সম্পাদকীয় ২...
জলের দর
লো-হাওয়ার ন্যায়, জলও প্রকৃতির দান বলিয়াই গণ্য হয়। তাই তাহার জন্য মূল্য দাবি করিলে তাহা সহসা অন্যায় বলিয়া বোধ হইতে পারে। কিন্তু পরিস্রুত পানীয় জল উৎপাদন এবং বণ্টন যথেষ্ট খরচসাপেক্ষ। তাই সম্প্রতি গ্রামাঞ্চলে পাইপের মাধ্যমে পানীয় জল সরবরাহ করিবার পরিকল্পনা বিষয়ে একটি সর্বভারতীয় সভায় গুজরাত, হরিয়ানা, বিহার-সহ বেশ কিছু রাজ্যের প্রতিনিধিরা জানাইয়াছেন, তাঁহারা পানীয় জল পরিষেবার জন্য গ্রামবাসীদের থেকে কিছু মূল্য লইবার পক্ষপাতী। পশ্চিমবঙ্গের প্রতিনিধি, মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় নীরব ছিলেন। এ বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেই শেষ সিদ্ধান্ত নিতে হইবে। কিন্তু পানীয় জল সরবরাহের জন্য গ্রামবাসীর নিকট মূল্য নিবার সপক্ষে যুক্তিগুলিও শোনা প্রয়োজন। সেই যুক্তি এই যে, দরিদ্রমুখী নীতি প্রণয়ন করিতে গিয়া দরিদ্রের জীবনের বাস্তব অবস্থার প্রতি উদাসীন হইলে সেই নীতি অর্থহীন হইয়া দাঁড়ায়। সেই বাস্তব এই যে, দরিদ্র মানুষকে কোনও না কোনও ভাবে জলের মূল্য চুকাইতে হয়। সাম্প্রতিক গৃহস্থালি সমীক্ষায় ধরা পড়িয়াছে যে, গ্রামাঞ্চলে অর্ধেকেরও অধিক গৃহস্থালিতে অর্ধ কিলোমিটার কিংবা তার অধিক দূরত্ব হইতে জল আনিতে হয়। এই কাজটি বাড়ির মহিলাদেরই করিতে হয়। যে সময় এবং জীবনীশক্তি পানীয় জল আনিতে ব্যয়িত হয়, তাহার মূল্য গণনা করা হয় না বলিয়াই আমরা মনে করিয়া থাকি, ‘বিনামূল্যে’ পানীয় জল পাওয়া যাইতেছে। ওই পরিবারগুলি বাড়িতে জল পাইবার জন্য কিঞ্চিৎ দাম দিলে ক্ষতিগ্রস্ত হইবে না কি লাভবান হইবে? গুজারাতের গড়চিরোলি জেলায় দরিদ্রতম আদিবাসী পরিবারগুলিও পানীয় জলের জন্য মূল্য দিতেছেন। বস্তুত জল, বিদ্যুৎ, রাস্তা, চিকিৎসা, প্রভৃতি সকল পরিষেবার ক্ষেত্রেই দেখা গিয়াছে, যাহা কিছু ‘বিনামূল্যে’ পাইবার কথা, তাহার জন্য বাস্তবে দরিদ্রকে কোনও না কোনও উপায়ে মূল্য চুকাইতে হয়। তাই একটি সঙ্গত মূল্য দিতে তাঁহারা অনাগ্রহী নহেন।
গ্রামের গৃহস্থ বাড়িগুলিতে পাইপে পানীয় জল সরবরাহ করিবার বিষয়টি অত্যন্ত জরুরি, তাহার অপর কারণ স্বাস্থ্য। এ রাজ্যের নানা সমীক্ষায় দেখা গিয়াছে, পানীয় জলের উৎসে জীবাণু-সংক্রমণ সামান্য হইলেও, বাড়িতে কলসি প্রভৃতিতে রক্ষিত জল এবং পাত্রে পরিবেশিত জলের নমুনায় ক্ষতিকারক জীবাণুর সংক্রমণ অত্যন্ত বেশি। ইহা হইতে স্পষ্ট যে, টিউবওয়েল হইতে যে ভাবে জল সংগৃহীত হয়, তাহার জন্য একটি বড় মাত্রায় সংক্রমণ ঘটিয়া থাকে। পানীয় জল শুদ্ধ হইলে ডায়ারিয়া প্রভৃতি অসুখের প্রকোপ প্রায় অর্ধেক কমানো সম্ভব, ইহাও প্রমাণিত। সুতরাং পানীয় জলের অশুদ্ধতার মূল্য অস্বাস্থ্য এবং অপুষ্টির মাধ্যমে চুকাইতে হইতেছে গ্রামের পরিবারগুলিকে। এই পরিস্থিতি বদলাইতে এখনই পাইপে করিয়া সরাসরি বাড়িগুলিতে জল সরবরাহের প্রয়োজন। বলা বাহুল্য, ইহার জন্য যত অর্থ প্রয়োজন তাহা কেবল গ্রামবাসীদের প্রদেয় মূল্য হইতে আসিবে না। বিভিন্ন স্তরের আর্থিক অবস্থার ভিত্তিতে মূল্য তথা মাসুলের বিভিন্ন হারও স্থির করা যাইতে পারে। যাঁহাদের আদৌ সঙ্গতি নাই, তাঁহাদের সরাসরি প্রয়োজনীয় ভর্তুকিও সরকারি কোষাগার হইতে দেওয়া যাইতেই পারে। কিন্তু মূল্য প্রদান গ্রামবাসীদের মধ্যে ক্রেতার অধিকারের বোধ জন্মাইবে, যাহা তাহাকে পরিষেবার মান এবং নিয়মানুবর্তিতার বিষয়ে সজাগ করিবে, প্রয়োজনে প্রতিবাদ করিবার পথ সুগম করিবে। কোনও পরিষেবার জন্য সকলকে সমান মূল্য দিতে হইলে তাহা আর রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের বিষয় হইয়া থাকে না, সরকারি কর্মীদের সদিচ্ছার উপরও নির্ভর করিতে হয় না, তাহা পরিষেবা প্রদানকারী এবং প্রাপকের বোঝাপড়ার বিষয় হইয়া ওঠে। এই নাগরিক অধিকার অবশ্যই গ্রামবাসীরও প্রাপ্য।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.