সৌমিত্র কুণ্ডু • শিলিগুড়ি |
প্রত্যন্ত এলাকা শিবমন্দিরে একটি কোচিং ক্লাবে খেলেন স্থানীয় বাসিন্দা শমীক ঘোষ, অনিকেত মাহাতোরা। দেবরাজ ঘোষ খেলেন গোঁসাইপুরে। বুধবার উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে প্রশিক্ষণ শিবিরে সিএবি’র কোচ বুদ্ধদেব শেঠের মুখে নিজেদের প্রশংসা শুনে তারা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। তাদের অনেকেরই আইকন ঘরের ছেলে ঋদ্ধিমান সাহা। মহকুমাস্তরে সিএবি’র উদ্যোগে তাদের নিয়ে ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ শিবির এ দিনই শেষ হল। কোচ বুদ্ধদেব শেঠের কাছেই প্রশিক্ষণ নেন অনূর্ধ্ব ১৬ ওই ছেলেরা। এ দিন মাঠে উপস্থিত ছিলেন বিসিসিআই-এর অন্যতম সহসভাপতি চিত্রক মিত্র। তিনি জানিয়ে দেন পরবর্তীতে বিভিন্ন মহকুমা দলগুলির মধ্যে ম্যাচ হবে। সেখান থেকে উঠতি প্রতিভা বেছে সুযোগ করে দেওয়া হবে কল্যাণীতে সিএবি’র প্রশিক্ষণ শিবিরে। তাতে ভাল পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে অনূর্ধ্ব ১৬ বাংলা দলে সুযোগ মিলতে পারে প্রত্যন্ত এলাকার শমীক, দেবরাজদের। বিসিসিআই’র অন্যতম সহসভাপতি খুদে ক্রিকেটারদের উদ্দেশে বলেন, “এই শহর থেকেই ঋদ্ধিমান সাহা খেলা শুরু করেছিল। এখন ভারতীয়-এ দলের সহঅধিনায়ক। জাতীয় দলেও খেলেছেন। শহরের অপর উঠতি ক্রিকেটার দেবব্রত দাস আইপিএল-এ নজর কেড়েছে। ঋদ্ধিমানকে সামনে আইডল করে এগোতে হবে। পাপালিদা (ঋদ্ধিমান) পারলে আমরা পারবো না কেন, এই চিন্তা মাথায় নিয়ে এগোতে হবে।” তিনি জানান, উঠতি ক্রিকেটারদের সুযোগ করে দিতে সাধারণত বিভিন্ন শহরগুলিতে এতদিন নজর দেওয়া হত। প্রত্যন্ত এলাকা থেকে প্রতিভা বাছতে এ বারই প্রথম উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মহকুমাস্তরে প্রশিক্ষণ শিবিরের আয়োজন করে তাদের মধ্য থেকে উঠতি ক্রিকেট প্রতিভা বাছাই উদ্দেশ্য। এই প্রক্রিয়া চলবে। মাঠে উপস্থিত সিএবি’র জেলার দায়িত্বে থাকা অচিন্ত্য ঘোষ বলেন, “পাহাড়ে দার্জিলিং, কার্শিয়াং, কালিম্পং মহকুমাতেও শিবির হয়েছে। বর্ষার পর তাদের মধ্যে ম্যাচ খেলানো হবে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে। প্রত্যন্ত এই সমস্ত এলাকা থেকে ক্রিকেট প্রতিভা উঠে আসছে এটাই আমরা দেখতে চাই।” মাঠে উপস্থিত ছিলেন ঋদ্ধিমান, দেবব্রতদের কোচ জয়ন্ত ভৌমিক। তিনি দার্জিলিং মহকুমায় সিএবি’র কোচ হয়ে গিয়েছিলেন। সিএবি সূত্রে জানা গিয়েছে, মহকুমাস্তরের রাজ্যে ৬৬ টি জায়গায় এই ধরনের শিবির করা হয়েছে। তার মধ্যে পাহাড়ের তিন মহকুমা-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার মহকুমাগুলিতেও শিবির হয়েছে। এই কর্মসূচির কোঅর্ডিনেটর বিশ্বনাথ সামন্ত জানান, কোচবিহারের মেখলিগঞ্জ মহকুমা, পাহাড়ের কালিম্পং, কার্শিয়াঙের মতো এলাকায় শিবিরে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। ২৫০/৩০০ জন ছেলে শিবিরে যোগ দিতে এসেছিল। শিলিগুড়ি মহকুমার খুদে ক্রিকেটারদের নিয়ে শিবির হয় উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে। ১০০ জন উৎসাহীদের মধ্য থেকে ৩০ জনকে বেছে নেওয়া হয় শিবিরের জন্য। ১৫ মে থেকে ৪ দিন বাছাই পর্ব চলে। এর পর ৪ জুন পর্যন্ত শিবির করার কথা ছিল। পরে বিসিসিআই-এর সহসভাপতি শিলিগুড়িতে শিবিরে আসবেন জানানো হলে ২ দিন সময় বাড়িয়ে দেওয়া হয়। সিএবি’র উদ্যোগে শিবিরে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া সংস্থা, আঠেরোখাই সরোজিনী সঙ্ঘ। কোচ বুদ্ধদেব শেঠ বলেন, “প্রত্যন্ত এলাকায় থেকে যারা শিবিরে এসেছেন তাদের অনেকের মধ্যেই ভবিষ্যতে বড় ক্রিকেটার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সাধারণত ক্রিকেটের প্রাথমিক বিষয়গুলি শেখানোই ছিল এই শিবিরের মূল উদ্দেশ্য। তবে উৎসাহীদের একাংশ অনেক দূর এগিয়ে রয়েছে দেখে আমিও অবাক হয়েছি। ভবিষ্যতে বাংলা দলে সুযোগ পাওয়ার মতো প্রতিভা এখানে রয়েছে।” সরোজিনী সঙ্ঘের কর্মকর্তা দীপ্তেন্দু ঘোষের কথায়, প্রত্যন্ত এলাকা থেকে উঠতি ক্রিকেটারদের সুযোগ করে দিলে তবেই এই উদ্যোগ সার্থক হবে। |