রাষ্ট্রপতি ভোটের আগে তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে বিরোধ যখন যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলছেন কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় নেতারা, তখন সংস্কারের প্রশ্নে তাঁকে বিঁধলেন দলেরই এক মুখ্যমন্ত্রী। যোজনা কমিশনের বৈঠকে যোগ দিতে দিল্লি এসে অসমের কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ প্রশ্ন তুলেছেন, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর জন্য তাঁর রাজ্যে বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি থমকে যাবে কেন? ঘটনাচক্রে এ দিনই বিমান পরিবহণ ক্ষেত্রে বিদেশি লগ্নির ব্যাপারে সম্মতি আদায় করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আলোচনায় বসার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ।
খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি দরজা খুলে দেওয়ার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েও মূলত মমতার আপত্তিতেই শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসতে হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারকে। গগৈ আজ বলেন, “মমতা বিদেশি লগ্নি চাইছেন না, সেটা তাঁর সিদ্ধান্ত।
কিন্তু আমি একটা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বিদেশি লগ্নি চাইতেই পারি। মমতা আমার সেই অধিকারে হস্তক্ষেপ করতে পারেন না।”
বস্তুত, কেন্দ্রও এই কথাই বলছে। তাদের বক্তব্য, তারা নীতিগত ছাড়পত্র দিলেও কোনও রাজ্য চাইলে তার এলাকায় খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির অনুমতি না-ই দিতে পারে। অতএব কোনও একটি বা দু’টি রাজ্যের আপত্তির কারণে নীতিগত সিদ্ধান্ত আটকে রাখা উচিত নয়। কিন্তু শরিক হিসেবে তৃণমূলকে চটানোর সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের পক্ষে নেওয়া কঠিন। বিশেষ করে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে।
তাই যুক্তি দিলেও কার্য ক্ষেত্রে থমকেই রয়েছে মনমোহন সিংহের সরকার।
বিমান ক্ষেত্রে বিদেশ লগ্নিতেও আপত্তি রয়েছে মমতার। এই প্রশ্নেও সংঘাতের পথে না হেঁটে তাঁকে বুঝিয়ে সুজিয়ে রাজি করতে চাইছে কেন্দ্র। গত কাল কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর সঙ্গে বৈঠকে তৃণমূলের আপত্তির প্রসঙ্গটি তুলেছিলেন অজিত। কংগ্রেস সূত্রের খবর, সনিয়াই তাঁকে মমতার সঙ্গে আরও এক বার আলোচনায় বসার পরামর্শ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে কংগ্রেসের তরফেও তৃণমূলকে বোঝানোর চেষ্টা করা হবে বলে বিমানমন্ত্রীকে জানিয়েছেন সনিয়া। আজ এই প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অজিত বলেন, “বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এক বার কথা হয়েছে। আরও এক বার কলকাতায় গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলব।”
বিমান পরিষেবায় ৪৯ শতাংশ প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির প্রস্তাব দীর্ঘদিনের। অজিত-সহ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের অনেকেই মনে করেন, সেই সংস্কারের সিদ্ধান্ত নিতে পারলে আরও বেশি বিদেশি বিনিয়োগ এসে চাঙ্গা হবে বাজার।
তবে এতে তীব্র আপত্তি বামেদের। তাঁদের মতে, এতে রাষ্ট্রায়ত্ত এয়ার ইন্ডিয়া আরও সঙ্কটে পড়বে। একই মত তৃণমূলেরও। কিন্তু এক মাস ধরে চলা এয়ার ইন্ডিয়ার ধর্মঘটে কেন্দ্র তিতিবিরক্ত। মন্ত্রিসভার সিংহভাগ কংগ্রেস সদস্যেরই মত, এয়ার ইন্ডিয়ার বিলগ্নিকরণ করা হোক।
কিন্তু তাতে রাজনৈতিক বাধা আসবে। কেন্দ্র তাই এখনই এয়ার ইন্ডিয়ার বিলগ্নিকরণের প্রস্তাব না দিলেও বিমান পরিষেবায় প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নির জন্য সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তা ছাড়া, এ জন্য ঘরোয়া বিমানসংস্থাগুলিরও প্রবল চাপ রয়েছে।
বিমান মন্ত্রক সূত্রে বলা হচ্ছে, অজিত সিংহ মমতাকে এটাই বোঝানোর চেষ্টা করবেন যে, প্রত্যক্ষ বিদেশি লগ্নি এলে বিমান পরিষেবার মান বাড়বে। তার সুফল পাবেন মানুষ। তবে শেষ পর্যন্ত মমতা এ ব্যাপারে সম্মতি দেন কি না, সেটাই দেখার। |