|
|
|
|
ময়না-তদন্তে গড়িমসির অভিযোগ |
তমলুকে ডাক্তারের বাড়িতে ভাঙচুর, অভিযুক্ত তৃণমূল |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
পূর্ব মেদিনীপুর জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসকের বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠল তৃণমূল যুব-নেতার বিরুদ্ধে। ওই চিকিৎসকের অভিযোগ, যুব নেতার ‘কথামতো’ তিনি ময়না-তদন্তের রিপোর্ট ‘পরিবর্তন’ করতে রাজি না হওয়াতেই হামলা হয়েছে।
তমলুক শহরের পদুমবসান এলাকায় বাড়ি জেলা হাসপাতালের ময়না-তদন্ত বিভাগের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক প্রদীপ দাসের। মঙ্গলবার রাত ৮টা নাগাদ কয়েকটি গাড়িতে চেপে জনা তিরিশেক তৃণমূল সমর্থক ওই বাড়িতে চড়াও হয়ে ভাঙচুর চালায় ও প্রাণনাশের হুমকি দেয় বলে অভিযোগ। রাতেই থানায় যুব-তৃণমূলের তমলুক শহর সভাপতি চঞ্চল খাঁড়া-সহ কয়েক জনের নামে অভিযোগ করেন প্রদীপবাবু। কেউই অবশ্য ধরা পড়েনি। ওই চিকিৎসকের স্ত্রী ও মেয়ে পুলিশ-প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তার আর্জিও জানিয়েছেন।
জেলা পুলিশ সুপার সুকেশ জৈন এ ব্যাপারে মুখ খুলতে চাননি। অভিযোগ অস্বীকার করে চঞ্চল খাঁড়ার পাল্টা দাবি, “ওই চিকিৎসক ময়না-তদন্ত নিয়ে টালবাহানা করায় সাধারণ মানুষকে ভুগতে হয়। সেই গাফিলতির বিরোধিতা করায় তিনি দল ও আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ করছেন।” |
|
তমলুকে প্রদীপ দাসের ভাঙচুর হওয়া বাড়ি। ছবি: পার্থ প্রতিম দাস। |
স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৩ মে তমলুকের উত্তরচড়া শঙ্করআড়া এলাকার একটি বাড়িতে নাবালিকা পরিচারিকার মৃত্যুর পরে তাকে ধর্ষণ করে খুন করার অভিযোগ ওঠে গৃহকর্তার বিরুদ্ধে। অভিযুক্ত স্কুলশিক্ষক প্রণব রায় এখন জেল হেফাজতে। জেলা হাসপাতালের চিকিৎসক প্রদীপবাবুর অভিযোগ, “ওই নাবালিকার দেহের ময়না-তদন্তের রিপোর্ট পরিবর্তন করতে কিছু দিন ধরেই ফোনে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল আমাকে। রাজি না হওয়ায় চঞ্চল খাঁড়ার নেতৃত্বে একদল লোক বাড়িতে ভাঙচুর করে, হুমকি দেয়।”
পুলিশ সূত্রের খবর, ওই নাবালিকার ময়না-তদন্তের চূড়ান্ত রিপোর্ট এখনও জমা পড়েনি। প্রদীপবাবুর বিরুদ্ধে ময়না-তদন্তে ‘গড়িমসি’র অভিযোগ আগেও উঠেছে। জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক তথা জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ হোসেন বলেন, “সম্প্রতি দিঘার সমুদ্রে ডুবে এক যুবকের মৃত্যুর পর তাঁর দেহ ময়না-তদন্তের জন্য জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। তখনও টালবাহানা করেন চিকিৎসক। তবে ওই হামলার ঘটনার সঙ্গে দলের যোগ নেই।”
গত রবিবার দীপাঞ্জন দেব নামে বীরভূমের ভুবনডাঙার এক যুবক দিঘার সমুদ্রে তলিয়ে যান। সোমবার পুরাতন দিঘার সৈকতে তাঁর দেহ উদ্ধারের পরে ময়না-তদন্তের জন্য কাঁথি হাসপাতাল থেকে তমলুক জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়। জেলা হাসপাতাল থেকে ফের দেহটি কলকাতায় ‘রেফার’ করা হয়েছে। দিঘা থেকে কাঁথি, তমলুক, কলকাতাতিন দিন ধরে ঘুরেও ছেলের দেহ না পেয়ে ভেঙে পড়েছেন দীপাঞ্জনের মা মিনুদেবী। প্রতিকারের আশায় তিনি বিভিন্ন দফতরে চিঠিও পাঠিয়েছেন। মঙ্গলবার প্রদীপবাবুর বাড়িতেও যান দীপাঞ্জনের পরিজনেরা। তাঁদের অভিযোগ, “বাড়িতে গিয়ে অনুরোধ করলেও ওই চিকিৎসক ময়না-তদন্তের জন্য হাসপাতালে যাননি। এমনকী কলকাতায় ‘রেফার’ করেন সূর্যাস্তের পরে, যখন আর ময়না-তদন্তের সুযোগ ছিল না।” যুব-তৃণমূল নেতা চঞ্চলেরও দাবি, দীপাঞ্জনের বাড়ির লোকজনের সঙ্গে ডাক্তারবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন
তৃণমূলের কয়েক জন। কিন্তু ভাঙচুর হয়নি, হুমকিও দেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে প্রদীপবাবুর বক্তব্য, “ওই যুবকের দেহ মঙ্গলবার সকালেই জেলা হাসপাতালে এসেছিল। হুমকির ভয়ে বুধবার আমি হাসপাতালে যাইনি। তাই দেহটি কলকাতায় ‘রেফার’ করা হয়েছে।” নাবালিকার অপমৃত্যু ‘চাপা দিতেই’ এখন তৃণমূলের | নেতারা ওই প্রসঙ্গ তুলছেন বলে প্রদীপবাবুর অভিযোগ। |
|
|
|
|
|