|
|
|
|
দুই শহরের পুরবোর্ড নিয়েই চিন্তা বাড়ছে শাসক-শিবিরে |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
নন্দীগ্রামের ‘খলনায়ক’ বনে যাওয়া লক্ষ্মণ শেঠের ডেরা হলদিয়ার পুরভোটে অভাবিত বিপর্যয়ের পর পশ্চিম মেদিনীপুরের দুই পুরবোর্ড নিয়েও উদ্বেগের মেঘ জমতে শুরু করেছে তৃণমূল-শিবিরে। আগামী বছরই ভোট মেদিনীপুর পুরসভায়। কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে গত চার বছর এখানে পুরবোর্ড চালানো তৃণমূলের বলার মতো তেমন পারফরম্যান্স নেই। পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে পুর-নাগরিকদের। এই অবস্থায় তৃণমূলের অন্দরে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, আগামী বছরের ভোটে ক্ষমতায় ফেরা যাবে তো? যে ভাবে কংগ্রেসের সঙ্গে সমঝোতা ভাঙছে, সেই ধারাই যদি চলতে থাকেতা হলে পরীক্ষা আরও কঠিন হবে বলেই মনে করছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশও। সেই সঙ্গে খড়্গপুর-পুরবোর্ডের ভবিষ্যৎ নিয়েও সংশয় বাড়ছে শাসক-শিবিরে। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই সমর্থন প্রত্যাহার করেছে। অনাস্থা এলে তৃণমূলের পক্ষে রেলশহরে পুরবোর্ড-রক্ষা সাধারণ অঙ্কে অসম্ভব। প্রসঙ্গত, মাত্রই দু’বছর আগে খড়্গপুর-পুরবোর্ড দখল করেছিল তৃণমূল।
মেদিনীপুর পুরসভার কাজকর্ম নিয়ে শহরবাসীর ক্ষোভ-অসন্তোষ মাঝেমধ্যেই প্রকাশ্যে এসেছে। বিক্ষোভ-অবরোধের পথেও গিয়েছেন পুর-নাগরিকেরা। কোথাও পানীয় জলের দাবিতে সোচ্চার হয়েছেন বাসিন্দারা। কোথাও নিয়মিত আবর্জনা সাফাইয়ের দাবিতে। হকার সমস্যার সমাধান না-হওয়া থেকে শুরু করে যত্রতত্র অবৈধ-নির্মাণ নিয়েও বিস্তর ক্ষোভ রয়েছে। দলবাজির অভিযোগও রয়েছে। ২০০৮-এর সর্বশেষ পুর-নির্বাচনে জেলার এই সদর-শহরে কংগ্রেস-তৃণমূলের মধ্যে প্রথমে জোট হয়নি। দু’দল আলাদা ভাবেই লড়েছিল। তবে, নির্বাচনের পর জোট করেই পুরবোর্ড দখল করে দু’দল। ওই নির্বাচনে তৃণমূল পেয়েছিল ১০টি আসন। কংগ্রেস ৪টি। সিপিএম ৭টি। বাম-সমর্থিত বিকাশ পরিষদ পেয়েছিল ২টি আসন। বাকি একটি আসনে জেতেন নির্দল প্রার্থী। তবে, ২০১১-র বিধানসভা ভোটের ফলের নিরিখে পুর-শহরের ২৪টি ওয়ার্ডে জোটই ‘লিড’ পেয়েছিল।
তার পরেও কিন্তু আগামী বছরের পুর-নির্বাচন নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে শাসক-শিবিরে। সেই উদ্বেগ মূলত পুর-পরিচালনায় ব্যর্থতা-জনিত প্রতিষ্ঠান-বিরোধী ভোটের আশঙ্কায়। হলদিয়ায় বিপর্যয়ের মূলেও পূর্ব মেদিনীপুরের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত পরিচালনায় দলের ব্যর্থতা অন্যতম ‘ফ্যাক্টর’, একান্তে মানছেন তৃণমূল নেতৃত্বেরই একাংশ। একই প্রবণতার বলি হতে হবে না তো মেদিনীপুরেমঙ্গলবার থেকেই তৃণমূল-শিবিরে গুঞ্জন শুরু হয়েছে। এ দিকে, পুর-এলাকায় ওয়ার্ড-সংখ্যা এখনকার ২৪ থেকে বাড়িয়ে ২৮ করার পক্ষে ক্ষমতাসীন জোট-নেতৃত্ব। বুধবারই এ নিয়ে পুরবোর্ডের মিটিংয়ে বিশেষ-কমিটি গড়ার কথা ছিল। তবে প্রস্তাবিত ওই বোর্ড-মিটিং এ দিন হয়নি, পরে হবে বলে জানানো হয়েছে। পুরবোর্ড পরিচালনার ক্ষেত্রে মিটিং নিয়ে এই খামখেয়ালিপনারও অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতাসীনের বিরুদ্ধে। যেমন পুর-কর্মচারীদেরও ক্ষোভ রয়েছে তাঁদের বকেয়া-সংক্রান্ত ব্যাপারে। ‘স্বস্তি’ নেই খড়্গপুরেও। তৃণমূল-পরিচালিত খড়্গপুর-পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে ‘দুর্নীতি’র অভিযোগে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে কংগ্রেস, বামফ্রন্ট। পুরবোর্ডের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনতে চেয়ে কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা প্রদেশ নেতৃত্বের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখছেন। রেলশহরে কংগ্রেস-তৃণমূলের সম্পর্ক অবশ্য কখনওই ‘মধুর’ ছিল না। এখন ‘সম্পর্ক’ একেবারে তলানিতে ঠেকেছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, তৃণমূল পরিচালিত পুরবোর্ড ‘সংখ্যালঘু’ হয়ে পড়েছে। পুরসভায় আসন ৩৫টি। ২০১০-এর পুরভোটে তৃণমূলের দখলে এসেছিল ১৫টি আসন। কংগ্রেসের ১২। সিপিএমের ৩, সিপিআইয়ের ৩, বিজেপি-’র ১ এবং নির্দল ১। কংগ্রেসের সমর্থনেই বোর্ড গড়েছিল তৃণমূল। পরে দুই সিপিএম কাউন্সিলর কংগ্রেসে যোগ দেন। তাই, কংগ্রেসের আসন সংখ্যা বেড়ে এখন ১৪। কংগ্রেস ইতিমধ্যে তৃণমূল-বোর্ড থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করেছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, নির্দল কাউন্সিলরের সমর্থনও এখন তাদের দিকেই রয়েছে। অর্থাৎ তৃণমূলের সমান শক্তি তাদের। খড়্গপুরে আবার তৃণমূলের মধ্যে প্রভূত ‘দ্বন্দ্ব’ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অনাস্থা এলে তৃণমূল পুরবোর্ড ধরে রাখতে পারবে না বলেই রেলশহরের রাজনৈতিক মহলের ধারণা। অশনি-সংকেত দেখতে শুরু করেছে শাসক-শিবির। দুর্নীতির অভিযোগে চলতি মাসের ১৭, ১৮ ও ১৯ তারিখ পুর-দফতরের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে চলেছেন কংগ্রেস কাউন্সিলরেরা। তার আগে ওয়ার্ডে-ওয়ার্ডে সভারও পরিকল্পনা রয়েছে। এমন কর্মসূচি কি অনাস্থা আনারই প্রস্তুতি? গুঞ্জন কিন্তু বাড়ছে। |
|
|
|
|
|