‘বাজিগরে’র সুরেই দলকে চাঙ্গা করার চেষ্টা
নির্বাচনে হার মানেই বিপর্যয় নয়
দু’জনে দুই পৃথিবীর মানুষ। একজন আরব সাগরের তীরে মুম্বইয়ে। অন্য জন কলকাতার সরকারি হাউজিং এস্টেটের ছোট্ট ফ্ল্যাটে। অথচ দু’জনের অনেক কিছুর মধ্যে ‘অদ্ভুত মিল’ দেখতে পাচ্ছেন দার্জিলিং জেলা সিপিএমের জনপ্রতিনিধিরা। দু’জনেই যে পরাজয়কে বিপর্যয় বলে ভাবেন না।
একজনের মুখে শোনা গিয়েছিল, ‘কভি কভি কুছ জিতনে কে লিয়ে হারনা পরতা হ্যায়, আউর হারকে জিতনেওয়ালে কো বাজিগর কহেতে হ্যায়।’ হাততালিতে ফেটে পড়েন সিনেমাপ্রেমীরা। আর ১৯ বছর পরে দ্বিতীয়জনের মুখে শোনা গিয়েছে, ‘বিধানসভা ভোটের পরে ফল বিশ্লেষণ করে দেখেছি, সরকারে থেকেও অনেক জায়গায় আমরা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলাম। সেক্ষেত্রে হারই ভাল। হারকে মাথায় নিয়ে মানুষের মন জয়ের জন্য সর্বস্ব পণ করতে হবে।’
এক জন শাহরুখ খান। অন্য জন সূর্যকান্ত মিশ্র। এক জন বাংলার ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’। অন্য জন বাংলার বিরোধী দলনেতা হিসেবে নিজেই ‘ব্র্যান্ড’ হয়ে উঠেছেন বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেরই অভিমত। আর সে কারণেই রুপোলি পর্দায় ‘স্বপ্নের নায়ক’-এর সঙ্গে কঠোর বাস্তবের সূর্যবাবুকে ‘পর্যুদস্ত সিপিএমের ঘুরে দাঁড়ানোর মুখ’ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
প্রথম জন ১৯৯৩ সালে মুক্তি পাওয়া সিনেমায় ওই কথাগুলি বলার পরে এখনও সারা দেশ তা ভুলতে পারেনি। দ্বিতীয় জন, গত ১ জুন শিলিগুড়িতে অনিল বিশ্বাস ভবনে দলের একান্ত বৈঠকে ওই বার্তা দিয়ে ‘হতাশা-বিষাদে আচ্ছন্ন’ জনপ্রতিনিধিদের চাঙ্গা করার চেষ্টা করেছেন।
‘কভি কভি কুছ জিতনে কে লিয়ে হারনা পরতা হ্যায়, আউর হারকে জিতনেওয়ালে কো বাজিগর কহেতে হ্যায়।’
‘কখনও হারকে স্বাগত জানিয়ে মানুষের মন জয়ের দিকে এগোতে হয়।’
দার্জিলিং জেলার অন্তত শতাধিক জনপ্রতিনিধি (পঞ্চায়েত-পুরসভা) এতটাই উচ্ছ্বসিত যে অনেকে দলের ‘গোপন বৈঠক’-এর ব্যাপারে একান্তে মুখও খুলছেন। শিলিগুড়ি পুরসভা, মহকুমা পরিষদের একাধিক জনপ্রতিনিধি জানান, হারতে-হারতে মনোবল হারিয়ে না-ফেলে কাপ হাসিল করেছে ‘বাজিগর’-এর কেকেআর। ঠিক সে ভাবেই পার্টি অফিসে এক ঘণ্টার ‘ভোকাল টনিক’-এর পরে তাঁরাও তাঁদের নেতাকে ‘বাজিগর’ হিসেবেই দেখতে শুরু করেছেন।
সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক প্রবীণ নেতার কথাই ধরা যাক। তাঁর বক্তব্যের নির্যাস: রাজ্যে ক্ষমতাচ্যূত হলেও শিলিগুড়িতে মহকুমা পরিষদ এখনও সিপিএমের দখলে। ৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত, একটি পঞ্চায়েত সমিতিও সিপিএম চালাচ্ছে। অন্তত ৫০টি স্কুল-কলেজের পরিচালন সমিতিও বামেদেরই দখলে। কিন্তু, বিধানসভা ভোটে হারের পর থেকে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের অনেকেই মুষড়ে পড়েছেন। তাঁদের একাংশ যেন কিছুটা ‘কুণ্ঠা’য় ঘরবন্দি জীবনেই বেশি আগ্রহী। আর একটি অংশ ‘মানুষ আমাদের যখন হারিয়েছে, তা হলে তাঁদের নানা সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাব কেন, মানুষ বুঝুক, ভুগুক’ গোছের আচরণ করতে চাইছেন। তার উপরে ‘এত উন্নয়নের পরেও যদি অশোক ভট্টাচার্য হারেন’ তা হলে কাজ করে লাভ কী এমন মনোভাবও দেখা যাচ্ছিল কিছু জনপ্রতিনিধির মধ্যে। এই অবস্থায় কী ভাবে জনপ্রতিনিধিদের মনোবল চাঙ্গা করা যাবে, তা ভেবে কুলকিনারা পাওয়া যাচ্ছিল না। তখনই ঠিক হয়, ধূপগুড়ি পুরভোটের প্রচার সেরে ফেরার পথে সূর্যকান্তবাবুকে দিয়ে ওই জনপ্রতিনিধিদের উদ্দীপ্ত করার চেষ্টা হবে। সিপিএমের জেলা কমিটি সূত্রের খবর, সূর্যকান্তবাবু বক্তৃতা শুরুই করেন, ‘কখনও কখনও হারকে স্বাগত জানিয়ে মানুষের মন জয়ের দিকে এগোতে হয়।’ এক ঘণ্টার বক্তব্যের মর্মার্থ, ক্ষমতায় থেকে জনপ্রতিনিধির অনেকেই মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিলেন। সেখানে হারে মানুষের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করাই ভাল। কী ভাবে মানুষের কাছাকাছি যেতে হবে, সেই প্রসঙ্গে সূর্যকান্তবাবু প্রধানত দু’টি বিষয়ে জোর দেন। প্রথমটি হল, ‘মানুষ ভুগে বুঝুক গোছের মনোভাব দেখাবেন না। বরং তাঁদের সমস্যার প্রতি সহমর্মিতা দেখিয়ে সমাধানের জন্য নানা ভাবে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। শিুধু জাতীয়, আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে মিটিং-মিছিল, বক্তৃতা না-করে আমজনতার দৈনন্দিন দাবি-দাওয়া আদায়ের জন্য কাজ করে যেতে হবে। প্রসঙ্গক্রমেই, সম্প্রতি শিলিগুড়িতে পুর নাগরিকদের ভোগান্তি নিয়ে বাড়ি বাড়ি গিয়ে লক্ষাধিক সই সংগ্রহ অভিযানে যে সাড়া মিলেছে তাও ‘দৃষ্টান্ত’ হিসেবে উল্লেখ করেন তিনি।
কী বলছেন প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টার্চায? তাঁর সংক্ষিপ্ত মন্তব্য “এটুকু বলতে পারি, ওঁর এক ঘণ্টার বক্তৃতা আমাদের জনপ্রতিনিধিদের উদ্দীপ্ত করেছে। ভোটে হারলেও কী ভাবে মানুষের মন জয়ের দিকে এগোনো যায় তা গত এক বছরে উনি বারেবারেই বুঝিয়ে দিয়েছেন।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.