দল থেকে সাসপেন্ড হয়ে রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘বিদ্রোহ’ ঘোষণাকারী প্রাক্তন সাংসদ অনিল বসুকে এ বার বহিষ্কারের পথে এগোতে চাইছে সিপিএম। ‘দুর্নীতিতে প্রশ্রয়ে’র দায়ে সাসপেন্ড অনিলবাবু দলীয় সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তুলে এবং নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আক্রমণ করে ‘গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গ’ করেছেন বলে আলিমুদ্দিনের মত। একটি শাস্তি চলাকালীনই এমন ‘শৃঙ্খলাভঙ্গে’র অপরাধে আরামবাগের এক সময়ের ‘দাপুটে’ নেতা অনিলবাবুর বিরুদ্ধে চূড়ান্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা (অর্থাৎ বহিষ্কার) নিতে চাওয়া হচ্ছে বলে বুধবার রাজ্য কমিটির বৈঠকে ইঙ্গিত দিয়েছেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু। তবে সেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদনসাপেক্ষ।
সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত, অনিলবাবুর আচরণে রাজ্য নেতৃত্ব যে ‘তিতিবিরক্ত’, দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তা বিলক্ষণ জানেন। যার ফলে তাঁকে বহিষ্কারের সুপারিশ বা সিদ্ধান্ত কেন্দ্রীয় কমিটিতে বিমানবাবুরা জানালে তা ‘অনুমোদিত’ হতে বিশেষ বেগ পেতে হবে না বলেই দলীয় সূত্রের বক্তব্য। দলেরই অন্য অংশের মতে, আরামবাগ-সহ হুগলি জেলার কিছু অংশে অনিলবাবুর ‘প্রভাবে’র কথা মাথায় রেখে পঞ্চায়েত ভোটের আগে তাঁর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্তের ভার কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের উপরেই ছাড়তে চাইছে আলিমুদ্দিন।
হুগলিতে ওষুধ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ‘দুর্নীতিতে প্রশ্রয়’ দেওয়ার অভিযোগে অনিলবাবু এখন তিন মাসের জন্য দল থেকে সাসপেন্ড। খুব বিস্তারিত ব্যাখ্যায় না-গেলেও রাজ্য কমিটির বৈঠকে এ দিন বিমানবাবু তাঁর রিপোর্টে বলেছেন, সাসপেন্ড হওয়ার পরে অনিলবাবু যে ভাবে প্রকাশ্যে মুখ খুলেছেন, রাজ্য নেতৃত্বকে আক্রমণ করেছেন, রাজ্য সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা করার হুমকি দিয়েছেন স্ত্রীকে দিয়ে এ সবের পরিপ্রেক্ষিতেই তাঁকে শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করার পক্ষপাতী রাজ্য কমিটি। সাসপেন্ড হওয়ার পরেও অনিলবাবু নিয়মিত দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছিলেন। সম্প্রতি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “আমি ভূত হয়ে বিমানবাবুর ঘাড়ে চেপে রয়েছি!”
প্রসঙ্গত, রাজ্য নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আর এক ‘বিদ্রোহী’ নেতা বলে পরিচিত আব্দুর রেজ্জাক মোল্লা এ দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকেও গরহাজির ছিলেন। রাজ্য কমিটির এর আগের বৈঠকও তিনি এড়িয়ে গিয়েছিলেন শরীর খারাপের কথা বলে।
অনিলবাবুর বিষয়ে এ দিন বিধাননগরে এক দলীয় অনুষ্ঠানের পরে বিমানবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “আমি নতুন কিছু বলছি না। আগে যা বলেছিলাম, তা-ই বলছি।” অনিলবাবুকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর জবাব, “আমি কিছু জানি না। আমাকে কেউ কিছু জানায়নি।” অনিলবাবুকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়ে থাকলে কেন আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানাল না সিপিএম? রাজ্য কমিটির সদস্যদের ব্যাখ্যা, যত ক্ষণ না কেন্দ্রীয় কমিটি কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তত ক্ষণ প্রকাশ্যে কিছু ঘোষণা করা সম্ভব নয়। কেন্দ্রীয় কমিটির সিলমোহর মিললে আনুষ্ঠানিক ভাবেই সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হবে।
সিপিএমের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোনও কমিটি কারও বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিলে তার উচ্চতর কমিটির অনুমোদন নিতে হয়। অনিলবাবুর বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত এবং শাস্তির সুপারিশ করেছিল রাজ্য কমিটি, অনিলবাবু নিজেও তখন সেই কমিটির সদস্য ছিলেন। এখন অবশ্য রাজ্য কমিটি থেকে বাদ গিয়ে তিনি শুধুই জেলা কমিটির সদস্য। কিন্তু আগের সিদ্ধান্ত যে হেতু রাজ্য কমিটির, তাই কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে অনুমোদন নেবে আলিমুদ্দিন। পাশাপাশি, সাসপেন্ড হওয়ার পরেও অনিলবাবু দলীয় কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় সাধারণ মানুষ এবং দলের কর্মীদের মধ্যে আলিমুদ্দিনের ‘দুর্বলতা’ নিয়ে প্রশ্ন জেগেছিল। অনিলবাবুর বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে পারলে সেই ‘সংশয়ে’র অবসান ঘটাতে পারবেন বিমানবাবুরা। |