কলকাতা-সহ রাজ্যের কয়েকটি এলাকায় বুধবার বিকেলে ক্ষণিকের বৃষ্টি স্বস্তি আনলেও বঞ্চিত রইল দুই ২৪ পরগনার বহু গ্রামীণ এলাকা।
বৃষ্টির জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে রয়েছেন ওই সব এলাকার মানুষ। প্রবল গরম যেমন জীবনযাপনের তাল কাটছে, তেমনই কেড়েছে প্রাণও। বুধবারই গরমের কারণে দক্ষিণ ২৪ পরগনায় তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগনায় দু’জনের মৃত্যু হয়।
এ দিন দুপুরে রাস্তায় মাথা ঘুরে পড়ে যান ক্যানিং থানার গোপালনগরের বাসিন্দা জহিরুল খান (৬৮)। তাঁকে স্থানীয় হাসপতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। কর্মরত অবস্থায় বাসুদেব মণ্ডল (৭০) নামে দক্ষিণ শহরতলির মহেশতলার বাসিন্দা ওই নির্মাণকর্মীর মৃত্যু হয়। গরমের জেরেই তিনি মারা গিয়েছেন বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। অন্য দিকে, খেত থেকে ফসল তোলার সময়ে ডায়মন্ড হারবার মহকুমার রামনগরের অন্নদা মণ্ডল (৭০) নামে এক চাষি মাথা ঘুরে পড়ে যান। স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। বিকেল থেকেই অবশ্য জেলার বিভিন্ন এলাকার আকাশ মেঘে ছেয়ে যায়। পরে কিছু ক্ষণের বৃষ্টি স্বস্তি এনে দেয় ডায়মন্ড হারবার এবং কাকদ্বীপ মহকুমার নানা এলাকায়।
মঙ্গলবার বারাসতের কাজিপাড়ার বাসিন্দা প্রসেনজিৎ বক্সি (৩৮) বসিরহাটে এসে অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাস্তাতেই তিনি মাথা ঘুরে ফড়ে যান। বসিরহাট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। বসিরহাটের মেরুদণ্ডী গ্রামের বাসিন্দা বমলা মণ্ডল (৬৬) বাড়ির ছাদে কাপড় মেলতে গিয়ে পনে যান। তাঁকেও ওই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। দু’টি ক্ষেত্রেই চিকিৎসকেরা গরমের কারণে মৃত্যু বলে জানিয়েছেন।
বৃষ্টির আশায় বুধবারও দিন কেটেছে উত্তর ২৪ পরগনার গ্রামীণ এলাকার মানুষের। প্রবল গরমে তাঁরা হাঁসফাঁস করেছেন। শুনশান রাস্তায় পিচ গলে আটকে গিয়েছে বহু মানুষের জুতো। ফাঁকা-য় কাজ মেটানোর আশায় বেলা তিনটে নাগাদ ব্যাঙ্কে গিয়েছিলেন হাবরার এক বাসিন্দা। ভিতরে ঢুকেই চক্ষু চড়ক গাছ। গিজগিজ করছে লোক। কৌতূহলে কারণ জানতে চাইলেন এক ব্যাঙ্ককর্মীর কাছে। সেই কর্মীর উত্তর, “প্রায় সকলেই আশপাশের দোকানি, লোকজন। এসি-র ঠাণ্ডা খেতে এসেছেন।”
বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া গয় কয়েক দিন ধরে অনেকেই বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন না। দিনের বাজারের পাট চুকে যাচ্ছে রাতে। বাস, রিকশা, ভ্যানও প্রায় ফাঁকাই থাকছে। ভিড়ের জন্য ইতিহাসে স্থান পাওয়া ‘বনগাঁ লোকালে’ও মিলছে ‘দুর্লভ’ বসার জায়গা। ভিড় শুধু রাস্তার পাশে জলের কলে। বনগাঁ শহরে এ দিন চকিতে এসে মোটরবাইক থামিয়ে জলের নীচে মাথা ভিজিয়ে চলে যেতে দেখা গিয়েছে উঠতি যুবককে। সযত্নে আঁচড়ানো চুল গোল্লায় গেলেও হুঁশ নেই তাঁর। বিভিন্ন স্টেশন-রাস্তায় দেদার বিকিয়েছে ‘লেবু জল’। আর চেনা-জানার মধ্যে কুশল বিনিময় ভুলে গরমের একমাত্র সংলাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে, “সত্যি, আর পারা যাচ্ছে না!” |