দক্ষিণবঙ্গে গরমে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে। পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোয় তো বটেই, খাস কলকাতাও তাপপ্রবাহে কাতর। অথচ উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্স ও পাহাড়ে বৃষ্টির কমতি নেই। গত ক’দিন ধরে সেখানে প্রাক-বর্ষার বৃষ্টি হচ্ছিল, আরও বৃষ্টি দিতে বুধবার বর্ষা সেখানে ঢুকেই পড়ল। দক্ষিণের দহনজ্বালা কমার কোনও আশ্বাস অবশ্য আবহবিদেরা দিতে পারছেন না।
অর্থাৎ একই বঙ্গের দু’প্রান্তে আবহাওয়ায় চরম বৈপরীত্য। উত্তরের কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে যেখানে আকাশ কালো করে বৃষ্টি হচ্ছে, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৪-৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে উঠছে না, সেখানে বুধবারও দক্ষিণবঙ্গে গরমের বলি ২৩টি প্রাণ! সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের প্রাথমিক ধারণার ভিত্তিতে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ দিন আসানসোলে ছ’জন-সহ বর্ধমানে ৯ জন মারা গিয়েছেন। পশ্চিম মেদিনীপুরে ৭ জন। হুগলিতে ২, পূর্ব মেদিনীপুরে ১ ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। কলকাতায় পুলিশের চাকরির পরীক্ষা দিতে এসে গরমে অসুস্থ হয়ে মারা গিয়েছেন এক যুবক। এই নিয়ে দক্ষিণবঙ্গে গত তিন দিনে গ্রীষ্মের প্রকোপে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৫।
এবং দগ্ধ দক্ষিণের জন্য বর্ষার আগমনীও শোনাতে পারছে না আলিপুর আবহাওয়া দফতর। এখানে এ দিন কোথাও কোথাও স্থানীয় ভাবে বজ্রগর্ভ মেঘ থেকে বৃষ্টি নেমে সাময়িক স্বস্তি দিলেও আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, এর সঙ্গে বর্ষার কোনও যোগ নেই। |
আজ, বৃহস্পতিবারেও দক্ষিণবঙ্গে এমন বৃষ্টির পূর্বাভাস
দিয়ে রেখেছে আলিপুর। উত্তরবঙ্গ থেকে বর্ষা দক্ষিণে নামতে পারে না?
আলিপুরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “কোচবিহার ও জলপাইগুড়ি জেলার একাংশে বর্ষা ঢুকেছে। ঢুকেছে সিকিমেও। আপাতত বর্ষা ওখানেই থাকবে। নেমে আসার সম্ভাবনা নেই।”
আসলে উত্তরবঙ্গ ও দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা ঢোকার ‘রুট’ আলাদা। আন্দামান থেকে মায়ানমার হয়ে মৌসুমি বায়ুর যে প্রান্তটি উত্তর-পূর্বে ঢোকে, সেটাই উত্তরবঙ্গে বৃষ্টি নামায়। তাই উত্তরে বর্ষা আসে তাড়াতাড়ি। দক্ষিণে বৃষ্টির জন্য যার অপেক্ষায় থাকতে হয়, মৌসুমি বায়ুর সেই ‘কেরল-রুটের’ কী অবস্থা?
দিল্লির মৌসম ভবনের খবর: এ দিন সেটি যথেষ্ট সক্রিয় হলেও সম্পূর্ণ স্বাভাবিক ছন্দে ফেরেনি। ফলে এখনই বলা যাচ্ছে না, তা কবে নাগাদ দক্ষিণবঙ্গে ঢুকবে। মৌসুমি অক্ষরেখা সাধারণত কেরল থেকে আড়াআড়ি ভাবে উত্তরে উঠে আসে। কিন্তু এ বার তা মূলত পশ্চিম তট ঘেঁষে এগোচ্ছে। তাই তামিলনাড়ু-অন্ধ্রের বদলে ব্যাপক বৃষ্টি হচ্ছে গোয়া-কর্নাটকে। মৌসুমি বায়ুর এ হেন ‘অস্বাভাবিক’ মতিগতির দরুণ দক্ষিণবঙ্গের বর্ষা-ভাগ্য নিয়ে কিছুটা ধন্ধেই রয়েছেন আবহবিদেরা।
এ দিকে বিকেলের দিকে বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হলেও কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে এ দিনও তাপপ্রবাহ বয়েছে। বিভিন্ন জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ১-২ ডিগ্রি নামলেও ৪০ ডিগ্রির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ও ৬৯.৫ ডিগ্রির অস্বস্তি-সূচকের যুগলবন্দিতে হাসফাঁস করেছে কলকাতা। পথ-ঘাট শুনশান, বাসে-মেট্রোয় ভিড় কম গ্রীষ্মের করাল রূপের সামনে ভরদুপুরের কর্মব্যস্ত মহানগরের চেনা ছবিটা যেন বদলে গিয়েছে। দুর্গাপুর-আসানসোল কিংবা খড়্গপুর হয়ে চলাচলকারী বিভিন্ন ট্রেনের সাধারণ কামরার যাত্রীরাও তাপপ্রবাহের শিকার হচ্ছেন। উল্লেখ্য, মঙ্গলবার খাস হাওড়া স্টেশনের বাইরে গরমে অসুস্থ হয়ে এক যাত্রী মারা যান।
এই পরিস্থিতিতে পূর্ব রেল এ দিন হাওড়া স্টেশনের পুরনো ও নতুন কমপ্লেক্সে জরুরি ভিত্তিতে দু’টি ‘গ্রীষ্মকালীন চিকিৎসা সহায়তাকেন্দ্র’ খুলেছে। হাওড়ার স্টেশনের চিকিৎসক পি কে সাহা জানান, এ দিন সন্ধে পর্যন্ত প্রায় ৫০ জনের চিকিৎসা করা হয়েছে। এক মহিলা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে রেলের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। |