সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষায় সংখ্যালঘু সংরক্ষণ প্রশ্নে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে যাচ্ছে কেন্দ্র। গত কালই হাইকোর্ট সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষায় সাড়ে চার শতাংশ হারে সংখ্যালঘু সংরক্ষণের জন্য কেন্দ্রের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় আইন ও সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী সলমন খুরশিদ আজ জানান, মণ্ডল কমিশনের সুপারিশের ভিত্তিতেই অনগ্রসর সংখ্যালঘুদের সংরক্ষণের পথে পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। এটা সরকারের সুচিন্তিত সিদ্ধান্ত। সুতরাং পিছু হটার প্রশ্ন নেই।
হাইকোর্টের রায়কে স্বাগত জানিয়ে গত কাল সংখ্যালঘু সংরক্ষণ প্রশ্নে কেন্দ্রের ভূমিকার সমালোচনা করেছিল বিজেপি। সলমনের মন্তব্যের পর আজ ফের কড়া ভাষায় কেন্দ্রের নিন্দা করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দলের বর্ষীয়ান নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী বলেন, “প্রশাসনিক ভাবে সরকার যা ভুল করছে, দেখা যাচ্ছে, আদালত তা শুধরে দিচ্ছে। সংখ্যালঘু সংরক্ষণের জন্য সরকার যে ভাবে একরোখা মনোভাব নিয়ে চলছে, তা দুর্ভাগ্যজনক। এ বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালত সঠিক সিদ্ধান্ত নেবে বলেই বিজেপি আশাবাদী।” বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারও আজ এ বিষয়ে কেন্দ্রের কড়া সমালোচনা করে বলেন, “কংগ্রেস সংখ্যালঘু সংরক্ষণ নিয়ে আন্তরিক নয়। স্রেফ রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণে সংখ্যালঘু আবেগ নিয়ে খেলছে।”
সংখ্যালঘু প্রশ্নে আইনি ও রাজনৈতিক মারপ্যাঁচের মাঝে একটা সঙ্কট ইতিমধ্যেই তৈরি হয়েছে। তা হল, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে উচ্চশিক্ষার বিভিন্ন কোর্সে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে। সে ক্ষেত্রে সাড়ে চার শতাংশ হারে সংখ্যালঘু সংরক্ষণের নিয়ম প্রয়োগও শুরু হয়ে গিয়েছে। সংরক্ষণের আওতায় যে সব ছাত্রছাত্রী ভর্তি হবেন, অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের তালিকাও তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু হাইকোর্টের নির্দেশের পর সেই সব ছাত্রছাত্রীর ভর্তির বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে খুরশিদ আজ বলেন, “সময় নষ্ট না করে সরকার শীঘ্রই নিদান চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের কাছে যাবে। কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকও সর্বোচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হবে। পাশাপাশি ছাত্ররাও চাইলে আদালতে যেতে পারেন।”
সরকারি চাকরি ও উচ্চশিক্ষায় অন্যান্য অনগ্রসর শ্রেণির (ওবিসি) জন্য ইতিমধ্যে বরাদ্দ ২৭ শতাংশ সংরক্ষণের আওতাতেই অনগ্রসর সংখ্যালঘুদের জন্য সাড়ে চার শতাংশ সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কেন্দ্র। কিন্তু হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ গত কাল জানায়, সংবিধানে ধর্মীয় ভিত্তিতে সংরক্ষণে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
কেন্দ্রের পাল্টা বক্তব্য, আদালতের ব্যাখ্যা আর সরকারের ব্যাখ্যা এক নয়। কেন্দ্র ধর্মের ভিত্তিতে সংরক্ষণ চালু করেনি। তা করেছে সমাজের অনগ্রসরতার ভিত্তিতে। এ ব্যাপারে মণ্ডল কমিশনই সুপারিশ করেছিল। সলমনের এ-ও বক্তব্য, সংখ্যালঘু কেবল ধর্মের ভিত্তিতে হয় না, তা ভাষাগতও হয়।
অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্টের রায় কেন্দ্রে কংগ্রেসকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। বিশেষ করে রায় ঘোষণার সময় আদালত এ-ও জানায় যে, এত বড় ব্যাপার নিয়ে কেন্দ্র যে রকম হাল্কা চালে প্রস্তাব পেশ করেছে, তা খুবই দুঃখজনক। আজ কিছু চড়াটা সুরে কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী জানান, ‘হাল্কা চালে’ বলতে অন্ধ্রপ্রদেশ হাইকোর্ট কী বোঝাতে চাইছে, তা পরিষ্কার নয়। আদালতের রায় সুনির্দিষ্ট হওয়া উচিত।
তবে কংগ্রেস নেতৃত্বের বক্তব্য, আদালতের সিদ্ধান্ত কংগ্রেসের জন্য কোনও অস্বস্তি তৈরি করেনি। বরং হাইকোর্টের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সরকার সুপ্রিম কোর্টে গেলে সংখ্যালঘু সমাজে এই বার্তা যাবে যে, তাঁদের সংরক্ষণের প্রশ্নে কংগ্রেস আন্তরিক। |