টিকিট না-পেয়ে নেতা-নেত্রীদের একাংশের অন্য দলের প্রতীকে দাঁড়িয়ে পড়াটা যে তাঁরা পছন্দ করেননি, সে কথাই হয়তো ধূপগুড়ি পুর এলাকার সিংহভাগ বাসিন্দা বুঝিয়ে দিলেন। যেমন, বিকাশ মুস্তাফি। তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে তিনি দল পাল্টে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে কংগ্রেসের টিকিটে দাঁড়িয়ে যান। পুরভোটে জোট রাজনীতির ছন্দপতনের সেটিও ছিল একটি কারণ। তৃণমূল নেতৃত্ব পুরসভার ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪টি আসন কংগ্রেসকে ছেড়ে দিতে রাজি হলেও জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব দলে সদ্য যোগ দেওয়া বিকাশবাবুকে প্রার্থী করায় জটিলতার সৃষ্টি হয়। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী কংগ্রেসের প্রস্তাব মেনে বিকাশবাবুর জন্য আসন ছাড়তে রাজি না হওয়ায় জোট ভেস্তে যায়। কংগ্রেস নেতৃত্বের আশা ছিল, বিকাশবাবু ব্যক্তিগত প্রভাবেই জিতবেন। ১৯৯৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটে লড়াই করে কংগ্রেস প্রার্থী হিসেবে বিকাশবাবু প্রথম নির্বাচিত হন। ১৯৯৩ সালে তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে ফের পঞ্চায়েতে জয়লাভ করেন। ২০০২ সালে পুরসভার প্রথম নির্বাচনে ১৬টি আসনে তৃণমূল প্রার্থী দিয়ে দু’টি আসন দখল করে। ২০০৭ সালে তিনি সিপিএমের কাছে ৭২ ভোটে পরাজিত হন। ১৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিকাশবাবু কংগ্রেসের টিকিট পাওয়ায় বিরোধী ভোট কাটাকুটির আশা করেছিলেন সিপিএম নেতৃত্ব। ভোটদাতারা ব্যক্তিগত প্রভাবকে গুরুত্ব দেননি। মাত্র ৪১টি ভোট পেয়ে বিকাশবাবুকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। ওই ওয়ার্ডে মূল লড়াই হয়েছে তৃণমূল ও সিপিএমের মধ্যে। তৃণমূল প্রার্থী ২১৩ ভোটে সিপিএমকে পরাজিত করে। তৃণমূলের নেতৃত্ব থেকে আসা চন্দন মিত্র ৬ নম্বর ওয়ার্ডে মন মতো প্রার্থী না হওয়ায় রেশমা সেন নামে এক জনকে নির্দল প্রার্থী হিসাবে দাঁড় করান। রেশমা দেবী দীর্ঘ দিন তৃণমূলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ভাল। সেই তুলনায় ঘাসফুলের প্রার্থী বিদায়ী কাউন্সিলারের স্ত্রী ইশিতা ঘোষ একজন সাধারণ গৃহবধূ। তাঁর স্বামী তথা বিদায়ী কাউন্সিলার জয়বাবু গত পুরভোটে সিপিএম প্রার্থীকে মাত্র ১০ ভোটে পরাজিত করেন। ওই ওয়ার্ডে ইশিকা দেবী জয়ের ব্যবধান বাড়িয়ে সিপিএম প্রার্থীর তুলনায় ২৫২ ভোটে জয়লাভ করেছেন। দলছুট রেশমা দেবী পেয়েছেন মাত্র ৯৭টি ভোট। এ ব্যাপারে চন্দনবাবু বলেন, “রেশমা ছাত্র রাজনীতি থেকে তৃণমূল করছে। আমি দলের নেতৃত্বের সঙ্গে রেশমা দেবীকে প্রার্থী করার অনুরোধ করি। তাঁরা না মেনে কাউন্সিলরের স্ত্রীকে দাঁড় করান। রেশমা মনোনায়ন পত্র জমা দেয়। পরে আমি তাঁর হয়ে প্রচার করি। পরিবারতন্ত্রের বিরুদ্ধে মূলত রেশমার হয়ে প্রচার করেছি। সে জন্য দল যদি ব্যবস্থা নেয় নেবে।” রেশমা দেবী অবশ্য দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নীতি ও আদর্শে’ অনুপ্রাণিত হয়ে চলেছেন বলে দাবি করেছেন। তাঁর দাবি, “দিদি (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) বলেছিলেন, যেখানে অন্যায়, সেখানে প্রতিবাদ করতে হবে। তাই বিদায়ী কাউন্সিলরের স্ত্রীকে প্রার্থী করায় আমি নির্দল হিসেবে দাঁড়াই। আমি হেরেছি। তবে ওখানে দিদির নামেই ভোট হয়েছে। দিদিই জিতেছেন।” পাশাপাশি, ১২ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে এ বার নির্দল প্রার্থী হন শম্পা গুপ্ত। তিনি পেয়েছেন মাত্র ৮৬ ভোট। গত পুরভোটে ওই ওয়ার্ড কংগ্রেসের দখলে থাকলেও এবার তাঁরা তৃতীয় স্থানে চলে গিয়েছে। সিপিএমের সঙ্গে লড়াই করে আসনটি তৃণমূল ছিনিয়ে নেয়। তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অবশ্য দলবিরোধী কার্যকলাপের অভিযোগ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে। তৃণমূলের টাউন ব্লক সভাপতি গোপাল মুখোপাধ্যায় বলেন, “যাঁরা দল বিরোধী কাজ করেছেন, তাঁদের সকলের বিরুদ্ধে তদন্ত করে নেতৃত্ব শীঘ্র ব্যবস্থা নেবেন।” সিপিএম নেতৃত্বও ‘নির্দল’ নিয়ে খোঁজখবর করছেন। কারণ, পুরসভার বিদায়ী সিপিএম কাউন্সিলার কৌশল্যা বাহেতির স্বামী দিলীপ দাস টিকিট না পেয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে নির্দল হিসেবে দাঁড়ান। মাত্র ৪ ভোট পেয়ে তাঁকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। বিজেপি প্রার্থী কৃষ্ণদেব রায় আসনটি দখল করেছেন। এ দিকে টানা দশ বছর চেয়ারম্যানের পদে থাকা সত্যরঞ্জন ঘোষকে এ বার প্রার্থী করেনি সিপিএম। দলের পরাজয়ের পরে তিনি ক্ষোভ আড়াল করেননি। সত্যবাবু প্রার্থী হলে নিজের ১১ নম্বর ওয়ার্ডে দল জিতলেও পুরবোর্ড হাতছাড়া হবে বলে ভোটের প্রচারে সিপিএম মহলেই জল্পনা চলেছিল। ফল দেখার পরে সত্যবাবু বলেন, “আমি দলের অনুগত হিসেবে প্রচারের কাজ করেছি। আমার ওয়ার্ডে প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। তাই ওই ধরনের প্রচারের ঘটনায় আমি অত্যন্ত মর্মাহত।” |