মেঘ দেখা দিয়েও উড়ে গেল। বৃষ্টি নামল না বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া জেলায়। ফলে বুধবারও দুই জেলার বাসিন্দারা গরমের ভোগান্তি থেকে রেহাই পেলেন না। তীব্র দাবদাহের মধ্যেই এ দিন দুই জেলায় একদশ শ্রেণি ও কলেজে ভর্তি হওয়ার আবেদন পত্র সংগ্রহ করতে বেরিয়েছিলেন ছাত্র-ছাত্রীরা। কেউ ছাতা মাথায়, কেউ বা জলের বোতল সঙ্গে নিয়ে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন। কোথাও আবার স্কুল-কলেজ কর্তৃপক্ষ ছাউনির ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু এ দিন আপেক্ষিক আদ্রতা কিছু বৃদ্ধি পাওয়ায় গলদঘর্ম অবস্থা হয়।
বাঁকুড়া জেলা আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, এ দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪২.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আপেক্ষিক আদ্রতা ছিল ৩৬ শতাংশ। পুরুলিয়া কৃষি দফতর জানিয়েছে, সেখানকার তাপমাত্রা উঠেছিল ৪৪.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসে। আদ্রতাছিল ৮৭ শতাংশ। ফলে তীব্র রোদ মাথায় নিয়েই কলেজে ভর্তির জন্য আবেদন পত্র তুলতে হয় ছাত্রছাত্রীদের। ঝাড়খণ্ড সীমান্তের জয়পুর থানার সিধি গ্রাম থেকে ও ঝালদা থানার চিতমু গ্রাম থেকে পুরুলিয়ার জগন্নাথ কিশোর কলেজ ভর্তি হওয়ার আবেদন পত্র তুলতে এসেছিলেন নরেশ কেওট ও সুদীপ্ত মাহাতো। |
তাঁদের কথায়, “সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। লাইন দিয়ে আবেদন পত্র তুলে কাহিল হয়ে পড়েছি। দুপুরে বাসে বাড়ি গেলে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যাবে। তাই সন্ধ্যায় ট্রেনে বাড়ি ফেরা ঠিক করেছি।” ওই কলেজের অধ্যক্ষ মহাদেব চন্দ্র বলেন, “দুপুর পর্যন্ত ফর্ম দেওয়া হলেও সকালের দিকেই ভিড় বেশি হচ্ছে।” একই অবস্থা বাঁকুড়া জেলায়। বুধবার থেকে বাঁকুড়া খ্রিস্টান কলেজে প্রথম বর্ষে ভর্তির আবেদন পত্র দেওয়া শুরু হয়েছে। প্রথম দিনেই কয়েকশো ছাত্রছাত্রী এসেছিলেন। তাঁদের লাইন দেওয়ার জায়গার উপরে ছাউনি দেওয়া হয়েছে। গঙ্গাজলঘাটির দুর্লভপুর থেকে আবেদন পত্র নিতে এসেছিলেন, অরূপ কুণ্ডু, দেবাশিস কুণ্ডুরা। তাঁরা বলেন, “প্রচণ্ড গরমে সমস্যায় পড়েছি। এই গরমে বাসে চড়াও খুব কষ্টকর। কিন্তু ভর্তির জন্য এই কষ্ট তো সহ্য করতেই হবে।” |
তীব্র গরমে ছাত্রছাত্রীদের ফর্ম নিতে আসতে সমস্যা হবে বলে আবেদন পত্র দেওয়ার সময় এগিয়ে এনেছে কিছু স্কুল। যেমন আদ্রার নিগমনগর আশ্রম হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুকুমার চক্রবর্তী বলেন, “গরমের জন্য ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে আসতে কষ্ট হবে বলে সকাল আটটা থেকে দশটা পর্যন্ত আমরা আবেদন পত্র দিচ্ছি।” পুরুলিয়া জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক বারিদবরণ মিশ্র জানিয়েছেন, “একই কারণে তাঁরাও সকালের দিকে আবেদন পত্র দিচ্ছেন। তাঁরা আবেদন পত্র দেওয়ার সময়সীমা শনিবার পর্যন্ত বাড়িয়েছেন। মানবাজারের মানভূম কলেজের টিচার ইনচার্জ আশুতোষ বিশ্বাস বলেন, “আমাদের কলেজে এখন বিএ, বিএসসি, বিকম-এর দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা চলছে। পরীক্ষার্থীরা যাতে গরমে অসুস্থ হয়ে না পড়েন সে জন্য ওয়ারেশ রেখেছি।”
অন্য দিকে, গরমের জন্য আজ বৃহস্পতিবার থেকে কর্মবিরতি শুরু করছেন রঘুনাথপুর আদালতের আইনজীবীরা। বার অ্যাসোসিয়েশনের কার্যকরী সমিতির সদস্য প্রণব দেওঘরিয়া বলেন, “গরমের কারণে আদালতের কাজে সমস্যা হচ্ছে। বুধবার বার অ্যাসোসিয়েশন সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ৭ জুন থেকে ১৫ জুন পর্যন্ত কর্মবিরতি করা হবে।” |