রক্তের সম্পর্কের বাইরেও সল্টলেকের জমি হস্তান্তরের সরকারি সিদ্ধান্তে অশনি-সঙ্কেত দেখছেন ওই উপনগরীর অনেক বাসিন্দা। এর ফলে সল্টলেক থেকে মধ্যবিত্তদের উৎখাত হওয়ার আশঙ্কায় সরকারি সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে আদালতের দ্বারস্থ হবে বলেও হুমকি দিয়েছে বাসিন্দাদের একাধিক সংগঠন। এই ব্যাপারে তারা সুনন্দ সান্যালের মতো কিছু বিশিষ্ট জনকেও পাশে পেয়ে গিয়েছে। তবে ওই সব সংগঠনের এই মনোভাবের প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিধাননগর পুরসভার চেয়ারপার্সন কৃষ্ণা চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “গোপনে জমি হস্তান্তর তো চলছিলই। তখন ওঁরা কী করছিলেন?”
মঙ্গলবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সল্টলেকে জমির নিরঙ্কুশ মালিকানা দেওয়া হবে না ঠিকই। তবে রক্তের সম্পর্ক নেই, এমন ব্যক্তিকেও জমির ‘লিজহোল্ড’ হস্তান্তরের অধিকার পাবেন বর্তমান লিজ-মালিকেরা। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ জানিয়ে সল্টলেক সিটিজেন্স ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক ভূপেন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “বাম আমলে ঘুরপথে বিধাননগরের প্রায় ছ’হাজার প্লট হস্তান্তরিত হয়েছে। কিন্তু তৃণমূল সরকারের এই সিদ্ধান্তে বাকি প্লটগুলিও আরও দ্রুত চলে যাবে অর্থবানদের হাতে। আমরা গণ-আন্দোলন ও আইনি পথে এর প্রতিবাদ করব।” বিধাননগরের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অমিতাভ মজুমদারের কথায়, “সরকার এ ভাবে জমি হস্তান্তরের ছাড়পত্র দেওয়ায় বাঙালি মধ্যবিত্তদের বিপদ বাড়বে। অর্থবানদের চাপে বিধাননগরে তাঁদের বাস উঠল বলে! প্রয়োজনে এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা আদালতে যাব।” বিধাননগর (সল্টলেক) ওয়েলফেয়ার সোসাইটির সম্পাদক কুমারশঙ্কর সাধু বলেন, “আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেব। তবে বাসিন্দাদের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত রূপায়ণ করলেই ভাল হয়। নইলে অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।”
জমি হস্তান্তরের সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন বিশিষ্ট জনেরাও। একদা তৃণমূলের ঘনিষ্ঠ বিশিষ্ট জনেদের অন্যতম, অধ্যাপক সুনন্দ সান্যাল বুধবার বলেন, “রাজ্য সরকার এটা ঠিক করল না। এর ফলে প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী বিধানচন্দ্র রায়ের পরিকল্পনাই বিফলে যাবে। এর বিরুদ্ধে কেউ আইনি ব্যবস্থা কিংবা গণ-আন্দোলনের পথে গেলে আমি তাঁদের পাশেই থাকব।”
বাসিন্দা ও বিশিষ্ট জনেদের এই প্রতিবাদের জবাবে পুরপ্রধান কৃষ্ণাদেবী স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন, বামফ্রন্টের জমানায় সরকারি স্তরে সিদ্ধান্ত ছাড়াই সল্টলেকে জমির হাতবদল চলছিল। তিনি বলেন, “বাম সরকার এত দিন জমির গোপন হস্তান্তর আটকাতে পারেনি। আমরা জাতিগত প্রভেদ করি না। যাঁদের প্রয়োজন, তাঁরা এ বার আইনি পথে সহজে বাড়ি বিক্রি করতে পারবেন। যাঁদের প্রয়োজন, তাঁরা কিনবেন।”
মন্ত্রিসভার মঙ্গলবারের সিদ্ধান্তের পরে এ দিন সংশ্লিষ্ট ব্যবস্থার ‘নোডাল অথরিটি’, রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরে তৎপরতা শুরু হয়ে গিয়েছে। ওই দফতর সূত্রের খবর, ইতিমধ্যে সল্টলেকে চার হাজারেরও বেশি জমি অবৈধ ভাবে হস্তান্তরিত হয়েছে। আগে সেগুলির দিকেই নজর দেওয়া হবে। এর ফলে রাজস্ব বাবদ কমপক্ষে ৮০০ কোটি টাকা সরকারের ঘরে আসবে বলে ওই দফতরের দাবি। |