একজনের ইন্দিরা আবাসের টাকা দেওয়া হয়েছে অন্যজনকে। সিপিএমের পঞ্চায়েতের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ তুলে ঘণ্টাখানেক ধরে রাস্তা অবরোধ করল তৃণমূল। এরফলে রাস্তায় আটকে পড়া গাড়ির যাত্রীরা প্রচণ্ড গরমে চরম নাজেহাল হলেন। বুধবার বড়জোড়ার পখন্না হাটতলামোড়ে, বড়জোড়া-সোনামুখী রাস্তায় এই অবরোধ হয়। তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বন্ধ, অবরোধের বিরোধিতা করলেও তাঁর দলের নেতা-কর্মীরাই তীব্র দাবদাহের মধ্যে এ দিন কেন অবরোধ করলেন, তা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন। আর এ নিয়েই দলের স্থানীয় নেতৃত্ব ও জেলা নেতৃত্বের মধ্যে চাপানউতোড় শুরু হয়েছে।
তৃণমূলের পখন্না অঞ্চল সভাপতি জীতেন ভাণ্ডারির নেতৃত্বে এ দিন সকাল ৮টা থেকে প্রায় সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অবরোধ চলে। অবরোধস্থলের দু’দিকে বেশ কয়েকটি বাস, লরি-সহ অন্যান্য যানবাহণ আটকে পড়ে। গরমে অনেকেই গাড়ি থেকে নেমে কতক্ষণ অবরোধ চলবে তাও জানতে চান। বাতাসে গরম হাওয়ায় ততক্ষণে অনেকেরই হাঁসফাঁস অবস্থা। দুর্গাপুরের বাসিন্দা অভিষেক লায়েক ও সুজিত মাহাতো সোনামুখী যাওয়ার জন্য বাসে চড়েছিলেন। অবরোধে আটকে পড়ে তাঁদের প্রশ্ন, “আমাদের আটকে কার কী লাভ বুঝতে পারছি না। রাজনৈতিক দলগুলি কবে এই অবরোধের রাস্তা থেকে সরবে?” অনেকে আবার প্রশ্ন তোলেন, স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী যেখানে বন্ধ-অবরোধ করতে অন্য দলগুলিকে নিষেধ করছেন, এখানে তাঁর দলের লোকেরাই কোন যুক্তিতে এই গরমের মধ্যে অবরোধ করছেন?” তৃণমূলের পখন্না অঞ্চল সভাপতির দাবি, “সাধারণ মানুষের স্বার্থে প্রশাসনকে সজাগ করতেই এই আন্দোলন। দলের বড়জোড়া ব্লক সভাপতির অনুমতি নিয়েই আন্দোলন করছি।” তৃণমূলের বড়জোড়া ব্লক সভাপতি জহর বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা দাবি, “পথ অবরোধের কথা আমাকে বলা হয়নি। এ বিষয়ে আমার সম্মতিও নেওয়া হয়নি।” একই সুর দলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ’র গলায়। তিনি বলেন, “আমরা বন্ধ, অবরোধ সমর্থন করি না। পখন্নায় অবরোধ হবে বলে কেউ আমাকে আগে জানায়নি। আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি।” অবশেষে বাঁকুড়া সদর মহকুমা শাসক অরিন্দম রায় অবরোকারীদের সঙ্গে ফোনে কথা বলে তদন্তের আশ্বাস দিলে অবরোধ ওঠে।
অবরোধের কারণ কী? জীতেনবাবুর অভিযোগ, “সিপিএম পরিচালিত পখন্না পঞ্চায়েতে নানা অনৈতিক কাজ কারবার হচ্ছে। সম্প্রতি গ্রামেরই নন্দ বাউড়ি নামের এক বিধবা মহিলার ইন্দিরা আবাসের টাকা অন্য কাউকে পাইয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি বাঁকুড়া সদর মহকুমা শাসক এবং বড়জোড়ার বিডিওকে জানানো হলেও কাজের কাজ কিছু হয়নি। তাই আমরা এই আন্দোলনের পথে নেমেছি।” অবরোধে ছিলেন ওই নন্দ বাউরি। তিনি বলেন, “স্বামীকে হারিয়েছি। ছেলেরা আলাদা থাকে। গরু চরিয়ে কোনও ভাবে দিন চলে। আমার নামে ইন্দিরা আবাসের টাকা এসেছিল। কিন্তু সেই টাকা অন্য কেউ আমার নামে তুলে নিয়েছে। আমি সুবিচার চাই।” বাঁকুড়া সদর মহকুমা শাসক বলেন, “একই নামের দুই ব্যক্তি হওয়াতেই এই বিভ্রান্তি ঘটেছে। তবে প্রকৃত ব্যক্তি যাতে ওই টাকা পান, সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” পখন্না পঞ্চায়েতের প্রধান চন্দন বাউড়ি- কে বারবার ফোন করে কথা বলা যায়নি। |