কয়েক মাস আগে ছাত্র সংসদ নির্বাচনেও জলপাইগুড়ির শহরের কলেজগুলিতে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের চিহ্নও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সেই সংগঠনই উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের পরেই ছাত্র ভর্তি নিয়ে রাজনৈতিক তৎপরতায় টেক্কা দিচ্ছে এসএফআই এবং ছাত্র পরিষদকে। কলেজে ভর্তি সংক্রান্ত সব তথ্য জানাতে এবং ছাত্রছাত্রীদের সমস্যা শুনতে সর্বক্ষণের হেল্প লাইন খুলেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সোমবার উচ্চ মাধ্যমিকের ফল প্রকাশের দিনই বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে কোন কলেজে কত আসন রয়েছে, ফর্ম বিলি ও জমার তারিখ, বিষয়, ভর্তি হতে কত টাকা প্রয়োজন-সহ বিভিন্ন তথ্য সম্বলিত ছাপানো পুস্তিকা বিলি করেছে তৃণমুল ছাত্র পরিষদ। সেই সঙ্গে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, কোনও দুঃস্থ ছাত্র বা ছাত্রী আর্থিক কারণে ভর্তি হতে না পারলে তার ব্যয় বহন করবে সংগঠন। আসন পূরণ হয়ে গেলেও ছাত্রছাত্রীরা যোগাযোগ করলে তাদের ভর্তি করতে কলেজগুলিকে বাধ্য করা হবে। পাশাপাশি ফল প্রকাশের আগেই সংগঠনের তরফে প্রতি কলেজে ২০ শতাংশ আসন বৃদ্ধির দাবি জানানো হয়েছে জেলাশাসককে। সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য জেলা প্রশাসনের ওপর চাপ দিচ্ছে তৃণমূলের জেলা নেতৃত্বও। প্রতি বছরই উচ্চ মাধ্যমিকের পরে জেলা জুড়ে ছাত্র ভর্তির সমস্যা হয়। জলপাইগুড়ি জেলা সদরেই এই সমস্যা তীব্র আকার নেয়। জলপাইগুড়ি শহরের মাত্র দুটি সাধারণ কলেজে প্রায় হাজার দুয়েক ছাত্রছাত্রী ভর্তি হতে পারেন, অথচ শহর ও লাগোয়া এলাকার বিভিন্ন স্কুল মিলিয়ে প্রতি বছর প্রায় সাড়ে তিন হাজার ছাত্রছাত্রী উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। সেই সঙ্গে জেলার অন্যান্য প্রান্ত থেকেও ছাত্রছাত্রীরা জেলা সদরের কলেজগুলিতে ভর্তির আবেদন করেন। ছাত্র ভর্তির সমস্যা নিয়ে এ বছর বিরোধী ছাত্র সংগঠনগুলি যাতে ফায়দা তুলতে না পারে, সে দিকে লক্ষ্য রেখে এগোচ্ছে তৃণমূলের ছাত্র সংগঠন। এসএফআইয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, কলেজগুলিতে ফর্ম বিলি হয়ে যাওয়ার পরে পরিস্থিতি দেখে আন্দোলনে নামা হবে। কংগ্রেসের ছাত্র সংগঠন ছাত্র পরিষদের জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছে, শীঘ্র জেলা জুড়ে এ বিষয়ে প্রচার শুরু হবে। রাজনৈতিক মহলের মতে, গত বছর ক্ষমতায় আসার পরেও জলপাইগুড়ি শহরে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি। মাস খানেক আগে ছাত্র পরিষদের একটি বড় অংশ তৃণমূলে যোগ দিয়েছে। এতেই বাড়তি উৎসাহে কাজ শুরু করেছে তৃণমূল ছাত্র পরিষদ। সংগঠনের নেতা অরিন্দম ভট্টাচার্য বলেন, “৩৪ বছর ক্ষমতায় থেকেও বামফ্রন্ট সরকার জলপাইগুড়িতে শিক্ষার পরিকাঠামোই তৈরি করতে পারেনি। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসেই প্রতিটি কলেজে ১০ শতাংশ আসন বৃদ্ধি করে সমস্যা মেটাতে উদ্যোগী হয়েছে। কোনও ছাত্রছাত্রী কলেজে ভর্তি হতে না পারলে আমাদের হেল্প লাইনের নম্বরে যোগাযোগ করতে বলেছি। দুঃস্থ ছাত্রছাত্রীদেও ভর্তির ব্যাপারে সবরকম সাহায্য করা হবে।” ছাত্র ভর্তির সমস্যা নিয়ে আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছে সিপিএমের ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের জেলা নেতৃত্বও। এসএফআইয়ের জেলা সম্পাদক প্রদীপ দে বলেন, “এ বছর গড় পাশের হার বেশি। কলেজের সংখ্যাও বাড়েনি। সে কারণেই ছাত্র ভর্তি নিয়ে তীব্র সঙ্কট তৈরি হবে। আমরা সকল ছা ছাত্রীদের বলছি ফর্ম নেওয়ার পরে সমস্যা হলে আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে।” ছাত্র পরিষদের জেলার সহ সভাপতি তন্ময় দাস বলেন, “যদি আসন বাড়িয়ে ভর্তির সমস্যা না মেটানো হয় তবে জেলা জুড়ে আন্দোলন হবে।” |