টিকাকরণের একটা টিকাও দিল্লি থেকে আসেনি। গত বছরেও মোট প্রয়োজনের মাত্র অর্ধেক মিটেছে। অর্থাৎ যত শিশুর রুটিন পোলিও টিকা পাওয়ার কথা ছিল, তত শিশুকে তা দেওয়া যায়নি। ফলে রাজ্যের যে দুই জেলায় অতীতে সর্বাধিক পোলিও ‘কেস’ মিলেছে, বিশেষত সেই মুর্শিদাবাদ ও বীরভূমের স্বাস্থ্য-কর্তারা প্রমাদ গুনছেন। গত ১৫ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল এবং ৫ থেকে ১০ মে বীরভূমের বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে এক জনকেও টিকা দেওয়া যায়নি।
মুর্শিদাবাদের স্বাস্থ্য-কর্তারা জানিয়েছেন, পাল্স পোলিও প্রতিষেধক রুটিন টিকাকরণে ব্যবহার করেও সব শিশুকে দেওয়া যায়নি।
এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের স্বাস্থ্য-পরিবারকল্যাণ কর্তাদের আক্ষেপ, প্রতিষেধকের অনিয়মিত সরবরাহের দরুণ ‘পরিপূর্ণ টিকাপ্রাপ্ত শিশু’ (ফুললি ইমিউনাইজড চাইল্ড)-র এর সংখ্যা এক ধাক্কায় কয়েক হাজার কমে যাচ্ছে। উপরন্তু বহু অঞ্চলে বাচ্চাকে পোলিও টিকা নেওয়ানোর জন্য অভিভাবকদের রাজি করাতে বিস্তর কাঠখড় পোড়াতে হয়। বহু গরিব বাবা-মা এক দিনের রুজি নষ্ট করে বাচ্চাকে নিয়ে আসেন। তার পরেও টিকা না-থাকলে তাঁদের আগ্রহ তলানিতে ঠেকে।
দিল্লি কী বলছে?
পোলিও টিকার অনিয়মিত জোগানের জন্য কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক কিন্তু ঘুরিয়ে দুষছে রাজ্যকেই। মন্ত্রকের ডেপুটি কমিশনার (টিকাকরণ) প্রদীপ হালদারের মন্তব্য, “কেন্দ্রের উপরে দায় চাপানো ঠিক নয়। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি আছে কি না, সেটাও দেখতে
হবে।’’ প্রদীপবাবুর ব্যাখ্যা, “মজুত টিকায় কত দিন চলতে পারে, তার হিসেব কষে আগাম দিল্লিকে জানাতে হয়। অথচ পশ্চিমবঙ্গ থেকে অনেক সময়েই সেটা সময়মতো জানতে পারি না। কারণ রাজ্যের প্রত্যন্ত এলাকা থেকে ওই রিক্যুইজিশন কলকাতার সদরে আসে শেষ মুহূর্তে, কলকাতাও আমাদের জানায় অন্তিম সময়ে। ফলে সরবরাহ যখন পৌঁছায়, তার আগে ক’দিন হয়তো টিকা ছাড়াই ওঁদের চালাতে হয়েছে।” যে সব রাজ্যে এই সমন্বয় ঠিকঠাক, তারা সমস্যায় পড়ে না বলেই দাবি কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য-কর্তার।
এই চাপান-উতোরের মাঝে পোলিওর সিঁদুরে মেঘ ফের ঘনাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের আকাশে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.