বাবা বরুণসুন্দর ত্রিবেদী অঙ্কের শিক্ষক। মা সান্ত্বনাদেবী ভৌতবিজ্ঞানের। ওই দু’টি বিষয়ে স্ববর্ণার গৃহশিক্ষক ছিলেন তার বাবা-মা-ই। ফলে অঙ্ক না ভৌতবিজ্ঞান, কোন বিষয়ে মেয়ে বেশি নম্বর পাবে তা নিয়ে শিক্ষক দম্পতির মধ্যে কিঞ্চিৎ টানাপোড়েন ছিল। কান্দির রাজা মণীন্দ্রচন্দ্র উচ্চবালিকা বিদ্যালয় থেকে ৬৬৬ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে নবম হওয়া মেয়ে এ নিয়ে কোনও ‘পক্ষপাতিত্ব’ করেনি, ওই দু’টি বিষয়েই তার প্রাপ্ত নম্বর, একশোয় একশো। জেলায় তার নম্বরই সর্বোচ্চ। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা বুলবুল রায় বলেন, “সপ্তম শ্রেণিতেই বুঝতে পেরেছিলাম, স্ববর্ণা মাধ্যমিকে ভাল কিছু একটা করবে। তাই হল।” স্ববর্ণা বলে, “বাবা-মায়ের কাছে অঙ্ক ও ভৌত বিজ্ঞান ছাড়াও ইংরাজি পড়েছি। বাবার এক সহকর্মী আমাকে ভূগোল দেখিয়ে দিয়েছেন। বাংলা, ইতিহাস ও জীবন বিজ্ঞানের জন্য গৃহশিক্ষক ছিল। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১০ ঘণ্টা পড়েছি। বাকি সময় ঘুম, নাচ, গান শোনা ও টিভি দেখা বাদ দিইনি কিছুই।” স্কুল পাঠ্য বই-এর বাইরেও তাকে যে বিস্তর গপ্পের বই পড়েছে মেয়েটি। বাড়িতে প্রচুর বই। তবে দাদার মতো ইঞ্জিনিয়ার হতে চায় না সে। বলে, “আমার ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছে।”
|
প্রত্যাশা ছিল আরও। তবে ৬৬৮ যে খারাপ নয় তা মেনে নিচ্ছে মণিকর্ণিকা বিশ্বাস। পড়শি থেকে স্কুলের শিক্ষিকা সেরা ছাত্রীটির জন্য গর্বিত। এই রেজাল্টেই বেজায় খুশি তাঁরা। এ দিন দুপুরে স্কুলে মার্কশিট আনতে গিয়েছিলেন মণিকর্নিকার বাবা-মা দু’জনেই। ‘‘মেয়ের প্রিয় বিষয় ভৌত বিজ্ঞান আর তাতে একশয় একশ পেয়েছে’’, হাসতে হাসতে বলেন মণিকর্ণিকার বাবা বাসুদেববাবু। অঙ্কতেও একশো। ভবিষ্যতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়তে চাওয়া ছাত্রী তাক লাগিয়েছে কলা বিভাগেও। ইতিহাসে ৯১, ইংরেজিতে ৯২, হিন্দিতে ৯০। মণিকর্ণিকার মাধ্যমিকের ঝুলিতে এত নম্বরের রহস্য কি? বাবা-মায়ের মাঝখানে সোফায় বসে তার চটজলদি জবাব, ‘‘স্কুলের পড়ানোটা আমার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। তারপরেও নিজের প্রস্তুতির জন্য প্রতিটা বিষয়ের এক জন করে শিক্ষক ছিলেন। বাবা-মা’ও প্রয়োজনে দেখিয়েছেন পরীক্ষার আগে পড়ার বাইরে আর কিছু ভাবিনি।’’ সময়ের সব গান শোনে ফাঁকা সময়ে। মেয়েদেরও অনেক কিছু করার আছে বলে বিশ্বাস করে সে। তাই মণিকর্ণিকার স্বপ্ন একদিন সে আইএএস হবে। |