দিনের পর দিন নেশাগ্রস্ত অবস্থায় চতুর্থ শ্রেণির ছাত্রীদের শৌচাগারে আটকে নগ্ন করার অভিযোগে এক প্রাথমিক স্কুল শিক্ষককে জুতো-ঝাঁটা দিয়ে অভিভাবকেরা পেটানোর পরে ২৪ ঘণ্টা কেটে গিয়েছে। কিন্তু, স্কুল শিক্ষ দফতর, প্রাথমিক স্কুল শিক্ষা সংসদের তরফে এখনও ঘটনার তদন্তই শুরু হয়নি। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে শ্লীলতাহানির মামলা রুজু করলেও অভিযুক্ত শিক্ষককে থানা থেকেই জামিনে ছেড়ে দিয়েছে। এমন গুরুতর অভিযোগ সত্ত্বেও ওই শিক্ষককে ‘ছাড়’ দেওয়ার চেষ্টা কেন হচ্ছে তা নিয়েই ছাত্রছাত্রী-অভিভাবক মহলে শুরু হয়েছে জল্পনা। অভিভাবকেরা স্পষ্ট ভাবে প্রধান শিক্ষক হরিচরণ সরকারকে জানিয়ে দিয়েছেন, ওই শিক্ষককে বদলি করা না হলে ছাত্রীদের স্কুলে পাঠানো হবে না। ঘটনাচক্রে অভিযুক্ত শিক্ষক অতলান্ত ভৌমিক হলেন সিপিএম প্রভাবিত শিক্ষক সংগঠনের জেলা নেতা হিসেবে নিজেকে দাবি করেছেন। তাঁর দাদা অনিরুদ্ধবাবু সিপিএমের রায়গঞ্জ জোনাল কমিটির সম্পাদক। তাই পুলিশ-প্রশাসন ও শিক্ষা বিভাগ ঘটনাটি লঘু করে দেখতে চাইছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। পুলিশ অবশ্য দাবি করেছে, অবিযোগ পেয়ে মামলা রুজু করা হয়। তার পরেই অভিযোগকারীরা মামলা প্রত্যাহার করার জন্য আবেদন করে। দার্জিলিং রেঞ্জের ডিআইজি আনন্দ কুমার বলেন, “পুলিশ অভিযোগ পেয়েই মামলা করেছে। জামিনযোগ্য হওয়ায় থানা থেকে মুক্তি পেয়েছেন অবিযুক্ত। পরে অভিযোগকারীরা অভিযোগ তুলে নিতে চাইলে পুলিশ তাঁদের আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।” অতলান্তবাবুর দাবি, “আমি এবিপিটিএর জেলা কমিটির সদস্য। আমার ভাই সিপিএম নেতা সেইকারণেই হয়তো আমি রাজনৈতিক চক্রান্তের শিকার হয়েছি। ১৬ বছর ধরে শিক্ষকতার কাজ করছি। কেনও পড়ুয়াদের ভুল বুঝিয়ে অভিভাবকদের একাংশ আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন তা বুঝতে পারছি না। আমি কোনও ছাত্রীর সঙ্গে অভব্য আচরণ করিনি। তারা আমার সন্তানের মতো। আগে আমি একটু আধটু নেশা করতাম ঠিকই, তবে নেশা করে কোনদিন স্কুলে যাইনি। চার মাস ধরে আমি অসুস্থ থাকায় চিকিৎসাধীন রয়েছি। সে জন্য নেশা করাও বন্ধ করে দিয়েছি। আমাকে বদলি করা হলে আপত্তি নেই।” অনিরুদ্ধবাবু বলেছেন, “দাদার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তোলা হয়েছে। তিনি রাজনৈতিক চক্রান্তেরও শিকার হয়ে থাকতে পারেন।” এবিপিটিএর উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদক সমর সরকার জানান, অতলান্তবাবু আমাদের সংগঠনের সদস্য হলেও ওই ধরনের অবিযোগ প্রমাণ হলে কড়া শাস্তি হওয়া দরকার। অভিভাবকদের একাংশের অভিযোগ, বেশ কিছুদিন ধরে ওই শিক্ষক ছাত্রীদের নগ্ন করে নিগ্রহ করছিলেন। গত শনিবার কয়েকজন ছাত্রী বাড়িত বিষয়টি জানালে সোমবার অভিভাবকেরা স্কুলে চড়াও হয়ে ওই শিক্ষককে জুতো, ঝাঁটা দিয়ে পেটান। পুলিশ তাঁকে থানায় নিয়ে যায়। পরে গ্রেফতার করলেও রাতেই জামিনে ছেড়ে দেয়। মঙ্গলবার শিক্ষক স্কুলে যাননি। প্রধান শিক্ষক হরিচরণ সরকার বলেন, “সমস্ত বিষয় জেলা শিক্ষা দফতরের কর্তাদের জানিয়েছি। তাঁরাই ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।” কংগ্রেসের শিক্ষক সংগঠণ পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির জেলা সম্পাদক নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, “গরমের ছুটির পর ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রশাসনের দ্বারস্থ হব।” স্থানীয় কংগ্রেস কাউন্সিলর তথা ওয়ার্ড এডুকেশন কমিটির সভাপতি হারাধন দাস বলেন, “ওই শিক্ষক স্কুলে কর্মরত থাকলে অভিভাবকেরা তাদের ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠতে চাইছেন না। তিনি পড়ুয়াদের দিয়ে নেশার ওষুধ কিনে আনায় বলেও অভিযোগ রয়েছে। সন্তানতুল্য পড়ুয়াদের সঙ্গে যে শিক্ষক নোংরা আচরণ করতে পারেন তার স্কুলে পড়ানোর অধিকার নেই।” জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদের চেয়ারম্যান শেখর রায় জানান, শিক্ষকের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ জমা পড়েনি। |