|
|
|
|
ভোট মিটতেই বিক্ষিপ্ত অশান্তি নানা এলাকায় |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দুর্গাপুর |
পুরভোট মিটতেই হামলা-পাল্টা হামলার অভিযোগে অশান্তি ছড়াল দুর্গাপুরে। ভোটের ফল বেরোনোর পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত শহরের নানা এলাকায় বিক্ষিপ্ত গণ্ডগোল হয়। ধোবিঘাটে চার জন সিপিএম সমর্থক ও এক তৃণমূল সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুর হয় বলে অভিযোগ। বেনাচিতির মসজিদ মহল্লায় একটি ক্লাব দখলের অভিযোগকে কেন্দ্র করে চাঞ্চল্য ছড়ায়। শ্যামপুরে তৃণমূল ও সিপিএম সমর্থকদের মধ্যে ইট ছোড়াছুড়ি হয়। পুলিশ জানায়, পরিস্থিতি আপাতত নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
মঙ্গলবার গণনা শেষ হওয়ার পরে দিনের বেলা কোনও গণ্ডগোল হয়নি। সন্ধ্যায় প্রথম অশান্তি শুরু হয় ৪২ নম্বর ওয়ার্ডের শ্যামপুরে। সেই সময়ে বিজয় মিছিল বের করে তৃণমূল। অভিযোগ, সেই মিছিল থেকে স্থানীয় সিপিএম কার্যালয় ও সিপিএম সমর্থকদের বাড়ি লক্ষ করে ইট-পাটকেল ছোড়া হয় ও গালিগালাজ করা হয়। এর প্রতিবাদে মিছিল বের করে সিপিএম। দু’পক্ষের মধ্যে ইটবৃষ্টি শুরু হয়ে যায়। খবর পেয়ে কোকওভেন থানা থেকে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। |
|
রাত ৯টা নাগাদ ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের মসজিদ মহল্লার একটি ক্লাবের দখলের চেষ্টার অভিযোগকে কেন্দ্র করে ফের বিবাদ বাধে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এত দিন ওই ক্লাবের কর্মকাণ্ডের রাশ ছিল স্থানীয় সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের হাতে। কিন্তু মঙ্গলবার পুরভোটের ফল বেরোতে দেখা যায় এই ওয়ার্ড থেকে বিজয়ী হয়েছেন তৃণমূল প্রার্থী অসীমা চক্রবর্তী। অভিযোগ, রাতে তৃণমূলের কিছু কর্মী-সমর্থক ক্লাবের দখল নিতে চান। সিপিএম সমর্থকেরা তাতে বাধা দেন। সিপিএমের অভিযোগ, এর পরেই এক দল তৃণমূল সমর্থক ক্লাবে ঢুকে চেয়ার-টেবিল উল্টে দেয়। তবে দ্রুত পুলিশ চলে আসায় গণ্ডগোল বিশেষ পাকেনি। গভীর রাত পর্যন্ত এলাকায় পুলিশি টহল ছিল।
রাতে অশান্তি বাধে ১ নম্বর ওয়ার্ডের ধোবিঘাটে। এই ওয়ার্ডে জয়ী হয়েছেন সিপিএম প্রার্থী রীনা চৌধুরী। দলের স্থানীয় লোকাল কমিটির সদস্য তপন ভৌমিকের অভিযোগ, “ফল ঘোষণার পর থেকেই সিপিএম কর্মী-সমর্থকদের বাড়ি গিয়ে হুমকি দিচ্ছিল তৃণমূলের লোকজন। সন্ধ্যায় তৃণমূল আশ্রিত ১০-১২ জন দুষ্কৃতী চড়াও হয় আমাদের চার সমর্থকের বাড়িতে। বাড়ির ভিতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর করা হয়।” বুধবার সকালে এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির চালের টালি ভাঙা। দরজার তালা ভাঙা। তছনছ হয়ে পড়ে রয়েছে নানা জিনিসপত্র। বিপ্লব সরকার, মনোজ রজকদের দাবি, ঘটনার সময়ে তাঁরা বাড়িতে ছিলেন না। ফিরে দেখেন লণ্ডভণ্ড অবস্থা। মহম্মদ এলিম ও অশোক রজকেরা আবার জানান, ‘হামলার’ সময়ে তাঁরা সপরিবারে বাড়িতে ছিলেন। আতঙ্কে বাড়ি ছেড়ে চলে যান। |
|
রাতেই ধোবিঘাটে তৃণমূল কর্মী স্বপন বণিকের বাড়িতে এক দল দুষ্কৃতী ব্যাপক ভাঙচুর চালায় বলে অভিযোগ। স্বপনবাবুর দাবি, সিপিএম আশ্রিত দুষ্কৃতীরাই এই ঘটনা ঘটিয়েছে। তাঁর কথায়, “বিনা প্ররোচনায় ৭-৮ জন দুষ্কৃতী আমার বাড়িতে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। পিছনে ছিলেন সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরা।” সিপিএম অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছে। প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক বিপ্রেন্দু চক্রবর্তী বলেন, “ভোট পেরিয়ে যাওয়ার পরে যাতে হিংসা না ছড়ায়, প্রশাসনের কাছে সেই আবেদন জানিয়েছি আমরা। দুর্ভাগ্যের বিষয়, উল্টে আমাদেরই হামলাকারী বলে চিহ্নিত করা হচ্ছে।” ধোবিঘাটে দলের চার সমর্থকের বাড়িতে ‘হামলা’র ঘটনায় অভিযুক্তদের ধরার দাবি জানিয়েছেন তিনি। তৃণমূলের জেলা (শিল্পাঞ্চল) সভাপতি অপূর্ব মুখোপাধ্যায় পাল্টা দাবি করেন, ধোবিঘাটের ঘটনায় তাঁদের দলের কেউ জড়িত নন। তাঁর আরও দাবি, “বিধানসভা ভোটের পরে সিপিএমের উপরে কোনও হামলার ঘটনা ঘটেনি। পুর নির্বাচনের পরেও সেই পরিস্থিতি বজায় আছে।”
এডিসিপি (পূর্ব) শুভঙ্কর সিংহ সরকার জানান, গণ্ডগোলের খবর পেয়েই পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থা আয়ত্তে এনেছে। পরিস্থিতির উপরে নজর রাখা হচ্ছে। |
—নিজস্ব চিত্র। |
|
|
|
|
|