ইন্দিরা আবাসের টাকা পড়ে, সঙ্কট
দেখভালের অভাবে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় ইন্দিরা আবাস যোজনার কাজ ঠিক মতো এগোচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। অথচ, এই প্রকল্পের কয়েক কোটি টাকা পড়ে রয়েছে। সমস্যায় পড়ছেন গরিব মানুষই। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ১ এপ্রিল পর্যন্ত এই প্রকল্পের ৩৭ কোটি ৯৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা পড়ে ছিল বিভিন্ন ব্লকে। গত ২ মাসে এর সামান্য অংশই খরচ করা সম্ভব হয়েছে। কেন এই অবস্থা? জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা তৃণমূলের অরুণ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “পঞ্চায়েত সমিতিগুলো তৎপর না-হওয়ার জন্যই এই পরিস্থিতি। কিছু পঞ্চায়েত সমিতি এখনও নিষ্ক্রিয়। কাজের ক্ষেত্রে গড়িমসি করছে।” অন্য দিকে, জেলা পরিষদের সিপিএম সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “কিছু ক্ষেত্রে সমস্যা রয়েছে। সমস্যার কথা রাজ্য সরকারকেও জানানো হয়েছে।”
ইন্দিরা আবাস প্রকল্পে বাড়ি তৈরির জন্য ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা বরাদ্দ হয়। দু’ভাগে এই টাকা দেওয়া হয়। কে কে এই সরকারি প্রকল্পের সুবিধা পেতে পারেন, তার জন্য প্রতি ব্লকে একটি তালিকাও রয়েছে। সেই তালিকা ধরেই ইন্দিরা আবাস প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ হয়। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, চলতি বছরের ১ এপ্রিল পর্যন্ত এই প্রকল্পে সব থেকে বেশি টাকা পড়েছিল খড়্গপুর-২ নম্বর ব্লকে, ৭ কোটি ৯৪ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা। বেলপাহাড়িতে (বিনপুর-২) পড়েছিল ৭ কোটি ২৯ লক্ষ ৪৪ হাজার টাকা। নারায়ণগড়ে ৪ কোটি ৫০ লক্ষ ৫৩ হাজার টাকা। ঘাটালে ৩ কোটি ৮ লক্ষ ৪৯ হাজার টাকা। ডেবরায় পড়েছিল ২ কোটি ৮০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ওই সূত্র জানিয়েছে, পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৯টি ব্লকে চলতি বছরের ১ এপ্রিল পর্যন্ত পড়ে থাকা অর্থের পরিমাণ ছিল ৩৭ কোটি ৯৩ লক্ষ ৬৫ হাজার টাকা। গত ২ মাসে এর সামান্য অংশই খরচ করা সম্ভব হয়েছে। জেলা প্রশাসন অবশ্য জানিয়েছে, এখন দ্রুততার সঙ্গে কাজ এগোচ্ছে। এ ক্ষেত্রে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, “এই সময়ের মধ্যে মেদিনীপুরে (সদর) ভাল কাজ হয়েছে। এক সময়ে এখানে ১ কোটি ২১ লক্ষ ৭ হাজার টাকা পড়েছিল। এখন সেখানে ৪ লক্ষ টাকা পড়ে রয়েছে।” জানা গিয়েছে, মেদিনীপুর (সদর) পঞ্চায়েত সমিতি এই প্রকল্পে ফের অর্থ চেয়ে জেলা পরিষদের কাছে ইতিমধ্যে আবেদনও করেছে।
ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য ইতিমধ্যে নতুন শর্ত আরোপ করেছে কেন্দ্র। যে শতের মধ্যে রয়েছে, প্রতিটি উপভোক্তাকে জমির ব্যবস্থা করে দিতে হবে রাজ্য সরকারকেই। উপভোক্তা অবশ্যই বিপিএল তালিকাভুক্ত হবেন এবং ইন্দিরা আবাস যোজনার তালিকায় নাম থাকতে হবে। রাজ্য সরকার তার বকেয়া ম্যাচিং-গ্র্যান্ট দিয়েছে কি না, তা-ও দেখতে হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, চলতি বছরের মার্চ মাসে কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন দফতর রাজ্যের ৬টি জেলাকে ইন্দিরা আবাস যোজনায় বাড়ি তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ করে। এই ৬টি জেলার মধ্যে রয়েছে পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, বীরভূম, জলপাইগুড়ি ও দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা। সব মিলিয়ে ২২ হাজার ৩১৮টি বাড়ি তৈরির জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। সরকারি এই প্রকল্প নিয়ে বিভিন্ন সময়ে নানা অভিযোগ ওঠে। তালিকায় নাম নেই, এমন কাউকে বাড়ি পাইয়ে দেওয়ার নাম করে অর্থ আদায় করা, প্রথম ভাগের টাকা আত্মসাৎ করা প্রভৃতি। কিছু ক্ষেত্রে আবার অনেক ভূমিহীন মানুষও ইন্দিরা আবাসের তালিকায় থেকে যেতেন। তখন টাকা পেলেও জমির অভাবে বাড়ি তৈরি করতে পারতেন না। কখনও অন্য কোনও একটি জমিতে তাঁর বাড়ি তৈরি করে দেওয়া হত। প্রাপ্য অর্থে বাড়ি হলেও ওই গরিব মানুষটি তাঁর প্রকৃত মালিক হতে পারতেন না। কারণ, সেই জমি খাস বা অন্য কারও হাতে থেকে যেত। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, বাড়ি তৈরির সমস্ত সরঞ্জামের দাম বেড়েছে। অথচ, এই প্রকল্পের বরাদ্দ বাড়েনি। এক-একজন গরিব মানুষকে বাড়ি করে দেওয়ার জন্য এখনও ৪৮ হাজার ৫০০ টাকাই বরাদ্দ হয়। তাও দু’ভাগে। প্রথমে ২৪ হাজার ২৫০ টাকা। পরে আরও ২৪ হাজার ২৫০ টাকা। সরকারি নিয়ম রয়েছে, এ ক্ষেত্রে পাকা বাড়ি তৈরি করতে হবে। কিন্তু, অনেক উপভোক্তাই এখন বরাদ্দ অর্থে পাকা বাড়ি তৈরি করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এখন ইট-বালি- স্টোন চিপস্, সমস্ত কিছুরই দাম বেড়েছে। একাংশ উপভোক্তা বাড়ি তৈরি করতে অস্বীকার করার ফলেই টাকা পড়ে থাকছে। জেলার সভাধিপতি অন্তরা ভট্টাচার্য বলেন, “অনেক পঞ্চায়েত সমিতিই ভাল কাজ করছে। তবে কয়েকটি এলাকায় কিছু সমস্যা রয়েছে। বিষয়টি রাজ্য সরকারকে জানানো হয়েছে। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে সরকার নিশ্চয়ই পদক্ষেপ করবে।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.