ইডেনের আবেগেই ক্লিন বোল্ড বলিউডের বাদশা।
ক্রিকেটের ‘নন্দন-কাননে’ ঢুকেই সম্ভবত টের পেয়েছিলেন কলকাতার রক্তের দোলা। পর মুহূর্তে ক্লাব হাউসের সামনের মঞ্চে শাহরুখ। বাংলা ব্যান্ডের গানে কিং খান পা মেলাতেই অনুষ্ঠানের নির্দিষ্ট ছকের চিত্রনাট্য ভেঙে খান খান। একটু বাদে কীর্তনের সুরে নাচতে টিম কেকেআর-ও মঞ্চে জায়গা করে নেবে। সঙ্গে টলিউডের দেব-জিৎ-ঋতুপর্ণারা। অনতিদূরে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তখন অতিথিবৎসল গৃহকর্ত্রীর ভূমিকায়। ইডেনের সবুজ গালচেয় দাঁড়িয়ে ‘দিদি’ মমতা প্রশ্রয়ের হাসি মেখে ‘ভাই’ শাহরুখের কাণ্ডকারখানা দেখছেন।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বাংলার ‘ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর’ তথা কেকেআর-মালিক শাহরুখ খান। মহাকরণের সামনে, ইডেনে মঙ্গলবার দুপুরে এই ‘দিদি-ভাই’-এর আবেগের নানা মুহূর্তের সাক্ষী থাকল কলকাতা। মুখ্যমন্ত্রীর শাড়ির পাড়েও এ দিন কেকেআর-এর জার্সির বেগুনির ছোঁয়া। মহাকরণ-চত্বরে টিম কেকেআর-এর সবাইকে কাঁথাকাজের উত্তরীয় পরিয়ে আবেগে ভাসলেন মমতা। বললেন, “বাংলা গর্বিত। এঁরা বিশ্বজয় করে এসেছেন। অভিনন্দন।” |
আর গর্জে ওঠা ইডেন দেখল, ‘দিদি’র এগিয়ে দেওয়া মাইক হাতে শাহরুখ বলছেন, “করেছি, লড়েছি, জিতেছি।” কলকাতা তথা বাংলার টিম কেকেআর-কে আগামী বছরের শুভেচ্ছাও জানিয়ে রাখেন মুখ্যমন্ত্রী। শুনে ভরা গ্যালারিকে সাক্ষী রেখে নাছোড় ভাই শাহরুখের আবদার, ‘‘পরের বার জিতলে আমাদের সঙ্গে নাচতে হবে দিদি।’’ তারকাদের মাঝে আগাগোড়া দারুণ সপ্রতিভ মুখ্যমন্ত্রীর মুখেও তখন দুর্লভ লাজুক আভা। শাহরুখের গুগলি সামলে মমতার জবাব: “না, না নাচ নয়, আমি বরং গাইব।”
বেলা একটায় মমতার সঙ্গে মাঠে ঢোকেন শাহরুখরা। আইপিএল-এর বাইশ গজের দাপাদাপির শেষে কেকেআর-অভিভাবক শাহরুখ ও তাঁর টিমের জন্য মঙ্গলবার ইডেনের সবুজ উজাড় করে দিয়েছিল কলকাতা। পরিকল্পনা মাফিক বীর-বরণ, ক্যাপ্টেন গম্ভীরের হাতে ‘সন্দেক’ কাটা এ সব ঘটবে, জানা কথাই! কিন্তু কে জানত, ‘ভিকট্রি ল্যাপ’ সেরে মুম্বইয়ের শাহরুখ বাংলার ‘দিদি’র কাছে অস্ফুটে সলিল চৌধুরীর ‘ধিতাং ধিতাং বোলে’-র জন্য বায়না ধরবেন। কিংবা মাঠে ছুটতে ছুটতে হঠাৎ তরতরিয়ে সাইটস্ক্রিনের খাঁচা বেয়ে উঠে জনতাকে হাত নাড়তে ব্যস্ত হবেন।
গনগনে সূর্য মাথায় ঘণ্টা তিনেক অপেক্ষায় থাকার পরে ইডেনের গ্যালারি প্রাণপণে এ সব মুহূর্ত শুষে নিচ্ছিল। একমাত্র পুণের সঙ্গে খেলা বাদ দিলে এ বার কখনওই এ ভাবে ভরে ওঠেনি ইডেন। গম্ভীর-লক্ষ্মী-মনোজ-সাকিবদের তো বটেই, চেন্নাই-বধের নায়ক বিসলাকেও আজ খুঁজছিল জনতা। তবে ফাইনালের ‘ম্যান অফ দ্য ম্যাচ’-এর মুখটা এখনও অনেকের সড়গড় নয়। চোখে রোদ-চশমায় তাঁকে চিনতে অনেকেই মুশকিলে পড়েছেন।
বেলা ১০টা থেকে মাঠ ভরিয়ে তোলা জনতার জন্য ‘চক দে ইন্ডিয়া’ স্লোগানকে সামান্য পাল্টে দফায় দফায় ‘চক দে কলকাতা’ ধুয়ো তুলছিলেন শিল্পীরা। মাঠে ঢুকেই এক ব্যান্ড-সদস্যের টুপিটা খুলে নেন শাহরুখ। ইডেন চক্কর দেন ওই টুপি মাথায়। ভিকট্রি ল্যাপে সারা ক্ষণ ভারী ট্রফিটা ঘাড়ে করে ঘোরার পরে মঞ্চে উঠে তা মমতার হাতেই তুলে দেন শাহরুখের বন্ধু বিবেক খুসলানি। কেকেআর-এর সবাইকে মুখ্যমন্ত্রী যে সোনার হার পরালেন তাতে লেখা, ‘বেঙ্গল লাভস ইউ।’ পরে ড্রেসিংরুমে সিএবি সভাপতি জগমোহন ডালমিয়া এবং শাহরুখের সঙ্গে কিছু ক্ষণ একান্তে কথাও বলেন মমতা।
চারপাশের আবেগে সওয়ার হয়ে রাজ্যপাল এম কে নারায়ণনও তাই এ দিন বলেছেন, “এটাই প্রকৃত পরিবর্তন। এক বছর আগে যে পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি মমতা দিয়েছিলেন।” |