পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কেন এত শিশু রেফার’ (৯-৫) প্রসঙ্গে দু’চারটি কথা। পঃ বঃ সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ হিসাবে কলকাতার বাইরে এবং কলকাতায় বহু বছর কাজ করার সুবাদে স্বাস্থ্য পরিষেবা বিষয়ে কিছু কিছু স্বচ্ছ ধারণা হয়েছে। প্রথমত, কলকাতা ও কলকাতার বাইরে শিশু চিকিৎসা পরিকাঠামোর তফাত আকাশ-পাতাল। বর্তমানে কলকাতার কিছু কিছু সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সদ্যোজাত শিশু-চিকিৎসার ব্যবস্থাপনা বিশ্বমানের। |
একটি নবজাত শিশুর কোনও বড় সমস্যা দেখা দিলে স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ বা শিশু বিশেষজ্ঞ কেউ-ই দেখভালের দায়িত্ব নিজের ঘাড়ে রাখতে চান না। তাঁরা সবাই খুব ভাল ভাবে জানেন যে, জেলা হাসপাতালে শিশু চিকিৎসার যে ব্যবস্থা আছে তার তুলনায় কলকাতা মহানগরে মেডিক্যাল কলেজগুলোতে আছে অনেক বেশি ভাল ব্যবস্থাপনা। আর উচ্চমানের বেসরকারি হাসপাতালে তো আছেই। যার ফলে এখানে শিশুমৃত্যু রোধ করা অনেক সহজ।
স্বাস্থ্য ভবনের কর্তারা কিছু কিছু ফরমান জারি করেন শৃঙ্খলারক্ষার জন্য। কারণ, সেটাই তাদের দায়িত্ব। আর অধীনস্থ চিকিৎসক প্রাণের দায়ে, নির্বিঘ্নে থাকার জন্য, ঝামেলা এড়ানোর জন্য শিশু ‘রেফার’ করার সিদ্ধান্ত নেন। সে সব চলতেই থাকবে যত দিন না কলকাতার বাইরের হাসপাতালগুলিতে সদ্যোজাত শিশু চিকিৎসার পরিকাঠামো বদলাবে। যাঁরা মহকুমা বা জেলা হাসপাতালে কাজ করেছেন, তাঁরা জানেন যে, তাঁদের সুরক্ষা বলতে কিছু নেই। তাঁরা আরও জানেন যে, সামাজিক বা রাজনৈতিক নেতাদের নিত্যনৈমিত্তিক কত অন্যায় আবদার, জবরদস্তি, মাতব্বরি, অপমান নীরবে সহ্য করতে হয়। নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, পি জি হাসপাতাল, আর জি কর মেডিক্যাল কলেজে কাজ করার সময় দেখেছি, প্রতিদিন যে-সংখ্যায় ভর্তির উপযুক্ত মুমূর্ষু রোগী ‘রেফার’ হয়ে আসেন, তত শয্যা শুধু শিশু বিভাগ কেন, অন্য কোনও বিভাগেও নেই। কলকাতার যে কোনও হাসপাতালে ঢুকলেই বুঝতে পারবেন, কী পরিমাণ কষ্টের মধ্যে গরিব আত্মীয়স্বজনেরা হাসপাতালের রাস্তায় পলিথিনের ছাউনির নীচে দিনের পর দিন কাটাচ্ছেন। তখন এবং সময় সময় রোগীর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতাদের ‘মাসলম্যান’ যুক্ত হয়ে ‘ডাক্তার পেটানো’র কর্মসূচি পালন করতে দেখেছি। কিন্তু সেখানে এক/দুটি কোলাপসেবল গেট, সিকিউরিটি, পুলিশ ইত্যাদি সুরক্ষা বলয় অতিক্রম করবার পরই ঝামেলা করা সম্ভব হত। এখনও জেলা হাসপাতালগুলোতে সে সুরক্ষা নেই। একমাত্র সুরক্ষা চিকিৎসক। যদি তাঁর মানবিকতা, পরিষেবা, সমবেদনা, ভালবাসা, ভাল ব্যবহার দেখিয়ে ও ট্রিটমেন্ট দিয়ে স্থানীয় জনদরদি ডাক্তার হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে পারেন, তবেই। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ চিকিৎসক নীরবে কাজ করেন। জনসংযোগ বাড়ানোর কাজ করেন কম। সমস্যা এখানেই।
ডা. অবিনাশচন্দ্র রায়। কলকাতা-৮৯
|
তারাপীঠের বুকের উপর দিয়ে বয়ে চলা উত্তরবাহিনী দ্বারকা নদীর কী করুণ অবস্থা! নদীর দু’ধারের হোটেলের বর্জ্য জল, প্লাস্টিক, থার্মোকলের থালা-বাটি, পলিথিনের ক্যারিব্যাগ, চায়ের পেট কাপ, খৈনি, পানমশলা, বিস্কুট, কেকের রাংতা বা অ্যালুমিনিয়ম ফয়েল-সহ এক আবর্জনার স্তূপ। যত্রতত্র মলমূত্র-সহ শ্মশান নামক এক নারকীয় পরিবেশ। দ্বারকা নদী তার আপন গতিপথ হারিয়ে সরু সুতোর রূপ নিয়েছে। এমন একটি পর্যটন কেন্দ্রে লোক সমাগমের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দূষণের মাত্রা। অথচ একই সময়ে অন্যান্য রাজ্যের তীর্থক্ষেত্রে গিয়ে তফাতটা দেখে এসেছি। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সঞ্জীব রাহা। কৃষ্ণনগর, নদিয়া
|
বিশ্বজিৎ রায় ‘সন্তান=সম্পত্তি!’ শিরোনামে বৃদ্ধ পিতা-মাতার সঙ্গে সন্তান-সন্ততির সম্পর্ককে যে গাণিতিক সমীকরণের মোড়কে পরিবেশন করেছেন, তা এই সম্পর্কটির মূল সুরের পরিপন্থী। সন্তান প্রতিপালনকে ‘বিনিয়োগ’-এর দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার করার বিরোধিতা করেও শ্রীরায় বৃদ্ধ নির্বান্ধব পিতা-মাতাকে পিতৃত্ব/ মাতৃত্বের প্রতিদানস্বরূপ প্রয়োজনীয় অর্থ সরবরাহের মধ্যে সন্তানের দায়িত্ব ও কতর্ব্যকে সীমাবদ্ধ করে অদ্ভুত ভাবে সেই বিনিয়োগের তত্ত্বকেই প্রতিষ্ঠা করেছেন। আপন সন্তান সম্পর্কে পিতা-মাতার গভীর ভাবাবেগ প্রসূত আত্মাভিমান প্রসঙ্গে বিশ্বজিৎবাবুর নানান তির্যক ইঙ্গিত কোন সংবেদনশীল ‘আধুনিক পারিবারিকতা’র তত্ত্বের অনুসারী, তা জানতে ইচ্ছা করে।
দেবাশিস দাস। প্রধান শিক্ষক, দেউড়িবাড় কিরণপ্রভা বিদ্যামন্দির, ভগবানপুর, পূর্ব মেদিনীপুর |