কাজিয়ায় উত্তপ্ত কেরল সিপিএমের অশান্তিতে আরও ইন্ধন পড়ল! বিরোধী দলনেতা ভি এস অচ্যুতানন্দনকে ‘বার্তা’ দিতে তাঁর দফতরের সঙ্গে যুক্ত তিন জনের কাছ থেকে ‘ব্যাখ্যা’ চেয়ে পাঠাল সিপিএম। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দলের ভিতরের খবর তাঁরাই ‘ফাঁস’ করে দিচ্ছেন!
পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বাধীন কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী ওই সিদ্ধান্তের কথা মঙ্গল ও বুধবার দলের দু’দিনের রাজ্য কমিটির বৈঠকে জানিয়ে দিয়েছে। প্রত্যাশিত ভাবেই, রাজ্য কমিটির বৈঠকে একাধিক সদস্য গত এক মাসে টি পি চন্দ্রশেখরন-হত্যার পরবর্তী সময়ে ভি এসের নানা আচরণের প্রবল সমালোচনায় মুখর হয়েছেন। তবে সরাসরি ভি এসের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা এখনও নেননি বিজয়নেরা। পরিবর্তে তাঁর সহযোগী তিন জনকে অভিযোগের কাঠগড়ায় তুলে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকেই ‘কড়া বার্তা’ দেওয়া হয়েছে। দলেরই একাংশের মতে, খবর ‘ফাঁস’ করে দেওয়ার অভিযোগে যে ভাবে ওই তিন জনের ‘ব্যাখ্যা’ তলবের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজয়নেরা, তাতে স্পষ্ট সিপিএম এখনও ভাবনা-চিন্তা এবং কাজকর্মে স্তালিন-সুলভ ‘লৌহ যবনিকা’র জমানা থেকে বেরোতে পারেনি!
|
ভি এস অচ্যুতানন্দন |
টি পি-হত্যাকে ঘিরে বিতর্কের মাঝেই সিপিএমকে ‘বিড়ম্বনা’য় ফেলেছিলেন রাজ্য কমিটির সদস্য তথা ইদুক্কি জেলার সম্পাদক এম এম মণি। জনসমক্ষেই তাঁর মন্তব্য ছিল, ভিন্ন মতাবলম্বীদের ‘নিকেশ’ করে দেওয়ার রেওয়াজ কমিউনিস্ট পার্টিতে আছে। তাঁর ওই মন্তব্য ঘিরে দেশ জুড়ে বিতর্ক হয়। সিপিএমের পলিটব্যুরোও কেরল রাজ্য নেতৃত্বকে মণির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছে। সিপিএম সূত্রের খবর, তাঁকে শো-কজ করা হচ্ছে। তাঁর জবাবদিহি এবং তার ভিত্তিতে রাজ্য নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পর্যন্ত মণিকে জেলা সম্পাদকের পদ থেকে ‘ছুটি’তে যেতেও
বলা হবে। তবে ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করার আগে কেন্দ্রীয় কমিটির ‘অনুমোদন’ নিয়ে রাখতে চান বিজয়নরা। প্রসঙ্গত, পলিটব্যুরোর তরফে এস আর পিল্লাই তিরুঅনন্তপুরমে রাজ্য কমিটি ও সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে ছিলেন। তবে বিদেশে থাকায় ওই রাজ্য থেকে পলিটব্যুরোর আর এক সদস্য এম এ বেবি বৈঠকে ছিলেন না। সিপিএম সূত্রের ইঙ্গিত, আগামী ৯-১০ জুন দিল্লিতে দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম বৈঠক কেরলের যাবতীয় বিষয়ে তপ্ত হতে পারে। ‘পর্যবেক্ষক’ হিসেবে সেখানে মতামত জানানোর কথা পিল্লাইয়ের।
প্রাক্তন সিপিএম এবং পরবর্তী কালে আরএমপি নেতা টি পি খুন হওয়ার পর কেরল সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিজয়ন এবং বিরোধী দলনেতা ভি এসের বিবৃতির লড়াই বাধে। যার জেরে দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটকে চিঠি লিখে কেরলের রাজ্য নেতৃত্বে আমূল রদবদলের দাবি জানান ভি এস।
সেই চিঠির কথা বাইরে ‘ফাঁস’ হয়ে যাওয়ার ঘটনাকে ভাল ভাবে নেয়নি বিজয়ন-শিবির। রাজ্য নেতৃত্বের তরফে রীতিমতো একটি কমিটি গড়া হয় ওই বিষয়ে খোঁজখবর করতে! তাদেরই সুপারিশের ভিত্তিতে ভি এসের প্রেস সচিব কে বালকৃষ্ণন, অতিরিক্ত ব্যক্তিগত সচিব ভি কে শশীধরন এবং ব্যক্তিগত সহায়ক এ সুরেশের ‘ব্যাখ্যা’ জানতে চাওয়া হচ্ছে। ভি এস ২০০৬ সালে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর দলই ওই তিন জনকে তাঁর দফতর চালানোর কাজে যুক্ত করে।
তিরুঅনন্তপুরম থেকে কেরলের এক রাজ্য নেতার বক্তব্য, “রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির কাছে ওঁরা বক্তব্য জানাবেন। সেই অনুযায়ী পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” এমনিতে প্রকাশ্যে মুখ খোলার ক্ষেত্রে ভি এস নিজেই কখনও ‘সতর্ক’ নন। বিজয়ন-শিবিরের বরাবরের দাবি, তাঁর ‘ঘনিষ্ঠ’ লোক জনদের দিয়ে অনেক সময় দলের ভিতরের খবর ‘ফাঁস’ করে দেওয়া হয়। তবে এ বারই প্রথম সেই অভিযোগে ‘আনুষ্ঠানিক’ ভাবে কোনও পদক্ষেপ করল সিপিএম। |