অনাহার এড়াতে আরও শস্যগোলা জঙ্গলমহলে
ক সময়ে আমলাশোলে অনাহার-মৃত্যু ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল গোটা রাজ্য। এখনও জঙ্গলমহলে অভাব-অনটন রয়েছে রীতিমতোই। তবে, রাজ্যে পরিবর্তনের পরে নতুন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, এক জন মানুষকেও আর অনাহারে থাকতে হবে না। অভাব-অনটনের খবর পেলে প্রশাসনিক কর্তারাই যাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে চাল দিয়ে আসেন, সেই নির্দেশও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে প্রশাসনিক কর্তাদের পক্ষে সব সময়ে তো আর বাড়ি-বাড়ি গিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া সম্ভব নয়। তা হলে, কোথাও খাদ্য-সঙ্কটের পরিস্থিতি হলে কী হবে? সেই কারণেই তৈরি করা হচ্ছে শস্যগোলা। প্রত্যন্ত গ্রামীণ এলাকায় ওই শস্যগোলা থাকবে। যেখান থেকে অভাবের সময়ে ধান নিয়ে যাবেন গরিব মানুষ। আবার চাষ করে সেই ধান ফিরিয়ে দেবেন।
পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা অনগ্রসর শ্রেণি-কল্যাণ আধিকারিক শান্তনু দাস বলেন, “পিছিয়ে পড়া, তফসিলি-অধ্যুষিত প্রতিটি ব্লকেই এই ধরনের একাধিক শস্যগোলা তৈরির কাজ চলছে। যে গোলাতে ধান বা চাল রাখা হবে। অভাবের সময়ে সাধারণ গরিব মানুষ সেখান থেকে খাদ্যশস্য নিয়ে যাবেন। আবার সুসময়ে তা ফিরিয়ে দেবেন। অভাবের সময়েও যাতে কাউকে অনাহারে থাকতে না-হয় বা মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে ধার নিতে না-হয়, সে জন্যই এই পরিকল্পনা।”
আমলাশোলে অনাহারে মৃত্যুর পরেই অবশ্য এই ধরনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। কিন্তু রূপায়ণে গতি ছিল শ্লথ। এখন কেন্দ্রীয়-প্রকল্প ‘ইন্টিগ্রেটেড অ্যাকশন প্ল্যানে’ (আইএপি) শস্যগোলা তৈরিতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন। গত বছরই আইএপিতে জেলায় ১৩টি শস্যগোলা তৈরি করা হয়। এ বার আরও ২৫টি শস্যগোলা তৈরির পরিকল্পনা হয়েছে। কাজও চলছে বলে প্রশাসন জানিয়েছে। ওই শস্যগোলাগুলিতে ১০০ কুইন্টাল পর্যন্ত ধান/চাল রাখা সম্ভব। সদস্য করা হবে ১০০ জনকে। ৭ জন করে সদস্য নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হবে। যে কমিটির কাছেই অভাবী মানুষ ধান বা চাল চেয়ে আবেদন জানাবেন। এক সঙ্গে ১০ কেজি পর্যন্ত চাল পাবেন এক-এক জন সদস্য। আর ধানের ক্ষেত্রে এক-এক জন সদস্য ১০০ কেজি পর্যন্ত ধান পাবেন। কোনও সুদ দিতে হবে না। তবে কমিটি যদি মনে করে তা হলে ১০০ কেজি ধান দেওয়ার পরে তা ফেরত নেওয়ার সময়ে ১০৫ কেজি নিতে পারে। প্রশাসন জানিয়েছে, সিদ্ধান্ত নেবে কমিটিই। আইএপি-তে এক-একটি শস্যগোলার জন্য ২ লক্ষ ৩১ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে।
মূলত, পিছিয়ে পড়া গরিব এলাকাতেই এই ধরনের শস্যগোলাগুলি তৈরি করা হচ্ছে। গোপীবল্লভপুর-১ ব্লকের সারিয়া কেন্দুগাড়ি, বিনপুর-১ ব্লকের সিজুয়া, গোবিন্দপুর, বাঁশবেড়, নয়াগ্রামের গোপালপুর, ধবনীশোল, কেশিয়াড়ির ছোট ডাইনটিকরি এলাকাতে গোলা তৈরি করা হচ্ছে। এই গোলাগুলি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ট্রাইবাল ডেভলপমেন্ট কো-অপারেটিভ কর্পোরেশনকে। কর্পোরেশনই গোলা তৈরির পরে প্রথম ধাপের ধান-চালও কিনে দেবে। কর্পোরেশনের মতে, এই ধরনের প্রকল্প গ্রামীণ এলাকার পক্ষে অতি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, নানা কারণে একটি পরিবার অভাবের শিকার হতে পারে। অর্থ-উপার্জনকারী সদস্য অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন। এলাকায় তেমন কাজ না থাকতে পারে। কারও মেয়ের বিয়ে দিতেই যাবতীয় সঞ্চয় শেষ হয়ে যেতে পারে। সেই সময়ে বাধ্য হয়ে মহাজনের কাছ থেকে চড়া সুদে অর্থ ধার নিতে হয়। গরিব মানুষের আয়ের পথও সঙ্কীর্ণ হওয়ায় ঋণের বোঝা বাড়তেই থাকে। গরু-ছাগল থেকে শুরু করে শেষ সম্বল খুইয়েও ধার মেটানো অসম্ভব হয়ে ওঠে। এক সময়ে মহাজনও ঋণ দিতে অস্বীকার করে। তখন চরম বিপদে পড়তে হয়। অনাহারে দিন কাটাতে বাধ্য হন অনেকেই। কিন্তু শস্যগোলা থাকলে সেই সমস্যা হবে না বলেই প্রশাসনের আশা।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.