কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই-এর রোষে এ বার পড়িয়াছেন এ বার জগন্মোহন রেড্ডি। তাঁহার বিরুদ্ধে দুর্নীতি, আর্থিক অনিয়ম, সরকারি উচ্চ পদ (এ ক্ষেত্রে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তাঁহার প্রয়াত পিতা রাজশেখর রেড্ডিকে) ব্যবহার করিয়া নিজের হিসাব-বহির্ভূত সম্পদ বৃদ্ধি, ইত্যাদি অভিযোগে এফআইআর আগেই দায়ের হইয়াছিল। এখন সেই এফআইআর-এর ভিত্তিতে তাঁহাকে গ্রেফতার করিয়া সিবিআই আপন হেফাজতে লইতে চাহিয়াছে। আদালত অবশ্য জগন্মোহনকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠাইয়াছে। এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়ায় অন্ধ্রপ্রদেশের রাজনীতিতে শোরগোল পড়িয়াছে। জগন্মোহন গ্রেফতার হইবার প্রতিবাদে রাজ্যে বন্ধ পালিত হইয়াছে। রাজ্যের ১৮টি বিধানসভা আসনের আসন্ন নির্বাচনেও এই ঘটনার প্রভাব পড়িতে বাধ্য। কংগ্রেস রীতিমত কোণঠাসা। কংগ্রেসের সুবিধা করিতেই সিবিআই এত দিন পর জগন্মোহনের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া অভিযোগের ঝাঁপি খুলিয়াছে, এই ধারণাও সমর্থন পাইতেছে।
পরিস্থিতির এই নাটকীয় মোড়ের জন্য কংগ্রেসই দায়ী। রাজ্যে-রাজ্যে এই দল দীর্ঘ কাল ধরিয়া দুর্নীতিগ্রস্তদের প্রশ্রয় দিয়াছে। প্রয়াত রাজশেখর রেড্ডি যখন কংগ্রেসকে লোকসভায় ৩৩টি আসন উপহার দিতেন, তখন কংগ্রেসের নীতিবাগীশ হাইকমান্ডের কখনও রাজশেখরের পরিবারতান্ত্রিক দুর্নীতি হইতে দলের ভাবমূর্তি রক্ষা করার কথা মনে পড়ে নাই। পিতার পদাধিকারের সুযোগেই জগন্মোহন বিভিন্ন সংস্থাকে তাঁহার প্রতিষ্ঠানে বিপুল অর্থ লগ্নি করিতে বাধ্য করেন। রাজশেখর রেড্ডি ও তাঁহার পরিবার যখন ‘আঙুল ফুলিয়া কলাগাছ’ হইয়াছেন, কংগ্রেস হাইকমান্ড তখন অন্য দিকে তাকাইয়া থাকিয়াছে। রাজশেখরের অকাল অপঘাত মৃত্যুর পর জগন্মোহন মুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদার হইয়া সহসা হাইকমান্ডের বিরাগভাজন হন। সেই হইতে তাঁহার আর্থিক অনিয়মের তদন্তে সিবিআইকে নিয়োগ। ২৭০ দিন আগে দায়ের হওয়া এফআইআর-এর ভিত্তিতে কেন নির্বাচনের পক্ষ কাল আগে জগন্মোহনকে গ্রেফতার করা হইল, সে প্রশ্নও উঠিয়াছে। সিবিআই এ ক্ষেত্রে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করিতেছে এবং কেন্দ্রীয় শাসক দল কংগ্রেসের হইয়া রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করিতেছে, এমন অভিযোগও উঠিতেছে। এবং অভিযোগটি নূতন নয়। মায়াবতী, লালুপ্রসাদ যাদব, মুলায়ম সিংহ কিংবা জয়ললিতার মতো ওজনদার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উচ্চাকাঙ্ক্ষা কিংবা বিদ্রোহাত্মক মনোভাব ছাঁটিয়া ফেলিতে দুর্নীতির বিভিন্ন মামলায় সিবিআইকে সক্রিয় করিয়া তুলিবার ঘটনা দেশবাসী প্রায়শ প্রত্যক্ষ করিয়া থাকেন। জগন্মোহন রেড্ডির বেলাতেও তাহাই ঘটিতেছে না, কে বলিতে পারে?
আসলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রামী সৈনিক হিসাবে কংগ্রেসের কোনও বিশ্বাসযোগ্যতাই গড়িয়া ওঠে নাই। তাই রাজনীতিকদের দুর্নীতি বা আর্থিক অনিয়মের বিরুদ্ধে আইনি কিংবা গোয়েন্দা ব্যবস্থার পিছনে প্রায়শই রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে শায়েস্তা করার ছক উন্মোচিত হয়। অন্ধ্রপ্রদেশে একে তো পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবিতে আন্দোলন সর্বদলীয় মান্যতা পাইয়াছে। উপরন্তু জগন্মোহনের জনপ্রিয়তা ও জনসংযোগ তাঁহাকে রাজ্যের ‘প্রতিহিংসাপরায়ণ’ কংগ্রেস সরকারের ‘শিকার’ রূপে তুলিয়া ধরিতেছে। সিবিআই আদালতের গ্রেফতারির আদেশের পর কার্যত তিনি ‘শহিদ’-এর মর্যাদা পাইতেছেন। আসন্ন ১৮টি আসনের উপনির্বাচনে কংগ্রেসের ভাল ফলের আশা কমই। এই ভাবে একদা কংগ্রেসের মজবুত ঘাঁটি, পরে তেলুগু দেশমের খণ্ডজাতীয় আবেগে প্লাবিত, আরও পরে রাজশেখর রেড্ডি কর্তৃক কংগ্রেসের জন্য পুনরুদ্ধৃত অন্ধ্রপ্রদেশ সম্ভবত আবার কংগ্রেসকে বিমুখ করিতে প্রস্তুত হইতেছে। আর সে জন্য পুরোপুরি দায়ী থাকিবে কংগ্রেসই। |