বিয়ের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। বাড়িতে এসে গিয়েছেন নিমন্ত্রিতদের একাংশ। আচার-অনুষ্ঠানও শুরু হয়ে গিয়েছে। কয়েক ঘণ্টা পরেই সাতপাকে বাঁধা পড়বে মেয়ে।
কিন্তু এর মধ্যেই ছন্দপতন। বিয়েবাড়িতে হাজির সরকারি অফিসারেরা। তাঁদের কাছে অভিযোগ এসেছে, পাত্রী নাবালিকা। বয়সের প্রমাণপত্র পরীক্ষা করে করে শেষ পর্যন্ত বিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা।
ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার, দক্ষিণ শহরতলির বারুইপুরে। জেলার সমাজকল্যাণ আধিকারিক তুষারকান্তি চট্টোপাধ্যায় বলেন, “নাবালিকার বিয়ে দেওয়া হচ্ছে বলে এলাকার মানুষই মহিলা কমিশনে জানান। কমিশন বিষয়টি আমাদের দেখতে নির্দেশ দেয়। আমরা গিয়ে জানতে পারি, মেয়েটি এ বছরই মাধ্যমিক পাশ করেছে। মাধ্যমিকের অ্যাডমিট কার্ড অনুযায়ী, তার বয়স ১৬ বছর। নাবালিকার বিয়ে আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ।”
মেয়েটির পরিবার অবশ্য প্রথমে প্রশাসনের কথা শুনতে রাজি হয়নি। প্রশাসনের কর্তারা তাঁদের বোঝান, এই বিয়ে হলে আইন অনুযায়ী পাত্র-পাত্রীর বাবা-মায়ের দু’বছরের জেল ও এক লক্ষ টাকা জরিমানা হতে পারে। এর পরেই বিয়ে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেন পরিবারটি। খবর দেওয়া হয় পাত্রপক্ষকেও।
প্রশাসনের কর্তারা জানান, নাবালিকা মেয়েদের বিয়ে না দেওয়ার জন্য প্রচার চালানোর পরেও যে এমন ঘটনা পুরো বন্ধ হয়নি, বারুইপুরের ঘটনাটিই তার প্রমাণ। জেলার সমাজকল্যাণ আধিকারিক বলেন, “নাবালিকার শরীর বিয়ের জন্য তৈরি হয় না। তাই সন্তানধারণ করতে গিয়েও মারাত্মক বিপদ হতে পারে। সন্তানও অসুস্থ হয়ে জন্মাতে পারে। এ ছাড়া মেয়েটির পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যায়। তাই এই ধরনের বিয়ে বন্ধ করার জন্য এলাকার মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।”
এ ব্যাপারে রাজ্য মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় বলেন, “স্কুল, পঞ্চায়েত ও পুরসভাগুলিকেও এ ধরনের বিয়ের উপর নজর রাখতে হবে। এলাকায় এমন ঘটনা ঘটছে কি না, সে ব্যাপারে সজাগ থাকতে হবে সবাইকে। এটা একটা সামাজিক দায়িত্ব।” সমাজতত্ত্ববিদ অভিজিৎ মিত্র বলেন, “শুধু আইন প্রণয়ন করলেই হয় না। তা ঠিক মতো মানা হচ্ছে কি না, তার উপরেও নজরদারি থাকা দরকার। এলাকার মানুষ এই বিয়ে আটকেছেন। যাঁরা উদ্যোগী হয়েছেন, সরকারের উচিত তাঁদের পুরস্কৃত করা। তা হলে আরও মানুষ উৎসাহী হবেন।”
মেয়েটি অবশ্য বিয়ের চেয়ে পড়াশোনা করতেই বেশি আগ্রহী। এ দিন সে বলে, “এলাকার স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হয়েছি। মন দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই।” |