পড়ুয়াদের পরীক্ষাভীতি কাটাতে মাধ্যমিক স্তরে পাশ-ফেল ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিল কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। কিন্তু তাদের সেই নীতি এখন ব্যুমেরাং হয়ে ফিরছে। গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য একটি কমিটি গড়ছে ওই মন্ত্রক। শুধু তা-ই নয়, কমিটি সুপারিশ করলে প্রয়োজনে পাশ-ফেল ব্যবস্থা রদের নীতিতে কিছু পরিবর্তন আনা হতে পারে বলেও মন্ত্রকের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।
সেন্ট্রাল বোর্ড অফ সেকেন্ডারি এডুকেশন (সিবিএসই)-এর অধীন স্কুলে মাধ্যমিকের সমতুল পরীক্ষা ঐচ্ছিক করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার অধিকার আইন বলবৎ করার সঙ্গে সঙ্গে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল ব্যবস্থা রদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এতে আখেরে ছাত্রছাত্রীদের উপকার হচ্ছে কি না, প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েই। অনেকের মতে, এ ভাবে পরীক্ষা ব্যবস্থা তুলে দেওয়া বা মাধ্যমিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষাকে ঐচ্ছিক করে দেওয়ার জেরে বহু পড়ুয়ার মধ্যে গা-ছাড়া ভাব, পড়াশোনার প্রতি অনাগ্রহ লক্ষ করা যাচ্ছে।
আজ দিল্লিতে সেন্ট্রাল অ্যাডভাইসরি বোর্ড অফ এডুকেশন (ক্যাবে)-এর বৈঠকে বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ও শিক্ষাসচিবেরা এই অভিযোগে সরব হওয়ায় শেষ পর্যন্ত বিষয়টি খতিয়ে দেখতে কমিটি গড়ার সিদ্ধান্ত নেয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। কমিটির নেতৃত্বে থাকবেন হরিয়ানার শিক্ষামন্ত্রী গীতা ভুক্ষল। বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষাবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও থাকবেন ওই কমিটিতে। তিন মাসেই কমিটি রিপোর্ট দেবে মন্ত্রককে।
সিবিএসই-র সব স্কুলে মাধ্যমিক পর্যায়ের পরীক্ষা ঐচ্ছিক করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক। তাদের যুক্তি ছিল, পরীক্ষার ভীতি না-থাকলে স্কুলের প্রতি, লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ বাড়বে পড়ুয়াদের। যদি কেউ নিজেকে যাচাই করার জন্য দশম শ্রেণির পরীক্ষা দিতে চায়, তা হলে সে দিতেই পারে। কিন্তু তা অন্যান্য বোর্ডের মতো পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হবে না। আজ ক্যাবের বৈঠকে এই বিষয়টি তুলে ধরেন বিভিন্ন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীরা। তাঁদের বক্তব্য ছিল, শিক্ষার অধিকার আইন প্রণয়নের দু’বছর পরের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেখা যাচ্ছে, পাশ-ফেল ব্যবস্থা তুলে দেওয়ায় ভাল ফল করার প্রবণতাই হারিয়ে যাচ্ছে পড়ুয়াদের মধ্যে। প্রতিযোগিতা না-থাকায় পড়াশোনা করার ইচ্ছাও কমছে তাদের। প্রথম শ্রেণি থেকে একেবারে দশম শ্রেণি পর্যন্ত পরীক্ষা ব্যবস্থা তুলে দেওয়ার যে-নীতির দিকে কেন্দ্রীয় সরকার এগোতে চায়, সেটা যদি গোটা দেশে কার্যকর হয়, তা হলে পরবর্তী পর্যায়ে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় বসার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের মানসিক সমস্যা হতে পারেও বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে।
বর্তমানে শিক্ষার অধিকার আইনের নিয়ম অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত এমনিতেই পাশ-ফেল প্রথা নেই। শিক্ষা ব্যবস্থাকে চাপমুক্ত করতে এবং ছাত্রছাত্রীদের মন থেকে পরীক্ষাভীতি কাটাতে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বার্ষিক পরীক্ষা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন কপিল সিব্বল। তাঁর পরিকল্পনা ছিল, প্রাথমিক ভাবে ওই নীতি চালু হবে সিবিএসই বোর্ডে। তার পরে রাজ্যগুলিও ধীরে ধীরে ওই নীতি গ্রহণ করবে। কিন্তু আজ ক্যাবের বৈঠকে বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিরা স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে গা-ছাড়া মনোভাবের প্রতিফলন ঘটছে বলে অভিযোগ তোলায় কপিলের ওই নীতির বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠে গেল বলে মনে করছে মন্ত্রকেরই একাংশ। |