মনোনয়ন পেশের শেষ দিনেও কন্নৌজের লোকসভা উপনির্বাচনের প্রস্তুতিপর্ব ঘিরে রইল পরপর নাটক। এই আসনেই প্রার্থী হয়েছেন ডিম্পল যাদব মুলায়ম সিংহের পুত্রবধূ।
ডিম্পলের বিরুদ্ধে তারা প্রার্থী দেবে না বলে কালই জানিয়ে দিয়েছিল কংগ্রেস। কারণটা সহজবোধ্য। বর্ষীয়ান সমাজবাদী নেতার সঙ্গে বন্ধুত্ব বাড়াতে চাইছে কংগ্রেস। কিন্তু আজ এক দিকে মুলায়মের প্রতিপক্ষ মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি জানায়, তারাও কন্নৌজের উপনির্বাচনে প্রার্থী দেবে না। অন্য দিকে, কাল প্রার্থী না দেওয়ার কথা জানিয়েও আজ শেষ মুহূর্তে ওই আসনে এক প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে বিজেপি। তার কিছু ক্ষণের মধ্যেই তারা অভিযোগ করে, সপা-র দুষ্কৃতীদের বাধায় তাদের প্রার্থী জগদেব সিংহ যাদব মনোনয়নই জমা দিতে পারেননি।
কাল কন্নৌজে প্রার্থী না দেওয়ার কথা ঘোষণার সময়ে বিজেপি বলেছিল, রাজ্যের আসন্ন পুরভোটেই তারা মনোনিবেশ করতে চায়। এর পর আজ আচমকা প্রার্থীর নাম ঘোষণা যেমন করা হয়, তেমনই সপা-র ‘বাধায়’ তাঁর মনোনয়ন জমা দিতে না পারার অভিযোগও তোলা হয় কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই। পরে বিজেপির মুখপাত্র শাহনওয়াজ হুসেন বলেন, “মনোনয়ন জমা দিতে যাওয়ার সময়ে বিজেপি প্রার্থীকে বাধা দেওয়া হয়। এতে সমাজবাদী পার্টির আসল চেহারা বেরিয়ে পড়েছে। আমরা নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ জানাব।”
তবে আরও বড় নাটক হয়তো সপা-র বিরুদ্ধে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বসপা-র প্রার্থী না দেওয়াটা। উত্তরপ্রদেশের রাজনীতিতে তা যথেষ্ট বিস্ময়করও!
কেন প্রার্থী দিচ্ছে না মায়াবতীর দল? বসপা মুখপাত্রের বক্তব্য, “উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টির মাত্র তিন মাসের শাসনে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। হিংসার ঘটনা ঘটছে গোটা রাজ্যে। উন্নয়ন প্রকল্পের সব কাজ স্তব্ধ। এ দিকে মুলায়ম সিংহ রাজ্যবাসীকে বলছেন, তাঁর ছেলের সরকারকে ছ’মাস সময় দিতে!” প্রশ্ন হল, এই পরিস্থিতিতেই তো আরও বেশি করে সপা-র বিরুদ্ধে প্রার্থী দেওয়া উচিত! অথচ মজার কথা, এ সবের কারণ ব্যাখ্যায় না গিয়ে বসপার মুখপাত্র বলেন, “মুলায়ম স্বজনপোষণ নিয়েই ব্যস্ত। ডিম্পলকে প্রার্থী করায় তা প্রমাণিত। তাঁদের কাছে উন্নয়ন মানে পরিবারের মুনাফা। সপা-র এমন নীতির মুখোশ খুলে দিতে, আবার একই সঙ্গে মুলায়মের আর্জির পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের এই প্রার্থী না দেওয়ার সিদ্ধান্ত।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, আসলে বিপুল পরাজয় এড়াতেই বসপা-র এই সিদ্ধান্ত। বসপা অতীতে রাজ্যের বহু নির্বাচনেই প্রার্থী দেয়নি। ২০০৯-এ লোকসভা ভোটের ঠিক আগে দশটি বড় শহরে পুরভোটে প্রার্থী দেননি মায়া। এর নেপথ্যে তাঁর নানা কৌশলগত সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু এ বারের কৌশল স্রেফ সম্ভাব্য পরাজয় এড়ানো বলেই বসপা-সূত্রের বক্তব্য। ২০০৯-এ ফিরোজাবাদ লোকসভার উপনির্বাচনে ডিম্পল যখন প্রার্থী হয়েছিলেন, তখন কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে প্রার্থী দিতে ছাড়েনি বসপা। সে বার কংগ্রেস প্রার্থী রাজ বব্বরের কাছে ডিম্পল তো বটেই, বসপা-ও পরাস্ত হয়। কিন্তু তখন সপা ছিল রাজ্যে বিরোধী আসনে। আর এখন ডিম্পলের স্বামী অখিলেশ যাদব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। বিধানসভা ভোটে একার ক্ষমতায় লখনউ দখল করেছে সপা। তা ছাড়া অখিলেশের স্ত্রী প্রার্থী হওয়ায় গোটা দলই প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।
কংগ্রেস-বিজেপি-বসপা নেই, ডিম্পলের ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ বলতে সংযুক্ত সমাজবাদী পার্টির জনৈক প্রার্থী। অখিলেশ-পত্নীর সংসদে অভিষেকের রাস্তাটা তাই যথেষ্ট মসৃণই দেখাচ্ছে। |