লাগোসে বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু
জন্মদিনে কলকাতার ফ্ল্যাটে আর ফেরা হল না পিঙ্কুর
ঠিক এক মাস আগে নিজের শহরে লেক গার্ডেন্সের ফ্ল্যাটে ফুরফুরে মেজাজে ছুটি কাটাচ্ছিলেন ‘পিঙ্কু’। এখন নাইজিরিয়ার লাগোস থেকে তাঁর কফিনবন্দি দেহ ফেরত আসার জন্য হন্যে হয়ে অপেক্ষা করছেন প্রিয়জনেরা।
গত ৩ জুন লাগোসে জনবহুল এলাকায় ডানা এয়ারলাইন্সের এমডি-৮৩ বিমান ভেঙে প্রাণ হারান ১৯৩ জন। মহেন্দ্র সিংহ রাঠৌর ওরফে পিঙ্কু ওই বিমানেরই সহকারী চালক ছিলেন। শেষ বার দেশে ছুটি কাটাতে এসেও ৩৫ ছুঁই ছুঁই তরুণ দিন পাঁচেক নিখাদ ‘বিশ্রাম’ নিতে গিয়েছিলেন লেক গার্ডেন্সে বৃদ্ধ মা-বাবার কাছে। তাঁর দেহ শনাক্তকরণের জন্য বাবা ইন্দ্র সিংহ রাঠৌর ও ছোট ভাই রাজেন্দ্র দিল্লি আর লাগোসে সংশ্লিষ্ট কর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন। রিজো কে এল্ডহোস নামে কেরলের বাসিন্দা আর এক জন ভারতীয়ও ওই বিমান দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন।
দাদা নেই। খবরটা পেয়েই দিল্লিতে ডিএনএ পরীক্ষার নমুনা পৌঁছে দিয়েছেন মহেন্দ্রর ভাই রাজেন্দ্র। লাগোস থেকে
মহেন্দ্র সিংহ রাঠৌর
পাঠানো ডিএনএ পরীক্ষার নমুনাও দিল্লিতে আসার কথা। দুই ভাইয়ের ডিএনএ-র নমুনা মেলানোর পরেই মহেন্দ্রর কফিনবন্দি দেহ লাগোস থেকে দিল্লি পাঠানো হবে। কিন্তু এখনও লাগোস থেকে ডিএনএ পরীক্ষার নমুনাই আসেনি। সুতরাং শেষকৃত্যের জন্য বড় ছেলের দেহ কবে এ দেশে আসবে, সেটাই বুঝতে পারছেন না ইন্দ্র সিংহ আর তাঁর স্ত্রী পুষ্পা। সোমবার ছেলের খবরটা পাওয়ার পরেই কলকাতা ছেড়ে বিকানিরে পূর্বপুরুষের ভিটেয় রওনা দিয়েছিলেন মহেন্দ্রর মা-বাবা। সেখানে তাঁদের পুত্রবধূ ইশা ও নাতি ছ’বছরের সূর্যও রয়েছে।
২৬ বছরের রিজো কে এল্ডহোস পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। লাগোসে একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন তিনি। তাঁর দেহ এ দেশে ফেরার জন্যও এখন অপেক্ষায় পরিজনেরা। ইতিমধ্যে এ দেশের কূটনীতিকেরা ওই দু’জনের দেহ দ্রুত দেশে ফেরাতে লাগোসে তদ্বির করে চলেছেন। কিন্তু দুর্ঘটনার পরে উদ্ধারকাজ এখনও চলছে সেখানে। বৃষ্টির জন্য ধ্বংসস্তূপ সরাতেও সমস্যা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট বিমান সংস্থা ডানা এয়ারওয়েজের লাইসেন্স বাতিল করে দিয়েছে নাইজিরিয়ার বিমান মন্ত্রক।
কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুলের ছাত্র মহেন্দ্রর বন্ধুরা বিশ্বাস করতে পারছেন না তাঁদের প্রিয় ‘পিঙ্কু’র এই পরিণতির কথা। ২০০১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি কলকাতা বিমানবন্দরেই একটি বেসরকারি বিমান সংস্থার নিরাপত্তা বিভাগের কর্মী হিসেবে চাকরিজীবন শুরু হয়েছিল পঙ্কজ পাঞ্চোলি ও মহেন্দ্রর। রাজ্যপালের কাছ থেকে সোনার পদক জয়ী কৃতী এনসিসি ক্যাডেট মহেন্দ্রকে অবশ্য তার আগেই চিনতেন পঙ্কজ। দিল্লিতে কর্মরত পঙ্কজ বুধবার বলছিলেন, “ও বরাবরই পাইলট হতে চাইত। তাই ফ্লোরিডায় তালিম নিতে চলে গেল।” আর এক বন্ধু মুম্বইয়ে একটি বিমানসংস্থায় কর্মরত সিদ্ধার্থ চট্টোপাধ্যায়েরও মনে পড়ছে, পিঙ্কুর সঙ্গে পার্ক স্ট্রিট বা লেক গার্ডেন্সে অজস্র আড্ডার স্মৃতি। “ও একেবারে ঝরঝরে বাংলা বলত। খুব ঝামেলাতেও দিব্যি হাসিখুশি থাকত। কখনও সহজে হার মানত না।” মহেন্দ্র প্রসঙ্গে বললেন সিদ্ধার্থ।
গত নভেম্বরে রাঠৌর পরিবার শেষ বার মিলিত হয়েছিল কলকাতায়। মহেন্দ্রর ভাই রাজেন্দ্র বলছিলেন, “দাদা বলত, সবাই মিলে এক সঙ্গে বড় একটা বাড়িতে থাকব। দিল্লি, গুড়গাঁও বা কলকাতা--- যেখানে সুবিধে সেখানেই বাড়ি খোঁজার কথা বলত।” বিমান দুর্ঘটনার আগের দিনই কলকাতায় মা-বাবার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল বড় ছেলের। সেটাই শেষ। মহেন্দ্র ওরফে পিঙ্কুর জন্মদিন ১৯ জুলাই। পিঙ্কুর বাবা বলছিলেন, “ছেলেটা বলেছিল, জন্মদিনে ছুটি নিয়ে আমাদের কাছে আসবে। তখন কী করে জানব, ওর দেহ দেশে ফেরার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.