উচ্চ মাধ্যমিকে মেধা তালিকায় হুগলির ছেলেদের জয়জয়কার। প্রথম দশে জায়গা করে নিয়েছে এই জেলার পাঁচ ছাত্র। এদের মধ্যে এক জন আবার কলা বিভাগে পড়াশোনা করে নম্বরের জোয়ার বইয়েছে।
৪৭৫ নম্বর পেয়ে বাঁশবেড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র সৌম্য ভট্টাচার্য তৃতীয় হয়েছে। ভবিষ্যতে অ্যাস্ট্রোফিজিক্স নিয়ে গবেষণা করতে চায় সে। সপ্তম স্থান অধিকার করেছে তারকেশ্বরের রামনগর নূটবিহারী পালচৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের অর্ঘ্য শীল। তাঁর প্রাপ্ত নম্বর ৪৭০। রসায়ন এবং অঙ্কে ৯৯ নম্বর পেয়েছে সে। পদার্থবিদ্যায় পেয়েছে ৮৬। ইচ্ছে আছে পদার্থবিদ্যা নিয়ে গবেষণা করার। তবে, উচ্চ মাধ্যমিকে দুর্দান্ত ফল করেও এতটুকু আত্মতুষ্ট নয় পূর্ব রামনগর পঞ্চায়েতের রামনগর গ্রামের ছেলেটি। বরং তাঁর কথায়, “এখনও অনেকটা পথ যেতে হবে। একই ভাবে অধ্যবসায় এবং মনযোগ সহকারে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটাই আমার প্রাথমিক লক্ষ্য।’’ বাবা সনাতন শীল আর মা মিঠুদেবীর একমাত্র সন্তান অর্ঘ্য। বাবা কাপড়ের ব্যবসা করেন। অর্ঘ্যের কথায়, “বাবা-মা ছাড়াও স্কুলের শিক্ষক এবং গৃহশিক্ষকেরা সব সময় সাহস জুগিয়ে গিয়েছেন। তাঁদের মর্যাদা রাখতে পেরে ভাল লাগছে।” |
আরামবাগ উচ্চ বিদ্যালয়ের দেবোময় ঘটক অষ্টম স্থান দখল করেছে। তার প্রাপ্ত নম্বর ৪৬৯। জয়েন্টে মেডিক্যালে সে রয়েছে ১৮ তম স্থানে। মেডিক্যালের সর্বভারতীয় পরীক্ষায় ৭২৯ তম স্থান দখল করেছে সে। বড় হয়ে চিকিৎসক হতে চায় দেবোময়। তার দাদা তন্ময় ডাক্তারি নিয়ে স্নাতকোত্তর পড়ছেন। দেবোময়ের বাবা তরুণকুমার ঘটক অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক। মা মালবিকাদেবী পেশায় শিক্ষিকা। পাঁচ জন গৃহশিক্ষকের কাছে পড়েছে দেবোময়। অবসর সময়ে গান শুনতে ভালবাসে সে।
গুড়াপ রমনীকান্ত ইনস্টিটিউশনের দুই ছাত্র একই সঙ্গে দশম স্থান অধিকার করেছে। বিজ্ঞান শাখার কৃষ্ণেন্দু দে এবং কলা বিভাগের রাজাগোপাল মুখোপাধ্যায় দু’জনেই ৪৬৭ নম্বর পেয়েছে। রাজাগোপালের প্রাপ্ত নম্বরের তালিকাটি এইরকম ইংরেজিতে ৯৬, বাংলায় ৮৫, সংস্কৃতে ৯২, কম্পিউটার অ্যাপ্লিকেশনে ১০০, ভূগোলে ৯৪। চতুর্থ বিষয় ইতিহাসে সে পেয়েছে ৮৮। আর্টসে এত নম্বর পেয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সে। রাজাগোপাল অবশ্য বলে, “এই ধরনেরই নম্বর আশা করেছিলাম।” ইংরেজি নিয়ে উচ্চশিক্ষা করতে চায় রাজাগোপাল। তাঁর কথায়, “প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই ইংরেজি পড়ার ঝোঁক আমার। ইংরেজিতে অধ্যাপনা করতে চাই। এটাই আমার স্বপ্ন।” গুড়াপ স্টেশনের পশ্চিমদিকে বীরপুরে বাবা, মা এবং দিদির সঙ্গে থাকে রাজাগোপাল। বাবা নিখিলকুমার মুখোপাধ্যায় রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্য ভবনে চাকরি করেন। দিদি কল্পনা মুখোপাধ্যায় ২০১১ সালে এম এ পাশ করেছেন ইংরেজি নিয়ে। নিখিলকুমারবাবুও ইংরেজিতে অনার্স নিয়ে গ্র্যাজুয়েট হন। বাড়িতে বাবার কাছেই ইংরেজি পড়েছে রাজাগোপাল। দিদিও সাহায্য করেছেন।
কৃষ্ণেন্দু অঙ্ক এবং পদার্থবিদ্যায় পেয়েছে ৯৭। রসায়নে ৯৩। ইংরেজিতে ৯৫। সে চিকিৎসক হতে চায়। তবে, এ বার তার ডাক্তারি পড়া হচ্ছে না। উচ্চ মাধ্যমিকে ঈর্ষনীয় নম্বর পেলেও জয়েন্ট এন্ট্রান্সে মেডিক্যালে খুব একটা ভাল ফল করতে পারেনি সে। সেই কারণে পরের বছর ফের জয়েন্টে বসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে গুড়াপ গ্রামের বাসিন্দা কৃষ্ণেন্দু। কৃষ্ণেন্দুর কথায়, “ডাক্তার হওয়াই আমার স্বপ্ন। তাই আগামী বছর নতুন উদ্যমে শুরু করতে চাই।” বাবা শিবশঙ্কর দে এবং মা আল্পনাদেবীর একমাত্র সন্তান কৃষ্ণেন্দু।
এ বারেও ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে মাহেশ শ্রীরামকৃষ্ণ আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয়।
সার্বিক ভাবে এই স্কুলের ফল অত্যন্ত ভাল হয়েছে। এই স্কুলের অনির্বাণ মুখোপাধ্যায় ৪৬৪ নম্বর পেয়ে মেধা তালিকায় ১৩ তম স্থান দখল করেছে। ১ নম্বর কম পেয়ে পরের স্থানেই রয়েছে সম্বিত গোস্বামী। শুভঙ্কর রায় রয়েছে ২০ তম স্থানে। সে পেয়েছে ৪৫৭। স্কুলের প্রধান শিক্ষক শশাঙ্কশেখর মণ্ডল বলেন, “আমাদের স্কুলে বিজ্ঞান শাখায় কোনও ছাত্র ৭০ শতাংশের কম নম্বর পায়নি। এই শাখার ৭৩ জনের মধ্যে ৬৪ জন ৮০ শতাংশের উপরে নম্বর পেয়েছে।” |