হলদিয়া ও কলকাতা বন্দর অনেক আগেই নাব্যতা হারিয়েছে। কুলপিতেও নতুন বন্দর তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়নি। এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার গঙ্গাসাগরে গভীর সমুদ্র-বন্দর গড়ে তোলার যে প্রকল্প মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার হাতে নিয়েছে, তাতে সিলমোহর লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু করতে চলেছে কেন্দ্রীয় জাহাজ মন্ত্রক।
এ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে মন্ত্রকের সচিব প্রদীপকুমার সিংহ খুব শীঘ্র কলকাতায় আসছেন। তারই প্রস্তুতি হিসেবে আজ, বৃহস্পতিবার মুখ্যসচিব-সহ বেশ কয়েকটি দফতরের সচিবদের নিয়ে বৈঠকে বসছেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র।
প্রাথমিক ভাবে স্থির হয়েছে, সাগরের মায়া গোয়ালিনি ঘাটের কিছুটা দক্ষিণে গভীর সমুদ্র-বন্দরটি গড়ে উঠবে। সেখানে কলকাতা বন্দরের একটি ‘লাইটহাউস’ রয়েছে। রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার কথায়, “ওই দ্বীপের মূল ভূখণ্ডের এক প্রান্ত সাগরমেলা থেকে কাকদ্বীপের দিকে কচুবেড়িয়ার দূরত্ব কমবেশি ৩০ কিলোমিটার। মায়া গোয়ালিনি ঘাট ঠিক তার মাঝখানে।” সরকারি আধিকারিকদের বক্তব্য: স্থলভূমি থেকে অনেকটা দূরে, গভীর সমুদ্রে বন্দর গড়ার ক্ষেত্রে জমি অধিগ্রহণের সমস্যা থাকবে না। অন্য দিকে সমুদ্রের তলা থেকে ওঠানো মাটি দিয়েই জলের উপরে একটা বড়সড় প্ল্যাটফর্ম বানানো যাবে। বস্তুত বন্দর নির্মাণ প্রক্রিয়ায় এটাই প্রথম ধাপ।
গত ১ জুন সাগরে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, “আমরা এখানে গভীর সমুদ্র-বন্দর বানাব।” |
তার আগেই অবশ্য একাধিক দফতরের অফিসারেরা এর প্রাথমিক রূপরেখা তৈরি শুরু করে দিয়েছিলেন। ইতিমধ্যে এ নিয়ে যোজনা কমিশনের সঙ্গেও এক প্রস্ত কথা বলেছে রাজ্য সরকার।
মহাকরণ-সূত্রের খবর: বন্দর নির্মাণের অধিকাংশ খরচ কেন্দ্র বহন করবে ঠিকই, তবে রাজ্যকেও প্রকল্পটির পিছনে টাকা ঢালতে হবে বলে জাহাজ মন্ত্রক ইঙ্গিত দিয়েছে। বর্তমান আর্থিক টানাটানিতে রাজ্য কী ভাবে তার সংস্থান করবে, সে নিয়েও অর্থ দফতরের অফিসারদের একাংশের মধ্যে সংশয় রয়েছে।
রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তা বলেন, “গভীর সমুদ্র-বন্দর তৈরির পরিকল্পনা বাম আমলেই নেওয়া হয়েছিল। পূর্ণাঙ্গ সমীক্ষাও হয়েছিল। কিন্তু এক দিকে অর্থাভাব, অন্য দিকে প্রযুক্তিগত নানা সমস্যার পরিপ্রেক্ষিতে তদানীন্তন সরকার শেষ পর্যন্ত প্রকল্পটি রূপায়ণ থেকে পিছিয়ে আসে।” ওই অফিসারের বক্তব্য: বিশেষজ্ঞেরা তখন জানিয়েছিলেন, গভীর সমুদ্র-বন্দরে জাহাজ থেকে খালাস হওয়া মালপত্র জলপথে কলকাতা ও হলদিয়ায় আনতেই হবে। ফলে সেই একই নাব্যতার সমস্যায় পড়তে হবে।
যদিও রাজ্য প্রশাসনের এক কর্তার মন্তব্য, “সমুদ্র-বন্দরে খালাস হওয়া মাল বড় নৌকো বা বার্জে করে নদী-বন্দরে আনা হলে ওই সমস্যা অনেকাংশেই কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।”
এ সব পরিকল্পনা বাস্তবে কতটা কার্যকর হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও সমুদ্র-বন্দরই যে ভবিষ্যতের ভরসা, সে সম্পর্কে রাজ্য প্রশাসনের কর্তা-ব্যক্তিদের মধ্যে কোনও সংশয় নেই। তাঁরা বলছেন, ওড়িশা একাধিক সমুদ্র-বন্দর গড়ে বড়সড় আর্থিক সাফল্য পেয়েছে। উপরন্তু গত দু’বছরে তারা গঞ্জাম, পুরী, জগৎসিংহপুর, ভদ্রক ও বালেশ্বর জেলায় সমুদ্র-বন্দরের ১৪টি স্থান চিহ্নিত করেছে। ইতিমধ্যে পালুর ও গোপালপুরের মতো বেশ কয়েকটি প্রকল্প রূপায়ণ শুরুও করেছে ওড়িশা সরকার।
পশ্চিমবঙ্গও এ বার সেই পথে হাঁটতে চাইছে। |