দুর্গাপুরে হার
মমতার সুরেই রিগিংয়ের অভিযোগ সিপিএমের
কদা একের পর এক ভোটে হারের পর সিপিএমের বিরুদ্ধে রিগিং-সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলতেন তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দুর্গাপুর পুর-নিগমে হারের পরে তাঁরই সুরে একই অভিযোগ তুলছে অধুনা-বিরোধী সিপিএম।
তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর ‘দাপট’ উপেক্ষা করে তমালিকা পণ্ডা শেঠ হলদিয়া পুরসভা দখলে রাখতে পারলে কেন দুর্গাপুর দখলে রাখা গেল না? সিপিএমের অন্দরে এ প্রশ্ন উঠছে। বুধবার দলের রাজ্য কমিটির বৈঠকে বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব দোষ চাপিয়েছেন তৃণমূলের ‘রিগিং-মেশিনারি’ এবং পুলিশ-প্রশাসনের ‘পক্ষপাতিত্বে’র উপর। বর্ধমানের জেলা সম্পাদক অমল হালদার রাজ্য কমিটির বৈঠকে দাবি করেন, তৃণমূলের বাইক-বাহিনীর রিগিং আটকাতে পারলে বামেরা কমপক্ষে আরও আটটি আসনে জয়ী হত। কারণ, এই আসনগুলিতে ৫০ ভোটের আশপাশে বাম প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। প্রায় একই কথা বলেছেন দলের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসুও।
লক্ষ্মণ শেঠ জেলে। তা সত্ত্বেও তমালিকাদেবীর নেতৃত্বে হলদিয়ার দখল রাখতে পেরেছে সিপিএম। কিন্তু প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী তথা পলিটব্যুরোর অন্যতম সদস্য নিরুপম সেনের জেলা দুর্গাপুরে কার্যত বিধানসভা ভোটেরই পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব প্রাথমিক ভাবে আলিমুদ্দিনকে আশ্বাস দিয়েছিলেন, ৪৩ ওয়ার্ডের দুর্গাপুর পুরসভায় ফল খারাপ হলেও তাঁরা অন্তত ২০টি আসন জিতবেন। জেলা নেতৃত্বের নিজস্ব হিসেব ছিল, বামেরা ২৫টি ওয়ার্ড জিতে পুরসভার দখল রাখবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা জিতেছে ১১টি ওয়ার্ড।
তা হলে কি শহর ও শিল্পাঞ্চলের ভোটাররা এখনও পুরোপুরি বাম-বিমুখ? নাকি বর্ধমান জেলা নেতৃত্ব তাঁদের সংগঠন যতটা মজবুত বলে দাবি করছেন, আসলে তা নয়। ফলাফলের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে রাজ্য কমিটির বৈঠকে অমলবাবু বলেন, বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত মোটামুটি সুষ্ঠু ভাবে ভোট হয়েছে। তার পর অন্তত ১৫টি ওয়ার্ডে তৃণমূলের বাইক-বাহিনী বুথদখল করে এক তরফা ভোট করেছে। পুলিশ-প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জানিয়েও লাভ হয়নি। ফলে যে সব ওয়ার্ড বামেদের নিশ্চিত জেতার কথা ছিল, তা-ও হাতছাড়া হয়েছে।
প্রাথমিক ভাবে সিপিএমের রাজ্য নেতৃত্ব যে ওই বক্তব্য মেনে নিয়েছে, বিমানবাবুর কথায় তা স্পষ্ট। বিধাননগরে এক দলীয় অনুষ্ঠানের পর প্রশ্নের জবাবে বিমানবাবু বলেন, “দুর্গাপুরে দুপুর সাড়ে ১২টার পরে তৃণমূলের বাইক-বাহিনী দাপিয়ে বেড়িয়েছে। তারা অবাধে বুথ দখল করেছে। সাধারণ মানুষকে ভোট দিতে দেয়নি। তাই বামেদের ফল খারাপ হয়েছে।”
রাজ্য কমিটির মতে, ‘সন্ত্রাস’ সত্ত্বেও হলদিয়ায় বামেরা জিতেছে। আর বিমানবাবুর ব্যাখ্যা “ওখানে বামেরা উন্নয়ন করেছে। মানুষ তার পক্ষে ভোট দিয়েছে। সেই সঙ্গে লক্ষ্মণ শেঠ ও অশোক গুড়িয়ার মতো নেতাদের মিথ্যা মামলায় জেলে রাখার বিরুদ্ধেও মানুষ ভোট দিয়েছে।” ধূপগুড়ির পরাজয় নিয়ে সিপিএমের জেলা নেতৃত্বকে বিস্তারিত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। তবে দলের একাংশের বক্তব্য, ওই পুরসভায় জয় নিয়ে কিছুটা ‘আত্মসন্তুষ্ট’ হয়ে পড়েছিলেন জেলা নেতৃত্ব। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেবের নেতৃত্বে যে ভাবে তৃণমূল মাটি কামড়ে পড়েছিল, সিপিএম নেতারা তা ছিলেন না। তাঁরা নিয়মমাফিক প্রচার চালিয়েছেন। বামেরা পাঁশকুড়া জয়ের আশা করেনি। জেতেওনি। কিন্তু সেখানেও তৃণমূল ‘সন্ত্রাস’ করেছে বলে রাজ্য কমিটির বিবৃতিতে বলা হয়েছে।
কিন্তু উদ্বাস্তু-অধ্যুষিত কুপার্স নিয়ে কেন বিবৃতিতে একটি কথাও বলা হল না, তা নিয়ে দলের অন্দরে প্রশ্ন উঠেছে। নদিয়া জেলা নেতৃত্ব প্রাথমিক ভাবে বলেছেন, তাঁরা মানুষকে বোঝাতে পারেননি। কিন্তু অধিকাংশ ওয়ার্ডে মাত্র ৩৫-৪০ টি ভোট পাওয়া সত্ত্বেও জেলা নেতৃত্বকে রাজ্য কমিটির সভায় সে ভাবে ‘চেপে’ ধরা হয়নি। দলের রাজ্য সম্পাদক বিমানবাবু নিজে ওই জেলার দায়িত্বে। দীর্ঘদিন ধরে ওই জেলার দায়িত্বে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মৃদুল দে। রাজ্য কমিটির একাধিক সদস্য মনে করেন, ওই জেলা নিয়ে প্রশ্ন তুললে আলিমুদ্দিনের নেতাদের দিকে আঙুল উঠত। তাই ‘চরম ব্যর্থতা’ সত্ত্বেও রাজ্য কমিটির বৈঠকে কুপার্স নিয়ে তেমন কোনও কথা হয়নি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.