|
|
|
|
প্রত্যাবর্তনের হলদিয়া |
শিল্পাঞ্চল, শহর থেকে কলোনি বামেদের সঙ্গেই |
নিজস্ব সংবাদদাতা • হলদিয়া ও পাঁশকুড়া |
পুরভোটে হলদিয়ায় তৃণমূলের বিপর্যয়কে সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে ‘জেহাদ’ হিসাবেই দেখছেন পুর-নাগরিকদের একাংশও। শুভেন্দু ভোটের প্রচারে পুরো পুর-এলাকা চষে ফেলেছেন। আর পাল্লা দিয়েই বেড়েছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে বাম ও কংগ্রেস প্রার্থীদের হুমকি, মারধর, প্রচারে বাধা দেওয়ার অভিযোগ। এই ‘সন্ত্রাস’ ও ‘আস্ফালনের রাজনীতি’ বুমেরাং হয়েছে বলে একান্তে মানছেন তৃণমূলের একাংশ কর্মী-সমর্থকও। যে হলদিয়া পুর-এলাকায় গত বছরের বিধানসভা ভোটেও ২৬টির মধ্যে ১৫টি ওয়ার্ডেই ‘লিড’ ছিল তৃণমূলের, সেখানেই এ বার প্রাপ্ত ভোটের শতাংশ-বিচারে প্রভূত পতন হয়েছে তাদের। বামেদের প্রাপ্ত ভোট যেখানে ৫১.৭৯ শতাংশ হয়েছে, তৃণমূলের প্রাপ্তি দাঁড়িয়েছে মাত্রই ৪৩.২৪ শতাংশ। ৮ শতাংশেরও বেশি ভোটের ব্যবধানে পর্যুদস্ত হয়েছে রাজ্যের প্রধান শাসকদল।
গ্রাম-ঘেঁষা অঞ্চল, শিল্পতালুক, উদ্বাস্তু কলোনি ও টাউনশিপ এলাকা নিয়ে গঠিত এই পুরসভায় একমাত্র গ্রাম-ঘেঁষা অঞ্চলেই কিছুটা মুখরক্ষা হয়েছে তৃণমূলের। অন্য সর্বত্রই বামেরা বিপুল সমর্থন পেয়েছে। কলকারখানা প্রধান এলাকা শিল্পতালুকে ঠিকা-শ্রম থেকে মুক্তির ‘মসিহা’ হিসাবেই এক দিন শুভেন্দুকে দেখেছিলেন শ্রমিক-কর্মচারীরা। বিধানসভা ভোটের পর সিটু ছেড়ে বেশিরভাগ শ্রমিকই কাজ হারানোর ভয়ে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনেও নাম লিখিয়েছিলেন। কিন্তু ঠিকাদারি রাজ আরও জেঁকে বসতেই দেখেছেন তাঁরা। বরং কারখানার রাজনীতিতে তৃণমূলেরই একাধিক গোষ্ঠীর কোন্দলের মাঝে পড়ে তাঁদের নাভিশ্বাস উঠছে। শিল্পতালুকের মানুষ এ সবের বিরুদ্ধেই রায় দিয়েছেন বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। ওই মহলের ব্যাখ্যা, নতুন শিল্প না আসা, সেই সঙ্গে পেট্রোকেম-বন্দরের সঙ্কটও নতুন সরকারের প্রতি ভরসা কমিয়েছে শ্রমিক-কর্মচারীদের। ফলে ভোটে শিল্পাঞ্চলে প্রত্যাবর্তন ঘটেছে বামেদের। উদ্বাস্তুদের স্বার্থে বামেদের এক সময়ের আন্দোলন, বস্তি উন্নয়নে বাম-পুরবোর্ডের বেশ কিছু কাজও নতুন করে স্বীকৃতি পেয়েছে কলোনি এলাকায়। পুরপ্রধান তমালিকা পণ্ডাশেঠের জয়ও সুকান্তনগর কলোনি এলাকা থেকেই। আবার বাম-আমলেই আধুনিক নগর-জীবনের স্বাচ্ছন্দ্য-সহ গড়ে ওঠা টাউনশিপ এলাকার মানুষও ফেরায়নি বামেদের। ভোটে জিতে তমালিকাদেবীও উন্নয়নের কর্মযজ্ঞ চালিয়ে নিয়ে যাওয়ারই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। নিকাশি ও পানীয় জলের সমস্যা স্বীকার করে তাঁর বক্তব্য, “প্রথমেই পানীয় জল ও নিকাশির উন্নয়নে গুরুত্ব দেব।”
অন্য দিকে, নন্দীগ্রামে কৃষিজমি-রক্ষার স্মৃতি উস্কেই গ্রাম-ঘেঁষা অঞ্চলে সামান্য সাফল্য পেয়েছে তৃণমূল। সুতাহাটা, বাসুলিয়া, জয়নগর, ডিঘাষিপুর, বারঘাষিপুরের মতো গ্রাম-এলাকায় জমিরক্ষার আবেগই কাজ করেছে। তবে পুরভোটের ফলে হতাশার কিছু নেই বলেই দাবি পূর্ব মেদিনীপুর জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক মামুদ হোসেনের। এ বারের ভোটের ফল জেলার ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে তাঁদের ব্যর্থতার বিরুদ্ধেও যে জেহাদ, সে কথাও মানতে চাননি জেলা পরিষদের সহ-সভাধিপতি মামুদ। তবে, তৃণমূলের সাধারণ কর্মী-সমর্থকেরা দলের অন্তর্দ্বন্দ্বকেও বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হিসাবে দেখছেন। যে ভাবে ভোটের ঠিক আগে বিধায়ক শিউলি সাহা আর সাংসদ শুভেন্দুর দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে এসেছিল, তাও মানুষ ভাল চোখে দেখেননি বলেই মনে করছে তৃণমূলের একাংশ। আবার সাংসদ যে ভাবে সিপিএমের ‘বিতর্কিত’দের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন, তা-ও দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করেছে বলে মনে করছে তারা। এমনকী প্রকাশ্যে তৃণমূলের সঙ্গে থেকে কেউ কেউ আসল সময়ে অন্তর্ঘাত করেছেন বলেও সন্দেহ শুরু হয়েছে। এর পরেও অবশ্য বিজয়ী বাম-কাউন্সিলরদের একাংশকে ভাঙানোর চেষ্টা তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী চালিয়ে যাচ্ছে বলে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। যদিও সিপিএমের জোনাল সম্পাদক সুদর্শন মান্নার দাবি, “গণতন্ত্রের পক্ষে মানুষ রায় দিয়েছেন। সেই গণতন্ত্রকে যারা নস্যাৎ করতে চাইছে, তারা জিতবে না।”
এতদ্সত্ত্বেও ‘মাতব্বরি’ কমার কোনও লক্ষণ নেই প্রধান শাসকদলের একাংশ নেতা-কর্মীর। হেরে গিয়েও হলদিয়ায় মঙ্গলবার মারমুখী হয়েছিল তারা। পাঁশকুড়াতেও সন্ত্রাসের অভিযোগ অব্যাহত। পাঁশকুড়ার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে হেরে যাওয়া সিপিএম প্রার্থী তথা বিদায়ী পুরবোর্ডের বিরোধী দলনেতা নকুল চাউলিয়ার অভিযোগ, “মঙ্গলবার রাতে বিজয়-মিছিলের নামে তৃণমূলের লোকজন পশ্চিমকল্লায় আমাদের দলীয় কার্যালয় দখল করেছে। তৃণমূলের পতাকা টাঙিয়ে দেওয়া হয়েছে সেখানে।” তৃণমূলের বিজয়ী প্রার্থী অনন্ত চাউলিয়ার বক্তব্য, “বিষয়টি জানি না। খোঁজ নেব।” |
|
|
|
|
|