|
|
|
|
স্বস্তি আনল বৃষ্টি, গরমের ছোবলে মৃত ৪ |
নিজস্ব প্রতিবেদন |
একটানা গরমের দাপটের মধ্যে বুধবার বিকেলে স্বস্তি আনল মেঘ-বৃষ্টি।
হোক তা স্বল্পস্থায়ী, তবু সেই বৃষ্টিই গায়ে মাখতে হাওড়া-হুগলি দুই জেলার কেউ পথে নেমেছেন, কেউ উঠে গিয়েছেন বাড়ির ছাদে। সেই দলে কচিকাঁচা থেকে বৃদ্ধবৃদ্ধা কেউই বাদ যাননি। দীর্ঘদিনের অনাবৃষ্টির পরে তৃপ্তির হাসি হেসেছেন ‘চাতক’ আমজনতা। তবে, তার আগে প্রবল গরম দুই জেলায় কেড়ে নিয়েছে চার জনের প্রাণ।
দুপুর ৩টের পরে আরামবাগ বাদে হুগলির তিন মহকুমায় বিচ্ছিন্ন ভাবে অল্পবিস্তর বৃষ্টি হয়। উত্তরপাড়া, রিষড়া, তারকেশ্বর, শ্রীরামপুর, চুঁচুড়া, চন্দননগর সর্বত্রই দেখা গিয়েছে একই ছবি। এ দিন দুপুরে হাওড়া-ব্যান্ডেল মেন শাখার শেওড়াফুলি স্টেশনে রেল লাইনে কাজ করছিলেন ঠিকাকর্মী মৃত্যুঞ্জয় ডোগরা (৩৬)। দুপুর দু’টো নাগাদ হঠাৎ-ই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। শ্রীরামপুর ওয়ালশ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের সূত্রে জানা গিয়েছে, তীব্র গরমে অসুস্থ হয়েই তিনি মারা যান।
তাঁর সহকর্মী গৌতম দাস বলেন, “রেল লাইনের ওভারহেড তারে পাখির বাসার জন্য অনেক সময় ট্রেন চলাচলে অসুবিধা হয়। আমরা সেই সব বাসা ভাঙার কাজ করছিলাম। কিন্তু মৃত্যুঞ্জয় হঠাৎ মই থেকে নেমে এসে এলিয়ে পড়ে। ধরাধরি করে হাসপাতালে নিয়ে যেতে যেতেই সব শেষ।”
পুড়শুড়ার পশ্চিমপাড়া গ্রামের আলু ব্যবসায়ী বিকাশ মাজি (৪১) এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ তারকেশ্বরের একটি হিমঘরে কাজ সেরে মোটরবাইক চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। কানারিয়ার কাছে অসুস্থ হয়ে পড়লে স্থানীয় লোকজন তাঁকে তারকেশ্বর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। গরমের কারণেই তিনি মারা যান বলে চিকিৎসকদের অনুমান। দেহটি ময়না-তদন্তে পাঠানো হয়েছে। গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ায় এ দিন নতুন করে ৬ জনকে আরামবাগ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। |
প্রাণের আরাম... |
|
|
হঠাৎ কয়েক পশলা বৃষ্টিতে সামান্য স্বস্তি মিলল দক্ষিণবঙ্গের কিছু জেলার কয়েকটি প্রান্তে।
বাঁ দিকে, চণ্ডীতলায় দীপঙ্কর দে-র তোলা ছবি। ডান দিকে, ব্যান্ডেলে ছবিটি তুলেছেন রূপম রায়। |
|
বিকেল সাড়ে ৪টে নাগাদ হাওড়ার বাগনান, আমতা প্রভৃতি এলাকায় বৃষ্টি হয়। বেশির ভাগ জায়গাতেই তা নামমাত্র হলেও স্বস্তি পেয়েছেন মানুষ। ব্যতিক্রম উলুবেড়িয়া। এখানে ভালই বৃষ্টি হয়েছে। তার সঙ্গে ছিল ঝড় এবং শিলাবৃষ্টি। প্রচণ্ড গরমে মঙ্গলবার উদয়নারায়ণপুরে একজনের মৃত্যু হয় বলে উলুবেড়িয়া মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে। মৃতের নাম সুফল দলুই (৭৫)। ওই দিন বেলা ৩টে নাগাদ তাঁকে অসুস্থ অবস্থায় গঙ্গারামচকে রাস্তার ধারে পড়ে থাকতে দেখা যায়। সেখান থেকে উদ্ধার করে উদয়নারায়ণপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। মহকুমাশাসক সুজয় আচার্য বলেন, “সুফলবাবুর বাড়ি উদয়নারায়ণপুর লাগোয়া হুগলির খানাকুলে। জরুরি কোনও প্রয়োজনে তিনি উদয়নারায়ণপুরে এসেছিলেন। তাঁর দেহ ময়না তদন্তে পাঠানো হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে গরমেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।”
গরমে যাতে মানুষ অসুবিধায় না-পড়েন সেই কারণে জেলার ১৪টি ব্লক এবং স্বাস্থ্য দফতরের কর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। অগ্রাধিকার পেয়েছে গ্রামের বিকল নলকূপগুলি সারানোর বিষয়টি। পানীয় জলের সমসা যাতে না-দেখা দেয়, সেই কারণেই বৈঠক বলে জানিয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি মীনা ঘোষ মুখোপাধ্যায়।
ইতিমধ্যেই রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর জেলা পরিষদকে বিকল নলকূপগুলি মেরামত করার জন্য ৬২ লক্ষ টাকা দিয়েছে। সেই টাকা জেলার ১৪টি পঞ্চায়েত সমিতিকে সমান ভাবে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে বলে মীনাদেবী জানান। অন্য দিকে অতিরিক্ত জেলাশাসক (পঞ্চায়েত) অশোক দাস বলেন, “জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের কাছে নলকূপের খাতে আরও টাকা চেয়ে পাঠানো হয়েছে।”
বুধবার হাওড়া সদরের মহকুমাশাসক বাণীপ্রসাদ দাস তাঁর এলাকার পাঁচ বিডিও এবং স্বাস্থ্যকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন। সিদ্ধান্ত হয়, মানুষ যাতে রোদে রাস্তায় কম বেরোন তার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি থেকে প্রচারের ব্যবস্থা হবে। প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে কেউ স্বাস্থ্যকেন্দ্র বা হাসপাতালে ভর্তি হলে চিকিৎসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ওষুধ মজুত রাখতে হবে। বিকল হয়ে যাওয়া নলকূপগুলি দ্রুত মেরামত করা হবে। মহকুমাশাসক বলেন, “স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে বিডিও-রা নিয়মিত সমন্বয় করে চলবেন।”
একই ভাবে তাঁর এলাকার ৯ জন বিডিও এবং স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকদের সঙ্গে তিনি নিয়মিত বৈঠক করছেন বলে জানান উলুবেড়িয়ার মহকুমাশাসক সুজয় আচার্যও। স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতে ওষুধ মজুত করা-সহ বিকল নলকূপগুলি মেরামত করার বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বিডিওদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মহকুমা প্রশাসনের এক কর্তা জানান।
মহকুমাশাসক বলেন, “বুধবার বৃষ্টির জন্য সাময়িক ভাবে স্বস্তি মিলেছে। কিন্তু যে হেতু তাপপ্রবাহ চলছেই, তাই প্রশাসনের পক্ষ থেকে সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগুলি বহাল রাখা হয়েছে।”
শ্যামপুরের গড়চুমুক হরিণ প্রকল্পের ৭৮টি হরিণ গরমে যাতে অসুস্থ হয়ে না-পড়ে তার জন্য বেশ কিছু সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে জেলা বন দফতর।
জেলা বনাধিকারিক গৌতম চক্রবর্তী বলেন, “প্রচুর জল এবং প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র মজুত করা হয়েছে।” রোদের প্রকোপ থেকে হরিণগুলিকে রক্ষা করার জন্য ভবিষ্যতে আরও কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন গৌতমবাবু। তিনি বলেন, “একটি বাড়তি ছাউনি করা দরকার। এ জন্য বিস্তারিত প্রকল্প রিপোর্ট তৈরি করে ঊধ্বর্র্তন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। ছাউনিটি তৈরি হলে রোদের সময়ে হরিণগুলি আশ্রয় নিতে পারবে।” |
|
|
|
|
|