গরমে গোটা উত্তরবঙ্গের পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। দুই দিনাজপুরে ৪০ ও মালদহ জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। কোচবিহার, শিলিগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকলেও অবস্থাও কার্যত একই। সাত সকাল থেকে চড়া রোদ, গরমে বাসিন্দারা হাঁসফাঁস করছেন। এই অবস্থায় দক্ষিণবঙ্গের মতই উত্তরবঙ্গের স্কুলগুলিতে গরমে ছুটি এগিয়ে আনার দাবি তুলেছেন অভিভাবকেরা। দক্ষিণ দিনাজপুরে অবশ্য প্রাথমিক স্কুলগুলিতে গরমের ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। এরই মধ্যে রোদে টানা ডিউটি করার পর বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে মালদহে এক হোমগার্ডের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার গভীর রাতে ঘটনাটি ঘটেছে। |
ধূপগুড়িতে বিকোচ্ছে রঙিন হাতপাখা। ছবি: রাজকুমার মোদক |
পুলিশ জানায়, মৃতের নাম ক্ষিতিশ মণ্ডল (৫২)। তিনি মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা গিয়েছেন।
হাসপাতালের চিকিৎসকের জানিয়েছেন, সম্ভবত ‘সানস্ট্রোকে’ ক্ষিতিশবাবু অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। তবে ময়নাতদন্তের পর বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে। মালদহ জেলা পুলিশ সুপার জয়ন্ত পাল বলেন, “ডিউটি সেরে বাড়ি ফিরে অসুস্থ হয়ে ওই হোমগার্ডের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে তিনি প্রচন্ড রোদে ডিউটি করেন। যা গরম তাতে যে কেউ অসুস্থ হতে পারেন।” মৃত হোমগার্ডের স্ত্রী লেখাদেবী জানান, উনি সকাল ৯টা থেকে প্রথমে মালদহ থানায় ডিউটি করেন। এরপর দুপুর থেকে শহরের সুকান্ত মোড়ে ৩৪ নন্বর জাতীয় সড়কের উপর ডিউটি করে রাত ৯ নাগাদ বাড়ি ফেরেন।! বাড়িতে ফিরে খাওয়া দাওয়ার পরেই বমি করেন। অসুস্থ হয়ে পড়েন। টানা রোদে ডিউটি করেই তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। |
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, মঙ্গলবার মালদহের তাপমাত্রা ছিল ৪২.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রচন্ড গরমের পাশাপাশি দুপুরে গরম বাতাস বইতে শুরু করায় দুপুরের পর শহরের রাস্তাঘাট বাজার ফাঁকা হয়ে যায়। একই অবস্থা ছিল দক্ষিণ দিনাজপুরেও। আজ, বুধবার থেকে জেলার সমস্ত প্রাথমিক স্কুলে গরমের ছুটি ঘোষণা করেছে জেলা প্রাথমিক স্কুল সংসদ। সংসদের চেয়ারম্যান বাচ্চু হাঁসদা বলেন, “গরম বেড়েই চলেছে। শিশুরা প্রচন্ড কষ্ট পাচ্ছে। চলতি ১ মে থেকে জেলার সমস্ত প্রাথমিক স্কুল সকালে করে দেওয়া হয়। এবার ২ জুন অবধি গরমের ছুটি দেওয়া হল।” সংসদ সূত্রের খবর, সকালে স্কুল করেও স্বস্তি মেলেনি। প্রচন্ড গরমে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। গ্রামাঞ্চলের নলকূপ থেকে জল না ওঠায় বিভিন্ন এলাকায় জলের অভাবে মিড ডে মিলের রান্না বন্ধ হয়ে যায়। এতে এদিন গরমের ছুটি ঘোষণা করে দেন সংসদ কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি জেলার মাধ্যমিক স্কুলগুলিতেও গরমের ছুটি এগিয়ে আগামী ১৬-১৭ মে থেকে শুরু করার কথা ঘোষণা করেছেন জেলা মাধ্যমিক স্কুল পরিদর্শক সুবোধ চট্টোপাধ্যায়। তিনি জানান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলগুলিকে এদিন নোটিশ পাঠিয়ে তাঁদের সুবিধা মত ওই তারিখ থেকে গরমের ছুটি দিতে বলা হয়েছে। |
|
|
শিলিগুড়িতে শিশু ঢাকা
তোয়ালেতে।
ছবি: বিশ্বরূপ বসাক। |
বালুরঘাটে রোদ বাঁচাতে
মুখোশই ভরসা। ছবি: অমিত মোহান্ত |
|
এদিন বালুরঘাটে তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছাড়িয়েছে। প্রচন্ড গরমে তপন ও গঙ্গারামপুর ব্লকে পানীয় জলের সমস্যা দেখা দিয়েছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে রাস্তাঘাট সুনসান হয়ে যাচ্ছে। বাজার ঘাটেও বাসিন্দাদের ভিড় হাতেগোনা। উত্তরবঙ্গের অন্য জেলাগুলিতেই প্রাথমিক এবং হাইস্কুলগুলিতে গরমের ছুটি এগিয়ে আনার দাবি তুলেছেন অভিভাবকেরা। তাঁরা জানাচ্ছেন, ১৮ জুন থেকে গরমের ছুটি নির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু পরিস্থিত যা দাঁড়িয়েছে তাতে মে মাসে ছুটি এগিয়ে দরকার। সরকারের বিষয়টি দেখা দরকার। |