আসানসোলে মৃত ৬
বিকেলের হঠাৎ বৃষ্টিতে স্বস্তি ক্ষণিকের
য়েকদিন ধরে পুড়তে থাকা শিল্পাঞ্চলে কিছুক্ষণের জন্য হলেও স্বস্তি ফেরাল মেঘ-বৃষ্টি। হয়তো বাঁচিয়ে দিল কিছু প্রাণও।
মঙ্গলবারবার যেখানে শুধু আসানসোলেই ২২ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছিল, এ দিন তা নেমে আসে ছয়ে। দুর্গাপুরে মৃত্যুর কোনও খবর নেই। বুধবার দুপর থেকেই আকাশে মেঘ ঘনিয়েছিল। তার জেরে গরমের তীব্রতার মাত্রা নেমে এসেছিল কিছুটা। বিকেল পৌনে চারটে নাগাদ এক পশলা বৃষ্টি আর ঝোড়ো হাওয়াতে সাময়িক স্বস্তিতে ছিল আসানসোল শহর। আকাশে মেঘ দেখেই মানুষজন রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। বৃষ্টিতে ভিজে সাময়িক শীতল হওয়ার চেষ্টা করেন শহরবাসী। তবে মিনিট দশেক পর বৃষ্টি থেমে যেতেই আবার ফিরে আসে সেই চেনা গরম। দুর্গাপুর শিল্পাঞ্চলের তাপমাত্রা ছিল বেশ চড়া। সারাদিন ধরে প্রবল তাপপ্রবাহ চলেছে সেখানে। আকাশে মেঘ দেখা গেলেও বৃষ্টি পড়েনি এক ফোঁটাও।
ছায়া ঘনাল। দুপুরে দুর্গাপুর স্টেশনে ডিকিতেই মাথা গুঁজেছিলেন ট্যাক্সিচালক।
সামান্য বৃষ্টি হলেও গরমের জেরে এ দিন এড়ানো গেল না মৃত্যু। দুপুরের গরমের জেরে আসানসোলে ৬ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথেই এঁদের প্রত্যেকের মৃত্যু হয়েছে। গরমের কারণেই এই মৃত্যু বলে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসকদের অনুমান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের নাম অমৃত কোড়া (৪৭), রামবাবু সিংহ (৪৫), রসিদ খান (৪৭), মহম্মদ ইয়াসিন (৮২), বিশ্বনাথ সোরেন (৬২)। গরমের জেরে অসুস্থ হয়ে প্রায় ১৫ জন এ দিন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন বলে আসানসোল হাসপাতাল সূত্রে খবর।
আসানসোল মহকুমা হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, নরসমুদা কোলিয়ারির কর্মী অমৃতবাবু হাজিরা খাতায় সই করার জন্য রোদে দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। আসানসোল হাসপাতালে নিয়ে আসার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। ইসিএলের মুসলিয়া কোলিয়ারির কর্মী মধুসূদনবাবু বুধবার দুপুরে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ইসিএলের কাল্লা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে মৃতদেহের ময়না-তদন্ত করা হয়েছে। মাইথনের বাসিন্দা রামবাবু সিংহও এ দিন গরমে অসুস্থ হয়ে পড়লে আসানসোল হাসপাতালে আনার পথেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। রসিদ খানের বাড়ি সালানপুরে। অসুস্থ অবস্থায় আসানসোল মহকুমা হাসপাতালে আনার পথে মারা যান তিনি। হিরাপুর থানার আলমনগরের বাসিন্দা মহম্মদ ইয়াসিন (৮২) ও বারাবনির রাখাগড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা বিশ্বনাথ সোরেন (৬২) গরমে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁদের মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
বিকেলে ঝেঁপে নামল বৃষ্টি। আসানসোলের কাছারি রোডে ভিজলেন ওঁরা।
দুর্গাপুরে অবশ্য এ দিন গরমে অসুস্থ হয়ে কোনও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। তবে মঙ্গলবার দু’জন মারা যান।
গরমে শিল্পাঞ্চলের পরিস্থিতি সামলাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা। তিনি জানান, জেলার শিল্পাঞ্চলের হাসপাতালগুলিতে অতিরিক্ত কুলার, ফ্যানের ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ওআরএস এবং ওষুধ মজুত রাখা হয়েছে। চিকিৎসকদের সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। গরমে কি করতে হবে বা কি করা অনুচিত সেই সম্পর্কিত লিফলেট বিলি করার কাজও শুরু হয়েছে। তিনি জানান, প্রশাসনের তরফে অঙ্গনওয়ারি কেন্দ্রের কাজ সকালে সেরে ফেলার জন্য বলা হয়েছে। একশো দিনের কাজও একমাত্র সকালের পালিতেই করার কথা বলা হয়েছে সংশ্লিষ্ট দফতরকে। এদিন শহরের বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশদের ওআরএস বিতরণ করেন এডিসিপি (ট্রাফিক) ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। তিনি জানান, গরমে সুস্থ থাকতে মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় কর্মরত ট্রাফিক পুলিশদের পর্যাপ্ত ওআরএস দেওয়া হচ্ছে। কাজ করার সময় মাস্ক ও ছাতা ব্যবহার করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দুপুরে প্রয়োজন না পড়লে ট্রাফিক পুলিশদের ছায়ায় দাঁড়াতে বলা হয়েছে। আসানসোলের মেয়র তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, পুরসভার তরফে এলাকায় পর্যাপ্ত ওআরএস বিলি করা হচ্ছে। চিকিৎসকদের একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল সব সময়ের জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলেই তাঁরা ঘটনাস্থলে গিয়ে চিকিৎসা শুরু করবেন। এদিন পুরসভার তরফে বিভিন্ন এলাকায় পথচলতি মানুষদের ওআরএস মিশ্রিত পানীয় জল সরবরাহ করা হয়। আসানসোল চেম্বার অফ কমার্সের পক্ষ থেকেও শহরের জনবহুল অঞ্চলগুলিতে জলসত্র খোলা হয়েছে। ওআরএস মিশ্রিত জল সেখান থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।
ছবিগুলি তুলেছেন বিকাশ মশান ও শৈলেন সরকার।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.