থানা থেকে ব্যাঙ্কের দূরত্ব বড় জোর ৫০০ মিটার। অথচ সেই ব্যাঙ্কে ঢুকে গ্যাস কাটার দিয়ে ভল্ট কেটে ৫২ লক্ষ টাকা লুঠ করে পালিয়েছে দুষ্কৃতীরা। সোমবার রাতে বঙ্গীয় গ্রামীণ বিকাশ ব্যাঙ্কের মালদহের চাঁচল শাখায় ঘটনাটি ঘটেছে। এদিন সকালে ব্যাঙ্কে গিয়ে ঘটনার কথা জানতে পারেন কর্মীরা। থানার কাছেই কলেজ রোডে রাস্তার পাশে একটি ছোট মার্কেট কমপ্লেক্সের দোতলায় ভাড়ায় ওই ব্যাঙ্কটি রয়েছে। নৈশরক্ষীর পাশাপাশি নেই ভল্টের সাইরেন ব্যবস্থাও। ফলে মহকুমা সদরের গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা কী ভাবে কোনও সুরক্ষা ব্যবস্থা ছাড়াই চলছিল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পাশাপাশি, সদরের প্রাণকেন্দ্রে ওই সড়কে পুলিশি টহল থাকার কথা। সেক্ষেত্রে গ্যাসের সিলিন্ডার, যন্ত্রপাতি নিয়ে কিভাবে দুষ্কৃতীরা টহলদারী পুলিশের চোখ এড়িয়ে টাকা লুঠ করে পালাল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দুপুরে চাঁচলের আইসি ও এসডিপিওকে নিয়ে ব্যাঙ্কের ওই শাখায় তদন্তে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শ্যাম সিংহ। খবর পেয়ে চাঁচলে যান ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ম্যানেজার অশোক চক্রবর্তীও। |
ঘটনার জেরে ব্যাঙ্কের লেনদেন বন্ধ ছিল এদিন। মালদহের পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেছেন, “ব্যাঙ্কে এত টাকা রাখা হলেও তাদের নিজস্ব কোনও নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। ব্যাঙ্কের বিভিন্ন শাখায় আগেও দুষ্কৃতী হানার ঘটনা ঘটেছে। কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা হলেও ওরা সুরক্ষার কোনও ব্যবস্থাই করেনি। ব্যাঙ্ক কতৃপক্ষেরও গাফিলতি রয়েছে। যাইহোক পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।” পাশাপাশি পুলিশ সুপার জানান, টহলদারি পুলিশের নজর এড়িয়েও অনেক সময় অপরাধের ঘটনা ঘটে। দুষ্কৃতীরা পেছন দিক দিয়ে ঢুকেছিল। পুলিশ তো রাস্তা দিয়ে টহল দেয়। পুলিশ ও ব্যাঙ্ক সূত্রে জানা গিয়েছে, কোলাপসিবল গেট পার হয়ে কমপ্লেক্সের মাঝ বরাবর গিয়ে ব্যাঙ্কে ওঠার সিঁড়ি রয়েছে। কমপ্লক্সেটির পাশাপাশি রয়েছে দুটি বাড়ি। যার সামনে দোকান, পেছনে বাড়ি। তিনটি ছাদ লাগোয়া হওয়ায় অনায়াসে এক ছাদ থেকে অন্য ছাদে যাতায়াত করা যায়। ওই দুটি ভবনের কোনও একটি সিঁড়ি দিয়ে দুষ্কৃতীরা ছাদে উঠে ব্যাঙ্কের কাছে পৌঁছে যায়। লোহার গ্রিলের মূল দরজার পাশেই রয়েছে একটি জানালা। সেই জানালার পাল্লা কোনদিনই লাগানো হয়না। ব্যাঙ্কের যুক্তি, ভেতরে একটি আলমারি থাকায় তা লাগানো সম্ভব হয় না। এ ছাড়া লাগোয়া দুটি ভবনের যে কোনও একটি সিঁড়ি ব্যবহার করে অনায়াসে যে কেউ ব্যাঙ্কের সামনে পৌঁছে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে নিরাপত্তাহীনতার ওই দিকটি কেন ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের মাথায় ছিল না তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, ওই দিক দিয়ে অনায়াসেই সকলের চোখ এড়িয়ে যাতাযাত করা সম্ভব। ব্যাঙ্কের চাঁচল শাখার ম্যানেজার প্রদীপ সরকার কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ম্যানেজার অশোক চক্রবর্তী বলেছেন, “দুষ্কৃতীরা ভল্ট থেকে ৫২ লক্ষ লুঠ করে পালিয়েছে। ব্যাঙ্কের কোনও শাখাতেই নৈশরক্ষীর ব্যবস্থা নেই। একইভাবে ভল্টেও সাইরেনের ব্যবস্থা নেই। ফলে রাতে সমস্ত শাখা কার্যত অসুরক্ষিত থাকে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে সমস্যার কথা বারবার জানানো হয়েছে। তবে শাখাগুলিতে সিসিটিভি বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কয়েকমাসের মধ্যেই তা করা হবে।” |